মায়াবতী: পর্ব ৩৪
অম্লান আগে বিয়ে করেছিল। ওর প্রাক্তন ওয়াইফ অম্লানের আগের বিয়ের ছবি পাঠিয়ে দিয়েছে।
বলেন কী!
সত্যি বলছি। আমি যাচাই করে দেখেছি সব। শুধু ছবির ওপর ভর করে কমেন্ট করছি না। প্র্যাকটিক্যালি গিয়েছি অম্লানের সাবেক বউয়ের বাপের বাড়িতে। মেয়েটা এখন ফ্লোরিডায় থাকে। শুনেছি অম্লান একটা মদ্যপ। অনেক স্ক্যান্ডাল আছে ওকে নিয়ে। নিউইয়র্কে লোগ্রেড জব করে। পিএইচডির খবর ভুয়া।
রিয়ার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। একটু আগে লাশ কেটেছে ও। কেটেকুটে শিখেছে দেহবিজ্ঞান। মনে হচ্ছে রেজা মামা স্কালপেল দিয়ে কাটছে এখন মুনাকে। কেটেকুটে শিখছে জীবনের মর্মন্তুদ সত্যের বিজ্ঞান।
রিয়ার চোখে পানি চলে এলো। বুকের মধ্যে রাগ জমা হয়ে গেল। মনে হতে লাগল, ওরা এত দ্রুত কেন বিয়ে দিলো মুনাকে! বিদেশে থাকে এমন ছেলের ব্যাপারে যথাযথ খোঁজ কেন নেওয়া হলো না?
রিয়া ঝরঝর করে কাঁদতে শুরু করল। লাশকাটাঘরে কেঁদে কেঁদে বলল, মামা মুনাকে আমরা খুন করে ফেলেছি। লাশ করে ফেলেছি। এ দায়ভার কার, মামা?
রিয়ার কথায় রেজার চোখেও পানি চলে আসে। নিজেকে দায়ী ভাবে। আত্মীয়-স্বজনকে দায়ী ভাবে। অম্লানের বাসা থেকে কেন বিয়ের ব্যাপারে তাড়াহুড়ো হয়েছে, কেন কার্ড না ছাপিয়ে অনুষ্ঠান ছাড়া বিয়ে হয়েছে, বুঝতে পারে ও এখন।
রেজা বলল, এখন আমরা কী করতে পারি, রিয়া?
কী করতে পারি মানে? ওকে নিয়ে আসব।
ওর বাবা-মা এখনো কিছু জানে না। ওরা জানলে তো হার্টফেল করবে।
হার্টফেলের ভয়ে বসে থাকলে চলবে না। হাসান আঙ্কেল অনেক বিজ্ঞ মানুষ। মাহবুবা আন্টি নরম। নরম হলেও মুনার দিকে চেয়ে সব ঝড় মোকাবিলা করতে তারা পিছপা হবেন বলে মনে হয় না।
রেজা বলল, তাহলে চলো, সবাই মিলে আগে মুনার কাছে যাই।
সবার দরকার নেই। আমি আর আপনি গেলেই হবে।
আমি যে যেবুকে বলে ফেলেছি।
ওঃ! থেমে গেল রিয়া। মামার যেবু শব্দের উচ্চারণটা খুব নরম আর আদুরে মনে হলো, মনে হলো শব্দটার গহিনে আছে অনেক বেশি মমতা। বুকের ঘরে চিনচিন করে উঠল। এমন লাগছে কেন? বুঝতে পারল না রিয়া।
স্বর শীতল করে রিয়া প্রশ্ন করে, যেবু আপার সঙ্গে রোজ কথা বলেন? মনে হচ্ছে আপনাদের মধ্যে যোগাযোগ আছে?
