রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বই
বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি অত্যুজ্জ্বল নাম। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই, যেখানে রবীন্দ্রনাথ অনুপস্থিত। তাই পাঠক-লেখক-গবেষকের অন্তরেও রবীন্দ্রনাথ থিতু হয়েছেন অনেক আগেই। সে জন্যই তাকে নিয়ে গবেষণা-নিরীক্ষার অন্ত নেই। সেসব থেকেই কিছু গ্রন্থের পরিচিতি এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
রবীন্দ্রবিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকলন ‘রবীন্দ্রনাথ’। যেটি সম্পাদনা করেছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে ১৯৬৭ সালে। এরপর ২০০১ সালে প্রকাশ করে অবসর প্রকাশনা সংস্থা। আনিসুজ্জামান সম্পাদিত রবীন্দ্রচর্চার সংকলন ‘রবীন্দ্রনাথ’-এর পটভূমি অনুসন্ধান করতে গেলে দেখা যাবে, তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের রবীন্দ্র-বিরোধিতা এর উৎসগত প্রধানতম প্রেরণা। রবীন্দ্রচর্চার একটা সম্মিলিত স্বরের আকাঙ্ক্ষা ঢাকাকেন্দ্রিক বাঙালি-মুসলমান মধ্যবিত্ত-সমাজের মধ্যে দেখা গিয়েছিল। বলা যায়, আনিসুজ্জামান সম্পাদিত রবীন্দ্রচর্চার সংকলন ‘রবীন্দ্রনাথ’ তারই ফল।
আবু সয়ীদ আইয়ুবের লেখা ‘আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ’ বইটি রবীন্দ্র পুরস্কার ১৯৬৯ ও আকাদেমী পুরস্কার ১৯৭০ প্রাপ্ত। ২০১৫ সালে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করে ভারতের দে’জ পাবলিশিং। বইটিতে মানসী, সোনার তরী, চিত্রা, কল্পনা, ক্ষণিকা, নৈবেদ্য, গীতাঞ্জলি ও বলাকা কাব্যগ্রন্থ নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়া আধুনিক কবিতা, অমঙ্গলবোধ, সাহিত্যনীতি ও কবিতার ভাষা সম্পর্কে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা পাঠককে সমৃদ্ধ করবে।
আরও পড়ুন: আল মাহমুদের কবিতা: প্রেমের নতুন রূপ
লেখক ও গবেষক ড. সফিউদ্দিন আহমদের লেখা ‘বৃত্তাবদ্ধ রবীন্দ্রনাথ’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বই। বইটির প্রথম প্রকাশ জুলাই ১৯৭৬। পরে প্রকাশনা সংস্থা বিভাস প্রকাশ করে। বইটিতে ১১টি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। প্রবন্ধসমূহ হচ্ছে—রবীন্দ্র সাহিত্যে সৌন্দর্য জিজ্ঞাসা, রবীন্দ্র সাহিত্যের মূল্যায়ন, জীবনদেবতা ও রবীন্দ্রনাথ, গল্পগুচ্ছের শিক্ষক, রবীন্দ্র-উপন্যাসে মনন বিশ্লেষণ, অভিব্যক্তিবাদের আলোকে রবীন্দ্র নাটক, বৃত্তাবদ্ধ রবীন্দ্রনাথ, সার্বভৌম কবি, শেষের কাব্যে রবীন্দ্র প্রত্যয়, রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক দর্শন, রবীন্দ্র সাহিত্যে লোকজ ঐতিহ্য।
‘দুর্বলতায় রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য প্রবন্ধ’ বইটি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের লেখা। প্রকাশনা সংস্থা উত্তরণ থেকে ২০১৪ সালে এর দ্বিতীয় মুদ্রণ প্রকাশিত হয়। বর্তমানে বইটির কোনো কপি প্রকাশনীর কাছে নেই। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ প্রবন্ধ রচনার ক্ষেত্রে নিজের মতামতের পাশাপাশি বিষয় সম্পর্কিত বিভিন্ন জনের মতামতও তুলে আনেন। তিনি লিখেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথের যে প্রবণতা তার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছিল তা হল, ঋষিত্বের প্রতি তাঁর দুরপনেয় লোভ। গুরুদেবের মহিমান্বিত সিংহাসন আজীবন কঠোর সততার সঙ্গে আগলে গেলেন। সম্মানের স্বারোপিত নির্বাসন থেকে নিম্নবিত্ত ধুলার সঙ্গে বজায় রাখলেন শ্রদ্ধেয় দূরত্ব।’
রবীন্দ্রনাথকে গণমানুষের অবস্থান তথা শ্রেণি দৃষ্টিকোণ থেকে মার্কসবাদী বিশ্লেষণে পূর্ণাঙ্গ বই এর আগে কখনো আমাদের হাতে আসেনি। হায়দার আকবর খান রনোর ‘রবীন্দ্রনাথ: শ্রেণী দৃষ্টিকোণ থেকে’ সে অভাব পূরণ করল।
আরও পড়ুন: প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘শকুন্তলা’র শিল্পরূপ
এ বইতে তিনি রবীন্দ্রনাথকে উপস্থিত করেছেন ‘পাকিস্তানি মানসিকতায় রবীন্দ্রনাথ’, ‘অতি-বাম সংকীর্ণ জায়গা থেকে রবীন্দ্র বিরোধিতা’, ‘শিল্প সাহিত্য প্রসঙ্গে মার্কসবাদ’, ‘ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার নবজাগরণ’, ‘রবীন্দ্রকাব্যে ভাববাদ ও বাস্তবমুখিতা’, ‘রবীন্দ্রনাথ ও রাজনীতি’, ‘ধর্ম, জাতিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ’, ‘রবীন্দ্র সাহিত্যে নারী’, ‘ছোটগল্পে রবীন্দ্রনাথ’, ‘রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি উপন্যাস’, ‘রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি নাটক’, ‘রবীন্দ্র অর্থনৈতিক চিন্তা’, ‘রাশিয়ার চিঠি—তীর্থ দর্শনের অভিজ্ঞতা’ এবং ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে। সমগ্র সাহিত্যকে বিষয়বৈচিত্র্যে অখণ্ড দৃষ্টিভঙ্গিতে উপস্থাপন করেছেন তিনি।
এ ছাড়াও আবুল আহসান চৌধুরীর ‘রবীন্দ্রনাথের লালন’, আতিউর রহমানের ‘তব ভুবনে তব ভবনে’, আবদুশ শাকুরের ‘রবীন্দ্রজীবনের অনুজ্জ্বল অঞ্চল’, হায়াৎ মামুদের ‘মৃত্যুচিন্তা রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য জটিলতা’, আহমদ শরীফের ‘রবীন্দ্র ভাবনা’, সন্জীদা খাতুনের ‘রবীন্দ্রসংগীতের ভাবসম্পদ’, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথের মতোই’ বইগুলো পাঠকের রবীন্দ্র-তৃষ্ণা নিবারণ করতে সহায়ক হবে।
এসইউ/জেআইএম