ঝুটন দত্তের পাঁচটি কবিতা
আদিম অরণ্য
একটা সময় শেয়ালের হুক্কাহুয়া শোনা
যেত নিত্য সন্ধ্যায়,
দিন-দুপুরে কেউ একা যেত না পাশ ঘেঁষে।
অনাবাদী জমিতে জংলী পশুদের বিচরণ ছিল,
সেসব এখন এক দুই তিন ফসিল জমি হয়েছে।
বনকে ঘিরে পাড়াময় রয়েছে ভৌতিক কল্পকাহিনি
কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কোথায় সেই জঙ্গলগুলো;
জৌলুস নেই, আছে টুকরো অন্ধকার হয়ে।
****
অভিসার
স্বচ্ছ কাঁচের মতো হৃদয়ে
ঢেউ খেলে যায় নদীর জল;
কিনারে দাঁড়িয়ে দেখে আড়চোখ,
অস্ফুট সময়ের লুকোচুরির
আঁকিবুঁকিতে গড়া বেদনার রংমহল।
যান্ত্রিক সভ্যতার লাগাম ধরে আছে দানবেরা,
যন্ত্রণাকে দিলাম ছুটি ছলনার নাগপাশ থেকে।
রাতভর দেহতীরে বয়ে যায় গোপন অভিসার,
কৃষ্ণসাগরের অতল জোছনায়
কেবলই তোমার অনুসন্ধানে।
****
বেলগাছ
মন খারাপের দেশে যাই,
তারপর জল হয়ে
ঝরে পড়ি তোমাদের কাঁচারি বাড়ির দক্ষিণ আঙিনায়।
লুকিয়ে মারবেল খেলার শৈশব স্মৃতি নিয়ে
দাঁড়িয়ে আছে একা বেলগাছ, আর সব হয়ে গেল বিলুপ্তির ইতিহাস।
****
অন্তঃস্থিত
তোমার কাছে আজ একান্ত বলার কিছু নেই,
পৃথিবীর পুরাতন রেখা ধরে হাঁটি নতুনের সাজে-
গাছের শোভিত পত্রের মতো ভোরের আলোর পথে।
শরীরজুড়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম,
জাগাই প্রাণের পরশ তোমাকে ভেবে।
কোনো অভিযোগ নেই অতীতের,
দগদগে গা শুকিয়ে চোখ পড়ে আছে
শান্ত জলে চাঁদডোবা পুকুরে;
একই গৃহের পাঠ্য, একই গ্রহের যে জীবন তাকে
বলার কী-ই বা থাকে।
****
চাঁদনী
জোসনা রাতে যে প্রেম নিয়ে এলো তার পায়ে পরিয়ে দিলে
অদৃশ্য শিকল
জাদুকরী নৃত্য কেড়ে নিলো
চোখের দ্যুতি
কানের কাছে শোনালে
ভয়ংকর যুদ্ধের আওয়াজ
রক্ত-মাংসের শরীর ঘুমিয়ে গেলে
ভিটেমাটির দখলদারিত্ব তোমার
জেগে রয়
শতাব্দীর একটি শ্রেষ্ঠ চাঁদনী রাত।
কবি: তারাকান্দা, ময়মনসিংহ।
এসইউ/জিকেএস