রেজা নাড়া খেলেন। রিয়ার স্বরে কিছুক্ষণ আগের উত্তাপের সঙ্গে এ মুহূর্তের শীতল উচ্চারণে বিরাট ব্যবধান টের পেয়ে সহজ থেকে বলল, বলি। ছোট উত্তর দিয়ে থেমে গেল রেজা মামা।
রিয়ার শীতল গলা স্বাভাবিক হতে থাকে। নিজেকে সামলে দৃঢ় গলায় বলল, আজ বিকেলে আমরা সবাই মুনার কাছে যাব। সবাইকে খবর দেন।
তুমি দাও।
আপনিই যেবু আপাকে টাইম এনশিয়োর করেন, বিকেল পাঁচটা। আমি কুসুম আর বাঁধনকে জানাচ্ছি।
লাইন কেটে প্রথমে কুসুমকে ফোন করে রিয়া। মোবাইল ক্যান নট বি রিচড। মন খারাপ হয়ে গেল ওর। কুসুমকে এখন বাসায় পাওয়া যাবে না। ক্যাম্পাসে হয়তো আছে। ক্লাসেও থাকতে পারে। হলেও থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রোকেয়া হলের এক্সটেনশন বিল্ডিংয়ে সিট পেয়েছে সে। বাসায়ই থাকে তবে পড়ালেখার চাপ বাড়লে হলে চলে আসে।
ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে এলো রিয়া। কলেজের সামনেই লেডিস হোস্টেল। হোস্টেলের সামনে এসে বাঁধনকে কল করল। প্রথম চেষ্টায় পেয়ে গেল। ডিটেইলস কিছু না বলে শুধু বলল বিকেল পাঁচটায় পৌঁছতে হবে মুনাদের বাসায়। রেডি থাকিস।
রুমে আসে ও। রুমমেটরা কেউ নেই। সবাই বাইরে।
রুমে ঢুকে বড় করে একটা শ্বাস ছাড়ে। অ্যাপ্রন খুলে এদিক-ওদিক তাকিয়ে ভাবে বাথরুমে যাওয়া দরকার। বাথরুমে যেতে হলে পাড়ি দিতে হয় পুরো ব্লক। ব্লকের পশ্চিম প্রান্তে বাথরুম। অভিজাত বাসায় বর্ণাঢ্য জীবনে অভ্যস্ত রিয়া সব মানিয়ে নিয়েছে এখানে।
গোসলের ড্রেস হাতে নিয়ে বাথরুমে ঢোকে।
ঝরনার শীতল পানিতে নিজেকে ভিজিয়ে নিয়ে মনের উত্তাপ কমাতে চায় ও। দেহ শীতল হয়। মন শীতল হলো না। মনের গোপন কোণে কী যেন এক কষ্ট ঢুকে গেছে। এই কষ্টের শেকড় খুব শক্ত, বেশ গভীরে। শক্ত শেকড় গেড়ে বসা এ কষ্ট উপড়ানোর ক্ষমতা নেই ওর। ভাবল ও।
তেত্রিশ.
ভার্সিটিতে ভর্তি হলে মনে একটা উন্মাদনা আসে। মনে আলোড়ন আসে। কুসুমকলি প্রথমে ছিল আলোড়নহীন, নিরুত্তাপ। ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছে। গর্ববোধ করছে। ঢাকা ভার্সিটির ছাত্রী ও। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হলে জীবনই বৃথা হয়ে যেত মনে হচ্ছে। ক্যাম্পাসে আগে অনেক ঘুরেছে। আগের ঘোরা আর এখনকার ঘোরার মধ্যে পার্থক্য আছে। এখন মনে হয় এটি আমার ক্যাম্পাস। আমার ডাচ। আমার টিএসসি। আমার কলাভবন। আমার হল। ‘আমার করে’ উপলব্ধি করার সুযোগ মনে জাগায় গোপন প্রেরণা। কুসুমের আছে বাড়তি সুযোগ। অবাধ স্বাধীনতা। পাশে আছে মাহিন। নোবেল জয়ের স্পিরিটও আছে সঙ্গে। চারপাশ জয় করারও তাগিদ আছে।
এ তাগিদে ছুটে চলে ক্যাম্পাসে।
রোকেয়া হলের গেট দিয়ে ঢুকে ডানে ঘুরে কুসুম দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিল বর্ধিত ভবনের দিকে।
হঠাৎ থেমে গেল। রেইনট্রি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে দেখল তানজি আপাকে। চতুর্থ বর্ষের তানজি থাকেন মেইন বিল্ডিংয়ে। নবীন বরণ অনুষ্ঠানে আপার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। চোখাচোখি হতেই আপা ইশারা করেছেন থামার জন্য। থেমে একটু পর তানজি আপার পাশে এসে দাঁড়াল কুসুম।
তিনি কথা শেষ করে কুসুমের হাত ধরলেন।
চলো, তোমাদের ভবনে যাব।
উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে কুসুম।
তানজি আপা ক্যাম্পাসের পপুলার মুখ। অসাধারণ ভদ্র। অসাধারণ মেধাবী। অলরাউন্ডার। চমৎকার গান করেন। চমৎকার আবৃত্তি করেন। তানজি আপার মুখের হাসিতে মিষ্টি ঢেউ ছড়িয়ে যায়। ভীষণ ভালো লেগেছে তাকে। সেই আপা কি না তার হাত ধরে হাঁটছেন!
