ইস্তাম্বুলের ই-মেইল

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:২১ পিএম, ০২ মে ২০২৩

আমিনুল ইসলাম

আঙ্কারা থেকে সানলিউর্ফা বা হারানো দিনের উর্ফা; অতঃপর ইস্তাম্বুল।
উর্ফা শহরে আইয়ুব নবির প্রেম ও ধ্যানের গুহা; কালের সাক্ষী আইউব
মসজিদও। দেখে এসেছি দুই-ই। তোমার ঠোঁটের মতন পবিত্র নবির
ইন্দারা; তার পানিও জারে করে নিয়ে এসেছে কেউ কেউ। তবে ‘প্রেম
করেছে আইউব নবি, যার প্রেমে রহিমা বিবি গো’—আবদুল আলীমের
এই গানের সন্দেশ হৃদয়ে ধারণ করে এনেছেন কয়জন—সেটা তুরস্কের
ইমিগ্রেশন বিভাগও জানে না; আর আসমানি এনএসআই কেরামিন
কাতেবিনের গোয়েন্দা নোটবুক তো দর্শনাতীত। আমার প্রসঙ্গে এটুকু
বলতে পারি: বরেন্দ্রীর আঠালো মন নিয়ে তুমি প্রেমতলীর ঘাট হয়ে
বসে থাকতেই পারো; পশ্চিমা বাতাসে বারবার দোলা সত্ত্বেও সুজন
মাঝির মতো আমি তো ভিটামুখী হাল ধরে রয়েছি আজও। তাই নয় কি?

তুরস্কের লোকজন মাঝে মাঝে বৃক্ষচোখে চায়; বাংলা জানলে হয়তো
বলতো—ওই যায় ওরা ১১ জন! তো যে যার মতো দেখে নিচ্ছি।
আমরা পুরুষরা দেখছি—ডালিমদানার মতো ঠোঁট, পাকা আপেলের
মতো গাল। মাঝে মাঝে ফাও আরও কিছু; বলা চলে এখানে হাটখোলা
মানুষের হাট—ঝলমলে ও আন্তঃমহাদেশীয়। টিকিট ছাড়াই হাফিজ
মাঝে মাঝে উড়ে এসে জুড়ে বসেন ব্যাকুল হৃদয়ে। আহা তিল! হায়
বোখারা-সমরখন্দ! সেই তিলটা খুঁজছি: এলপিআর-মুখী যৌবন নিয়ে
আমি অবশ্য অতোখানি পারবো না—আর মূল কারণটাও তো তোমার
অজানা নয়। ফাহমিদা, যার কথা সেলফোনেও বলেছি—সে যে কী
দেখে—শেয়ার করে না। বসফরাসের খোলা হাওয়ায় খোলেনি সে
এতটুকু! তার মনজুড়ে করতোয়া আর আঁচলে সুন্দরবন। তবে
সেও যে বহুকিছু দেখে—সেই প্রাপ্তিসংবাদ সুবেহ সাদেকের আভা
হয়ে মাঝে মাঝে ফুটে ওঠে তার মুখে। আর আমাদের কনিষ্ঠতম
সদস্য সাখওয়াত—সে বেচারা তেমন কিছু রেখে আসেনি দেশে,
যেমনটা রেখে এসেছি আমি অথবা আশরাফ; নীল মসজিদে দোয়া
করেও আজ অবধি তার কপালে জোটেনি কো কোনো কিছুই;
লাইনটা ঠিক রেখে তার জন্য একটু দোয়া তো করতেই পারো।

ধুপছায়া বিকেলে আজ শহরের চামলিজা হিল ঘুরে এলাম; নাজিম
হিকমতের ছোঁয়া এমবোস সিলের মতন গেঁথে আছে চামলিজার
আকাশে বাতাসে মাটিতে। চামলিজা তরুণ কবি আর প্রেমিক
জুটিদের অক্সিজেন চত্বর। দারুচিনি দ্বীপের পরি হয়ে এইখানে
উড়ে বেড়ায় কবিতার অশরীরী ডানা; থেকে থেকে মর্মরসাগরের
হাওয়া এসে ফ্লাইটের উষ্ণ ন্যাপকিনের মতো মুছিয়ে দেয় মনপ্রাণ।
তুমিও সঙ্গে ছিলে না—আর ইস্তাম্বুলের মেয়েরাও ভীষণ স্মার্ট;
আমাদের কার্দেস মানা সত্ত্বেও তাদের কারো সাথেই এডহক
ভিত্তিতে বন্ধুত্ব করার সুযোগ গড়ে ওঠেনি। পৌষমাস পেয়ে
গিয়ে হাসছো তুমি? আর আমার কিন্তু ঠিক উল্টো অবস্থা!

কসমোপলিটান সিটি কাকে বলে—সেকথা বুঝেছি ইস্তাম্বুলে এসে;
ইস্তাম্বুলের রাস্তায় হা করে দাঁড়িয়ে থাকলেও মর্মর সাগরের হাওয়া
এসে ডলার কিংবা নিদেনপক্ষে তুর্কি লিরা দাবি করে বসে; অবশ্য
তাতে কোনো পুলিশী গন্ধ নেই; খোলা হাওয়ায় ডলারের মায়া কষ্টের
আরেকটি উৎস। স্পাইসবাজারে যাইনিকো; তবে গ্র্যান্ডবাজারে নাসিমা-
ফাহমিদার সঙ্গে রাত অবধি ছিলাম—আমি এবং আশরাফ; সঙ্গদোষের
সব পেয়ালায় চুমু দিয়ে দেখেছি; কিন্তু আসার সময় যেটা চুরি করে
দিয়েছিলে, সামুদ্রিক ক্ষুধার কবলে পড়েও খরচ করিনিকো তার এতটুকু;
রিটার্ন টিকিটের গায়ে কনফার্মেশনের মতো লেগে আছে তার ঘ্রাণ।
অতএব ফেরত নেওয়ার খাতটা চাইলে বিশ্বব্যাংকের ফরমুলায় বড় করেও
নিতে পারো। ফিরবো শীঘ্রই—সঙ্গে নিয়ে প্রগতির অ্যাসেম্বলকৃত কৃত
গাড়ির তুল্য নবায়িত হৃদয়, আর তোমার চুমুর প্রতিদ্বন্দ্বী পাঁচটি
প্রেমের কবিতা; আমাদের বসফরাস ব্রিজ লুবনা আর ফতেহ সুলতান
মেহমুদ ব্রিজ সজন; অতএব ভলো থেকো—সারাদিন—সারারাত—সারাবেলা।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।