ফারহানা ইলিয়াস তুলির একগুচ্ছ কবিতা


প্রকাশিত: ০৫:৪০ এএম, ১৪ জানুয়ারি ২০১৬

মুখরিত দুপুর

তখনও ভাগ হয়নি বসন্তকাল। রোদের ঘরবদল দেখে
যে ফালগুন তৃপ্ত ছিল না-আমরা সেই ভোরের কোলেই
মাথা রেখে লিখতে চেয়েছিলাম প্রেমের চাষবিন্যাস।

একদিন আমাদের মাঠে ফলবে ফসল, আমাদের স্বাধীনতার
স্তম্ভ মাথা উঁচু করে বরণ করবে প্রজন্মের কুচকাওয়াজ,
এমন স্বপ্ন ছিল আমাদের। ছিল পাখির কলতানের মতো
মুখরিত দুপুর। ছিল সমবেদনার সুরে আঁকা রঙিন একতারা।

আমরা লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলাম যে সব অভিযোগ,
তা অনুকূল হাওয়ায় উড়িয়ে দিতে দিতে পাখিদের বলেছিলাম,
সবুজের সহাবস্থান চাই। মানুষের জন্য আবার লিখতে চাই
মার্বেল মৌসুমের কিছু শৈশবী গান।

অবিকল বিলাপগুচ্ছ

দৃষ্টিসমূহ ফিরে যাচ্ছে। ফিরে যাচ্ছে দরিদ্র মানুষের জন্য
আগত সকল উপভাতা। রিলিফের চাল। ফিরে যাচ্ছে,
ওষুধ-পথ্য। লবণ-পানির স্যালাইন। ফিরে যাচ্ছে মেঘ।
ফিরে যাচ্ছে ছায়া। রান্নার সকল উপকরণ থেকে হাত
সরিয়ে নিচ্ছে গৃহিণী। শাবল চালাবার জন্য যারা মাঠে
নেমেছিল-তারাও গুটিয়ে নিচ্ছে হাত। অবিকল বিলাপগুচ্ছ
ঝরে পড়ছে মানুষের গৃহে। শিশুরা দেশপ্রেমের ইতিহাস
ভুলে, পড়ছে লাগাতর অবরোধ কাহিনি। এই মাটি থেকে
ক্রমশঃ ফিরে যাচ্ছে প্রেম। ভোরের গোলাপগুলো-
মাথা উঁচু করার সাহস দেখাতে পারছে না এই ঘন লোকালয়ে।

ব্যাকরণবিহীন সন্ধ্যাগুলো

ফুল ও সুতোর সংসারকে আমরা বলি মালা। যে চাদর
মাঘে ঢেকে রাখে আমাদের শরীর, তাকে বলি শীত নিবারক।
যে গ্রন্থ লিখে রাখে আমাদের হৃদয়ের সমীকরণ, তাকেই বলি
মনোবিজ্ঞান। অনেকটা আবিষ্কারক হয়েই খুঁজে দেখি অক্সিজেনের
ঘরবাড়ি। নিঃশ্বাসের বিশুদ্ধ উপাদান। কখনও ব্যাকরণবিহীন
কথামালার শরীরে সন্ধ্যাগুলোকে জড়াতে জড়াতে বলি,
ভালোবাসি-ভালোবাসি।

ডোরবেল

দরজায় ঝুলে আছে ডাক দেবার ঘণ্টা। ডোরবেল কিংবা
কলিংবেল বলতেই পারো তাকে। বেজে যাবার ইচ্ছে নিয়ে
জন্ম নেয় যে নদী, অথবা সুরেলা গান শোনাবে বলে
উত্তর থেকে উড়ে আসে যে পাখি- তাকেও বলতে পারো
পড়শি প্রহরী।
 
আমি আগমনের অপেক্ষায় থেকে যে নক্ষত্রকে আমার ঘরে
আসতে বলি, সে-ও মাঝে মাঝে আমার ডোরবেল বাজায়।
আমাকে জাগিয়ে রেখে ঘুমনগরে হারিয়ে যায় কল্পনার চন্দ্রপুত্র।
মানুষেরা ছায়ার সান্নিধ্য পছন্দ করে বলে ডোরবেলগুলো
মাঝে মাঝেই তৈরি করে গৃহপ্রবেশের ঘনিষ্ট ছায়াপথ।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।