তানজি প্রশ্ন করেন, কেমন চলছে কুসুম?
ভালো। খুউব ভালো।
ভালোটা কী? পড়ালেখা, নাকি ক্যাম্পাসের আড্ডা?
দুটোই ভালো লাগছে আপা।
ভেরি গুড।
টিউটোরিয়াল পরীক্ষা শুরু হয়েছে?
জি। ইতোমধ্যে ২০ নম্বরের চারটা টিউটোরিয়ালের একটা হয়ে গেছে। একজন স্যারকে ফেস করেছি।
কোন গ্রেড পেয়েছ?
‘এ’ গ্রেডই আছে আপা।
কনগ্র্যাচুলেশন, কুসুম! হলে বা ক্লাসে কিংবা ক্যাম্পাসে কোনো সমস্যা ফেস করছ?
না আপা। সমস্যা দেখছি না। ভালো ফ্রেন্ডস পেয়েছি। সবাই খুউব কো-অপারেটিভ।
ভালো। ভালো লাগলেই ভালো। তবে সুন্দরী মেয়েদের সমস্যা আছে অনেক। চোখ-কান খোলা রাখতে হয়। তুমি শুধু সুন্দরীই না, মায়াবী, মেধাবীও।
সমস্যার পাশাপাশি প্রশংসাবাক্য শুনেও কুসুমের উচ্ছ্বাস থমকে গেল।
কীরকম সমস্যা হতে পারে, আপা?
এই ধরো, গায়ে পড়ে উপকার করতে চাইবে অনেকে।
অনেকে মানে? কারা?
কিছু মজনু জুটে যাবে। সিনিয়র জুটে যাবে। রাজনীতির বিষয়ও আছে। তা ছাড়া সবচেয়ে বেশি সাবধান থাকতে হয় কোনো কোনো স্যারদের কাছ থেকে।
কুসুম এবার বড়রকম ধাক্কা খেয়ে নড়ে উঠে প্রশ্ন করে, স্যারদের কাছ থেকে?
হ্যাঁ। অনেক স্যারের ব্যক্তিত্বপূর্ণ কথাবার্তায়, সৌন্দর্যে আচরণে গলে যায় প্রথম বর্ষের মেয়েরা। মুগ্ধতায় বশ হয়ে যায়। ওই মুগ্ধ মুখগুলোকে কোনো কোনো শিক্ষক সহজে নানা ফাঁদে ফেলে দেয়। অ্যাবিউজ করে। যৌন নিপীড়ন করে।
ওঃ! বলেই চুপ হয়ে গেল রিয়া। ফ্ল্যাশব্যাকে ঘুরতে লাগল নিজের স্যারদের চারপাশে:
হ্যাঁ। একজন স্যারকে দেখে খুব ভালো লেগেছে। এটা শ্রদ্ধাপূর্ণ ভালো লাগা। স্যারও তার প্রতি বেশি মায়া দেখিয়েছেন। মুগ্ধচোখে কথা বলেছেন, টেলিফোন নম্বর দিয়ে বলেছেন, পড়ালেখার বিষয়ে প্রয়োজনে হেল্প নিতে। এ হেল্প করার পেছনে কি তবে কোনো গোপন উদ্দেশ্য আছে? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে, তানজি আপার জীবনে কি তবে বিরূপ অভিজ্ঞতা আছে? এ কারণেই কি তিনি সাবধান করছেন?
তানজি আবার বললেন, নিচের ক্লাসের মেয়েদের সমস্যা একরকম, ওপরের ক্লাসে অন্যরকম। ওপরের দিকে উঠতে উঠতে অনেক মেয়ের অনেক ধরনের অভিজ্ঞতা হয়, পরিস্থিতি বুঝে ফেলে তারা। অনেকে স্যারদেরই ব্যবহার করে, সুবিধা নিতে চেষ্টা করে, নেয়ও। বিনিময়ে অনেক ছাড় দেয়।
ছাড় দেয়? স্যাররা কি সেই সুবিধার ফাঁদে পা দিয়ে থাকেন?
