ওয়ালিদ জামানের পাঁচটি কবিতা
ভালোবাসার একটি গল্প
যে বেলায় বাগান বিলাস বিষাদ হয়ে ফোটে
ভালোবাসার একটি গল্প আর্তনাদে হাঁটে
সে বেলায় তোর হয় ভোর, সুখের চাদর গায়ে
নীরব প্রাসাদ থমকে ওঠে, নূপুর বাজা পায়ে!
যে দুপুরে দহনজুড়ে গোলাপগুলো পোড়ে
ভালোবাসার একটি গল্প যায় পালিয়ে দূরে
সে সময় তোর চোখ বড়জোর, খানিক ভেজে
হারিয়ে যাওয়া আকাশটাকে আবার খোঁজে!
যে বিকেলের হাওয়ায় ভাসে বকুল ঝরার কথা
ভালোবাসার একটি গল্প বিষাদ কোনো ব্যথা
সে সময় তোর মনে ওঠে ঝড়, ব্যাকুলতা বাড়ে
মনে পড়ে অগোছালো বাউন্ডুলে সেই ছেলেটিরে
যে রাতে তুমুল ঝড়ে ভেঙে পড়ে হাস্নাহেনার ডাল
ভালোবাসার একটা গল্প দুমড়ে যায় বেসামাল
সে সময় তোর আলোকিত ঘর অন্ধকারে হারায়
বিষাদ ব্যথার মেঘমালা কি তোর পাশেতে দাঁড়ায়!
****
কেমন লাগে
এই যে এত কথা বলি
রোজ করে এক কাব্য তুলি
আপনি শোনেন কেমন লাগে?
এই যে কথায় দিন কেটে যায়
মন গহীনে শূন্য কোঠায়
আপনি জানেন কেমন লাগে?
এই যে ভালো, মন্দ লাগে
কাব্যগুলোর ছন্দ জাগে
আপনি পড়েন কেমন লাগে?
এই যে আমার বিশাল আকাশ
না ফুরানো এক অবকাশ
আপনি দেখেন কেমন লাগে?
****
দূরের তুমি
এই যে মাসের তিরিশ দিনে
দিন কাটে না বেজায় গুনে
তোমার জন্য লেখা চিঠি
বুকপকেটে যত্নে রাখি!
এই যে তুমি অফলাইনে
ব্যস্ত কাটাও অন্যখানে
সবুজ বাতির জন্য আমি
খুব এসিতেও তুমুল ঘামি!
এই যে তোমার খামখেয়ালি
অপেক্ষাতে আসছি বলি
পার্কে বসা গোলাপ হাতে
খানিক সময় তোমায় পেতে!
এই যে তোমার ভালোবাসা
কাছে থেকেও হয়নি আসা
খুঁজতে গিয়ে দূরের তোমায়
অতীত হলো অনেক সময়!
****
দীর্ঘশ্বাস
যখন আঁধার রাত্রি নামে
চোখ পড়ে যায় চিঠির খামে
তুই না থাকার ভীষণ ব্যথা
দুঃখ পেরোনোর গল্প-কথা!
খুব দূরে নয় বিশাল আকাশ
তারচেয়ে দূরে তোর বসবাস
তুই হারালি কেমন করে
হাজার খুঁজেও পাইনি তোরে!
তোর কি এমন মন পড়ে রয়
চোখের জলে রাত পার হয়
কোলাহলেও শূন্য লাগে
একটু দেখার ইচ্ছে জাগে?
দহন ঝরা এক দুপুরে
হঠাৎ যখন বৃষ্টি পড়ে
কে থাকে তোর বুকের পাশে
ফুপিয়ে কাঁদা দীর্ঘশ্বাসে!
****
বিষণ্নতার দেনা
বৃষ্টি ঝরুক তবে আজ মন খারাপের দিনে
বড্ড সুখের দাম থাকাতে দুঃখ নিলাম কিনে
মেঘের সাথেই সন্ধি করে বন্দি এমন দিন
জল জোছনার সাথেই বারুক আরও কিছু ঋণ!
কাজল ঝরুক চোখের, আকাশ আসুক নেমে
খুব হারাবার শোকের ধারা রইবে না আর থেমে
জলের সাথেই না হয় নিলাম ভুলের কারাবাস
দুঃখগুলোর সাথেই আমার হোক না বসবাস!
কোলাহলেই শহর বলুক গল্প করার ছলে
চার দেওয়ালে চোখ ভিজে যায় বাধ না মানা জলে
না হয় হলো আজকে শুধুই দুঃখের বেচাকেনা
বাড়লো না হয় খুব গোপনে বিষণ্নতার দেনা!
নীরবতায় সাক্ষী দেওয়াল, সাক্ষী ভেজা পাতা
অশ্রু ভেজার দিন খুলেছি কষ্ট লেখার খাতা
খুব যতনে দুঃখ গুনে তুলছি মনে রোজ
হয়তো তুমি এই ভুবনে হঠাৎ নেবে খোঁজ!
এসইউ/জিকেএস