কবিতা দিবসে কী ভাবছেন কবি-লেখকরা
আজ বিশ্ব কবিতা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে নানা রকম অভিমত প্রকাশ করেছেন কবি-লেখকরা। কার দৃষ্টিতে কবিতা কেমন? কবিতা আসলে কী? এমন অনেক বিষয়ই উঠে এসেছে এসব আলোচনায়। তার থেকে বাছাই করা কিছু অভিমত তুলে ধরছি জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য—
কবি ও গীতিকার মহসিন আহমেদ বলেছেন, ‘মানুষ মাত্রই ভাবুক। ভাবুক মাত্রই কবি নয়। কবিতা লেখার জন্য অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। নিজের কথাগুলোকে কবিতায় রূপ দিতে, মানে শিল্পসুষমায় সমৃদ্ধ করতে লাগে ভাব, ভাবনা, কাব্য, শব্দ, ছন্দ ও অলঙ্কার। অতঃপর, বাস্তবতা ও কল্পনার সংমিশ্রণে চিত্রকল্পময় এক জগৎ নির্মাণ করতে হয়। নানারকম অলঙ্কার দিয়ে, যেমন- উপমা, উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি, অন্যাসক্ত, রূপক, প্রতীক, চিত্রকল্প, অনুপ্রাসসহ আরও নানা অলঙ্কার প্রয়োজন। এসব জেনে নিজের কল্পনাশক্তিকে যে যত বেশি প্রসারিত করতে পারে, সে তত বড় কবি। একজন কবির জন্য কবিতার ব্যাকরণ জানা ফরজ, আর না জানা কবিরা গুনাহ।’
তিনি বলেন, ‘অবশ্য, আজকাল অনেকেই নিজের ব্যর্থতাকে ঢাকতে ছন্দকে অস্বীকার করছেন। তারা জানেন না ছন্দ জানা থাকলে নিজের অজান্তেই অনেক চমৎকার অন্ত্যমিল ও অনুপ্রাসসহ আরও নানা অলঙ্কার সৃষ্টি হয়। নিজের মনের কথাগুলো লিখে কবিতা বলে চালিয়ে দিচ্ছেন অধিকাংশজন। আমার কাছে এসব পণ্ডশ্রম মাত্র। অবশ্য, মাঝেমাঝে এমন কিছু গদ্য চোখে পড়ে যা অবাক করে। তারা ছন্দ জানলে পথটা আরও সহজ হতো।’
কথাশিল্পী জিয়াউল হক সরকার বলেছেন, ‘বিশ্ব কবিতা দিবসের শুভেচ্ছা। সত্য আর মিথ্যার বিভেদই কবিতা/ সুন্দর আর অসীমের প্রান্তরই কবিতা/ জীবনের পায়ে পায়ে হেঁটে চলাই কবিতা/ মানুষের প্রতিচ্ছবির নামই কবিতা...’
‘কবিতার অদ্ভুত আনন্দ’ শিরোনামে একটি লেখায় কবি ও প্রাবন্ধিক ফারুক সুমন বলেছেন, ‘কবিতা কী ও কেন? এমন জিজ্ঞাসা ঈশ্বরের অস্তিত্বের মতোই চিরন্তন জিজ্ঞাসা। কালের স্রোতধারায় কবি ও কবিতাপ্রেমি পাঠকের অন্তর নিরন্তর আন্দোলিত হয়েছে, প্রশ্নমুখর হয়েছে কবিতা নামক রহস্যময় কুয়াশা ঘিরে। শিল্পের শাখায় কবিতা এমন এক প্রবাহের নাম, যা নিয়ে লিখতে গেলে গন্তব্যে পৌঁছানো কঠিন। তবুও লিখতে ইচ্ছে করে। কবিতা নিয়ে যতো লিখি; ততোই আনন্দ পাই। অদ্ভুত আনন্দ। ভাষাহীন বোবা অনুভূতি কবিতা হয়ে ভর করে। সোনাদানা কিংবা উচ্চমার্গীয় কোনো প্রত্যাশা নেই। তবুও একজন কবি শব্দের আরাধনায় কাটিয়ে দেন মূল্যবান একটি জীবন। শব্দ-শস্যের সম্ভাবনায় কবির অপেক্ষার সীমা নেই। এখানে যেন কবি গেয়ে ওঠেন ‘আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ’।’
কবি হাসান রোবায়েত ‘ব্রিজ পেরোলেই অন্য ঋতুর দেশ’ কাব্যগ্রন্থে বলেছেন, ‘আমি তাকে বললাম, কে যেন বলেছিলেন, ‘রুটিই সর্বশ্রেষ্ঠ কবিতা যা মানুষকে ক্ষুধা থেকে মুক্তি দেয়—’ যে কথা মানুষের মর্মে গিয়ে বিঁধে থাকে যেমন উড়ন্ত হরিণের শরীরে বর্শা বেঁধে, তেমন, তাই হয়তো কবিতা বা তা-ও নয়।’
কবি ও প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ নূরুল হক বলেছেন, ‘কামার যেদিন স্বর্ণালংকার বানাতে পারবে, বরফে আঁচে যেদিন রান্না করা যাবে, গনগনে চুল্লির ভেতর যেদিন শীতল পরশ মিলবে, সেদিন, ছন্দজ্ঞানশূন্যও কবিতা লিখতে পারবে।’
প্রয়াত কবি রফিক আজাদ বলেছেন, ‘আমাদের যে জীবনযাপন পদ্ধতি আর তাদের যে জীবনযাপন পদ্ধতি, দুটো তো আলাদা। কবিতা পড়লেই বোঝা যায় সেটা। নাম মুছে দিলেই কবিতার পাঠকরা আলাদা করতে পারবে যে এটা বাংলাদেশের কবিতা আর ওটা পশ্চিম বাংলার কবিতা। ওটা উচ্চারণেই বোঝা যায়। ওদের উচ্চারণটাই তো ভিন্ন রকম। পুরুষ মানুষের লেখা পড়ে মনে হয় যেন কোনো মহিলা লিখছে। ‘হ্যাঁ গো’- ‘ম্যা গো’ লিখে ভরিয়ে রাখে। অপরদিকে, আমাদের পুরুষ মানুষের কবিতা পুরুষ মানুষের কবিতাই।’
এসইউ/জিকেএস