হ্যাঁ। স্যাররাও অনেক মায়াবতীকে ফাঁদে ফেলেন। পুরুষ হিসেবে সুযোগ নেন। সায়েন্স ফ্যাকালটিতে এমনটা বেশি ঘটে। আর্টস ফ্যাকালটিতেও ঘটে। হিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে তো এ নিয়ে একবার লঙ্কাকাণ্ড ঘটে গেছে। যেখানে সুযোগ বেশি, নিরিবিলি পরিবেশ বেশি, সেখানে অ্যাবিউজও বেশি, নিপীড়ন বেশি। এজন্য বলছি, অহেতুক উপকার নেবে না, কারও কাছ থেকে উপকার নেওয়ার আগে ভেবে দেখতে হবে, কাজটা নিজে করার সামর্থ্য আছে, নাকি নাই? নিজের প্রতি বিশ্বাস, নিজের যোগ্যতা বাড়ায়; সমস্যা জয় করা যায় তখন।
কুসুম জানতে চায়, স্যাররা কীভাবে ফাঁদে ফেলেন?
তানজি বললেন, অনেক ছাত্রীর কোনো কোনো বিষয়ে দুর্বলতা থাকতে পারে। সহজ মনে স্যারের হেল্প চাইতে পারে। অনেকে হেলপ নেয়। অনেক ভালো ছাত্রীও স্যারের কাছে যেতে পারে, হেল্প চাইতে পারে। বিশেষ বিশেষ স্যাররা এদের দুর্বলতা ধরে ফেলেন, ওদের কাছে আলাদা সময় চেয়ে বসেন। একবার ওপেন দাবি জানালে অবজ্ঞা করতে পারে না অনেকে। অনেকে প্রত্যাখ্যান করে। পরীক্ষার ফলাফলে প্রভাব পড়ে তখন।
থ্যাঙ্কস আপা। আই’ম গ্রেটফুল টু ইউ ফর মেকিং মি কনশাস অ্যাবাউট দ্য রিয়াল ইনটেরিয়র পিকচারস অব আওয়ার ক্যাম্পাস।
এক্সটেনশন ভবনে এসে তানজি আপা দ্বিতীয় তলায় এলো। কুসুমও থাকে দ্বিতীয় তলায়।
আপা, আমার রুমে আসবেন? খুশি হব।
আজ না, আজ কাজ আছে, অন্যদিন তোমার সঙ্গে আড্ডা দেবো। আই থিঙ্ক ইউ মে বি মাই জুনিয়র ফ্রেন্ড।
থ্যাঙ্কস আপা! আনন্দে ঝলমল করে উঠল কুসুম।
কুসুমকলির কৌতূহল মেটে না। কৌতূহল বেড়ে যায়। তানজির চলে যাওয়ার মুহূর্তেও প্রশ্ন করে বসে, আপনি এতকিছু জানেন কীভাবে?
নিজেই অনেক সমস্যার জালে জড়িয়েছি। তা ছাড়া বিশেষ বিশেষ শিক্ষকদের কীর্তিকলাপ চাউর হয়ে যায়। মেয়েরা আড্ডায় এসব গোপন কথা আলাপ করে। তাদের অনেকে পেটে ধরে রাখতে পারে না স্যারদের অনেক বেহায়া আর অদ্ভুত আচরণ।
স্যাররা এসব বোঝেন না? ছাত্রীদের কাছে লুজ ক্যারেক্টারের শিক্ষক হিসেবে চাউর হয়ে যে মানসম্মান খোয়ান, জানেন না?
তানজি বললেন, একটা প্রবাদ আছে, কাক ময়লা খায় চোখ বন্ধ করে। ভাবে, তাকে কেউ দেখছে না। শিক্ষকেরাও চোখ বন্ধ রাখেন। সুন্দরী মেয়েদের ভিড়ে নিজেদের গোপন ইনস্টিংক্ট গোপন রাখতে পারেন না। ফ্ল্যাশ হয়ে যায়।
সবাই তো এমন না, কী বলেন আপা?
না। আমরা সবার কথা বলছি না। বিশেষ বিশেষ কেউ এমন। ওদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। সেই বিশেষদের কথা বলছি।
সিনিয়র মজনুদের কথা যেন কী বলছিলেন?
ভার্সিটির সুন্দরী মেয়েরা প্রপোজালের জ্বালায় অস্থির হয়ে যায়। ধৈর্য হারিয়ে ফেলে। একসময় যেন তেন একজনের সঙ্গে ঝুলে পড়ে। নিজের শেল্টারের জন্য এমনটা করে ফেঁসে যায় তারা।
কুসুম বলল, আশা করি আমার সে প্রবলেম হবে না।
কেন? জড়িয়ে গেছ, নাকি আগে থেকেই বুক্ড?
