একটি দেশ ও সাফল্যের দীর্ঘযাত্রা
২০১২ সাল থেকে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগে কর্মরত আলিমুল হক একজন অভিজ্ঞ সাংবাদিক ও সুলেখক। চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগের উপ-পরিচালক ছাও ইয়ান হুয়া (বাংলা নাম সুবর্ণা) একজন ভালো সাংবাদিক ও লেখক। দুজনের প্রচেষ্টায় একটি চমৎকার, তথ্যসমৃদ্ধ ও সুলিখিত বই তারা উপহার দিয়েছেন বাংলা ভাষার পাঠককে।এজন্য লেখকদের ধন্যবাদ জানাই। বইটি চীন বিষয়ে আগ্রহী পাঠকের জন্য সংগ্রহে রাখার মতো একটি বই নিঃসন্দেহেআজকের দিনে চীনের দিকে তাকালে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। একটি দেশ কত দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে সাফল্যের পথে তার প্রমাণ ২০২২ সালের গণপ্রজাতন্ত্রী চীন। কিন্তু এই সাফল্য একদিনে আসেনি একথা নিশ্চিত। এর পিছনে রয়েছে পুরো দেশের জনগণের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, পরিশ্রম ও উদ্ভাবনী চিন্তা।
চীনের সাফল্যের এই গাথা নতুনভাবে তুলে ধরেছে একটি বই। এবারের বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত বইটির নাম ‘নয়াচীনের সাফল্যের মুকুটে সাতটি পালক’। বইটি লিখেছেন আলিমুল হক এবং ছাও ইয়ান হুয়া। দুজনেই চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সাংবাদিক।
‘নয়াচীনের সাফল্যের মুকুটে সাতটি পালক’ বইতে তুলে ধরা হয়েছে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে চীনের সাত দশকের অর্জিত সাফল্যের কয়েকটি দিক।
১৯৪৯ সালের পহেলা অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী চীন মহান বিপ্লবী নেতা চেয়ারম্যান মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সালে চীনে পালিত হয় পিআরসির ৭০তম বার্ষিকী। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২১ সালে। ২০২১ সালে সিপিসির শততম বার্ষিকী পালিত হয়।
এই শত বছরে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে চীন অনেক সাফল্যই অর্জন করেছে। এই বইতে সাতটি বিশেষ অর্জনকে তুলে ধরা হয়েছে। এই সাতটি অর্জন হলো মহাকাশ গবেষণা, দ্রুতগতির রেল, সেতু, সুপার কম্পিউটার, নতুন জ্বালানি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং ক্রীড়া। চলতি বছরই শীতকালীন অলিম্পিকের আয়োজন করে সবাইকে চমকে দিয়েছে চীন।
বেইজিং এখন বিশ্বের একমাত্র শহর যেখানে গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন দুই ধরনের অলিম্পিকেরই আসর বসলো। ২০০৮ সালে চীন গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আয়োজক দেশ ছিল। এ বছর শীতকালীন অলিম্পিকের আয়োজন করে ক্রীড়াক্ষেত্রে চীন তার শক্তি-সাফল্যের পরিচয় নতুনভাবে দিয়েছে।
মহাকাশ গবেষণায় চীনের অগ্রগতি ও সাফল্য একটি নতুন বিস্ময়। চাঁদে মহাকাশযান পাঠানো, মঙ্গলে মহাকাশযান পাঠানো, পৃথিবীর কক্ষপথে মহাকাশ স্টেশন স্থাপন এবং সেখানে নভোচারীদের সফল অবস্থান এ সবকিছুই চীনের অগ্রগতির পরিচায়ক।
তবে চীনের সাম্প্রতিক সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো দারিদ্র্য বিমোচন। ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে করোনা প্যানডেমিকের মধ্যেও চীন তার বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠিকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে সক্ষম হয়ে বিশ্বে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। একটি দেশের সরকার জনবান্ধব হলেই শুধু এমনটি সম্ভব। শুধু তাই নয়, একটি দেশের সরকারের পিছনে বিপুল জনসমর্থন না থাকলে এটি সম্ভব নয়। চীনের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, পরিশ্রম এবং উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিসি বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। ১০০ বছর আগে সিপিসির সদস্য সংখ্যা ছিল ৫০ জনের কিছু বেশি। আর এখন এর সদস্য সংখ্যা ৯ কোটি ৫০ লাখেরও বেশি। চীনের উন্নয়ন হয়েছে তিনটি ধাপে। বইটি তাই উৎসর্গ করা হয়েছে তিন যুগের তিন মহান কমিউনিস্ট নেতাকে। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সে তুং, চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের প্রবক্তা তেং সিয়াও পিং এবং আধুনিক চীনের অন্যতম রূপকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং। এই তিনজন দেশনেতাকে উৎসর্গ করা বইটিতে চীন বিষয়ে প্রচুর তথ্য রয়েছে।
এই বইয়ের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো সিপিসির শত বছরের ইতিহাস তুলে ধরা। সমাজবিজ্ঞানের আগ্রহী পাঠকের কাছে এই অধ্যায়টি অবশ্যই অত্যন্ত মূল্যবান।
প্রচুর ছবি রয়েছে বইতে। উন্নত কাগজে ছাপা ২১৯ পাতার বইটি চায়না মিডিয়া গ্রুপের অর্থায়নে ঢাকা থেকে প্রকাশ করেছেন আরিফুর রহমান। প্রচ্ছদও করেছেন তিনি। বইটির দাম ৬০০ টাকা।
২০১২ সাল থেকে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগে কর্মরত আলিমুল হক একজন অভিজ্ঞ সাংবাদিক ও সুলেখক। চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগের উপ-পরিচালক ছাও ইয়ান হুয়া (বাংলা নাম সুবর্ণা) একজন ভালো সাংবাদিক ও লেখক। দুজনের প্রচেষ্টায় একটি চমৎকার, তথ্যসমৃদ্ধ ও সুলিখিত বই তারা উপহার দিয়েছেন বাংলা ভাষার পাঠককে।এজন্য লেখকদের ধন্যবাদ জানাই। বইটি চীন বিষয়ে আগ্রহী পাঠকের জন্য সংগ্রহে রাখার মতো একটি বই নিঃসন্দেহে।
এইচআর/জিকেএস