কুসুম হাসে। তার হাসির মধ্যে আছে বিশ্বজয়ী হাসি। আছে নোবেলজয়ী কান্না। এ হাসিকান্না তার ভালোবাসার উৎস। বুক দখল করে আছে মাহিন। তাই মনে মনে বলতে পারে, নো ভ্যাকান্সি। আচরণে বিষয়টা উদ্ধত অথচ ভদ্রভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। তানজির প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়েও বুঝিয়ে দেয় ও, ভ্যাকান্সি নেই।
তানজির মুখেও হাসি ফোটে। কুসুমের মুগ্ধতাও ছুঁয়ে যায় তার মন, সামনের রুমের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলেন তিনি।
কুসুমকলি রুমে ঢুকে ব্যাগটা খাটে রাখে। হাত ছেড়ে রিল্যাক্স হয়ে শুয়ে পড়ে। এমন সময় সেলফোন বেজে ওঠে।
ব্যাগের ভেতর থেকে সেট নিয়ে চোখের সামনে তুলে ধরে।
রিয়া!
রিয়ার ফোন। দ্রুত কলটা ধরে সে।
রিয়া প্রশ্ন করল, কিরে! মোবাইল বন্ধ রেখেছিস কেন?
বন্ধ রেখেছি মানে? কার সঙ্গে কথা বলছিস? বন্ধ রাখলে কথা চলে কীভাবে?
আরে গাধা, অনেকক্ষণ ধরে তোকে চেষ্টা করেছি। ফোন কানেক্ট করতে পারছিলাম না।
এ নম্বরে আর পাবিও না।
পাব না মানে?
মানে সিম বদলাব। বদলাতে হবে।
কেন?
না বুঝে অনেককে ফোন নম্বর দিয়ে দিয়েছি। এক টিচারকেও গদগদ হয়ে দিয়ে এসেছি।
তো? হয়েছেটা কী?
কিচ্ছু হয়নি। হতে পারে। নলেজ পেয়েছি।
শোনা নলেজ না ভোগা নলেজ?
শোনা। তবে ভোগার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
বলিস কী?
কুসুম বলল, হ্যাঁ। রিয়াল ইনফরমেশন পেয়েছি। মেডিক্যালে তোর কোনো অভিজ্ঞতা হয়নি?
রিয়া বলল, আমার তো পোড়া মন। পোড়া চোখ। অভিজ্ঞতা হওয়ার আগেই আক্রমণকারী পুড়ে যাবে, পোড়-খেয়ে পালাবে।
পুড়িয়েছিস নাকি কাউকে?
এক ব্যাচ টিচার গদগদ হয়ে কথা বলেছে। আলাদা খাতির করতে চেয়েছে। প্রশংসা করেছে।
তুই কী করলি?
সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে পড়েছে মুনার অভিজ্ঞতার কথা। আহসান স্যার এপিসোড আমাকে রক্ষা করেছে। ভদ্রভাবে শিক্ষা দিয়েছি। আশা করি ভবিষ্যতে আর চোখ দেবে না আমার দিকে।
যদি নম্বর কম দেয়?
দিতে পারে, ছোট ছোট আইটেম পরীক্ষা তার হাত দিয়ে পার হতে হবে।
নম্বর কম দিলে পিছিয়ে যাবি না?
যেতে পারি। প্রয়োজনে পেছাব। নো কম্প্রোমাইজ। উত্তর দিয়েই রিয়া প্রশ্ন করে, কেন রে? তোকে কি কোনো বিষয়ে কম্প্রোমাইজ করতে হয়েছে, কুসুম?
না এখনো হয়নি। কম্প্রোমাইজের প্রশ্ন এলে আশা করি বুদ্ধি দিয়ে সমস্যা জয় করতে পারব।
থ্যাঙ্কস সুইট গার্ল। কুসুমকে সাহস দেয় রিয়া।
এবার আসল কথায় আসে ও।
শোন, আজ বিকেল পাঁচটায় মুনার শ্বশুরবাড়ি যাব আমরা সবাই। তুইও যাবি। সম্ভব?
শিয়োর। তোরা যাবি আর আমি যাব না?
গুড। তাহলে বিকেল চারটায় তুই রেডি থাকিস। আমি হোস্টেল থেকে বেরিয়ে তোদের গেটের কাছে থাকব ঠিক চারটায়। পাঁচটার মধ্যে সবাই একসঙ্গে যাব মুনার কাছে।
উপলক্ষ্য কী?
গাড়িতে বলব। বাপিকে বলে রেখেছি। বাপি গাড়ি পাঠিয়ে দেবেন হোস্টেলে।
ঠিক আছে। আমি রেডি থাকব।
চলবে...
এসইউ/এমএস