ফকির ইলিয়াস এর সাম্প্রতিক পাঁচটি কবিতা


প্রকাশিত: ০৯:২২ এএম, ০৩ জানুয়ারি ২০১৬

জল ছিটানো ঘুম

তন্দ্রা এবং তন্ত্রে কেটে গেছে কয়েকটি মহাকাল।
কয়েকলক্ষ পৌষের শীত, জবুথবু করে রেখেছে
পাখিদের জীবন। যেসব মানুষ পরিন্দার প্রতিবেশী,
তারাও বন্দী হয়ে পড়েছে আঁটোসাটো পলেস্তারার
ভেতর। থেমে যাচ্ছে প্রদক্ষিণরত সূর্য।
 
বিগত এমন ইতিহাস অস্বীকার করতে চাইছে
আমাদের ভালোবাসার সাম্পান। ঢেউ ভাঙছে
যে নদী- তাকে সাক্ষী রেখেই লিখতে চাইছে
জীবনের নতুন পরিচ্ছেদ।
মাটিতে জল ছিটাচ্ছে যে ঘুমময় চোখ, মানুষ
তার শুশ্রূষা চেয়ে করছে বিনম্র প্রার্থনা-
 
পুনরায় লিখিত হোক নতুন সূচিপত্র,
আবার উচ্চকিত হোক বলিষ্ঠ বাহু-
এমন বরণের গানে সুর তোলে, চাঁদের দিকে
না তাকিয়েই মধ্যরাতে বাড়ি ফিরছে
দীনহীন গায়েন।
 
প্রথম প্রেমের পৃথিবী
 
রেখে যাচ্ছি বর্ষের সর্বশেষ রেণু। রেখে যাচ্ছি মাটির
ভেতরে লুকিয়ে থাকা সবটুকু খনিজ। যে তুমি সংগ্রাহক
হয়ে তুলতে চাইবে এই জলজ শালুক,
তার হাতেই ফোটে থাকবে সহস্র পদ্মের পরাগ,
কিংবা স্বপ্নের কুমার হয়ে যে কুমারীর নামে
লিখে দেবে প্রথম প্রেমের পৃথিবী-
তার জন্যই জমা থাকবে আমার কবিতার
সর্বশেষ অক্ষর, অযুত মায়ার মহার্ঘ।
 
মিশে যাচ্ছি সম্ভাবনার আগাম অনুবাদে,
পাখির কোমল চোখে কাজল পরিয়ে যে
পালক, আঁকে নন্দনের নবম শিল্প
আমি তার হাতেই রেখে যেতে চাইছি আমার
কালি ও কলম। প্রচুর প্রেমবৃষ্টিতে ভিজে যারা
নিজেদের ছবি তুলবে,
তাদের পাশেই রেখে যাচ্ছি আপাতত আমার
কাব্যপোট্রেট।
 
সব দুঃখই পাখি হয়ে যায়
 
সব দুঃখই পাখি হয়ে যায়। সকল বেদনাই চৈতন্যের
জল হয়ে সমুদ্রে ভাসে। কোনো পরদেশী জাহাজের
পাটাতন তা ছুঁতে পারে, কখনও থেকে যায় অস্পর্শের অতল।
ঝড়গুলো বিভক্ত হয়ে প্রদক্ষিণ করে উত্তর এবং
দক্ষিণ মেরু। যারা পূর্বে থাকে, তারা তাকায় পশ্চিমে।
সূর্য ডুবলো বলে, জোনাকিরা গায়ে জড়ায় রাতের সন্ন্যাস।
 
দুঃখের অপর নাম সন্ন্যাস-সমুদ্র
বেদনার অন্য নাম কাকাতুয়া পাখি
যারা দুঃখ পেতে চায় না, তারা নির্বাক হাসে
যারা হাসতে ভুলে গেছে, তারা স্মরণ করতে
পারে না কান্নার সর্বনাম।
 
অথচ আমরা জানি,
আদম-হাওয়া একদিন কাঁদতে কাঁদতেই
পৃথিবীর পথযাত্রী হয়েছিলেন!
 
আর যারা সমুদ্রের প্রতিবেশী
 
আমার কাছে বসে বৃষ্টি, গল্প শোনায় না এখন আর।
কোনো মেঘ ছায়া দেবে বলে, করে না অঙ্গীকার
কিছু বিজলী, পাশ কাটিয়ে অন্যত্র চলে যায়
কিছু ঝড়, হারিয়ে যায় খড়ের বক্ষদেশে।
 
আমি আর আমার পালিত দুঃখ`রা জেগে থাকি
আর যারা সমুদ্রের প্রতিবেশী, তারা বসে থাকে শিয়রে
আমরা সবাই ভুলে যাই আত্মরক্ষার কৌশল।
 
আপাতত আত্মরক্ষা বলতে আমি তাকিয়ে থাকাকেই
বুঝি। সব ইচ্ছে একদিন সমুদ্রে ভেসে যাবে-
এমন ভাবনা আমাকে আর বিচলিত করে না।
 
ভরচৈত্রের ছায়াগ্রহণ
 
অপূর্ব মায়াবৃষ্টি ছড়াবে বলে উড়ে যাচ্ছে পৌষের মেঘ
ভালোবাসার পালকে উষ্ণতার বিস্তার দেখে,
পাখিগুলো নেচে উঠছে আনন্দে-
আহা শৈশবকাল! আহা মার্বেল পাথরে আঁকা
প্রিয়তমার চোখ,
জেগে থাকার ইতিহাস পাঠ করে যে রাত নীরবে ঘুমায়,
তার শিয়রেই বসে থাকে প্রেমের শুশ্রূষা।
 
পথ্য হাতে চাঁদসুন্দরীরা-
হাত বুলায় মেঘের মাথায়। দীর্ঘজীবী হও
রাতের শূন্যতা,
বলতে বলতে তারাগুলো হারিয়ে যায় জোনাক সংসারে
আগামী বসন্তে ভরচৈত্রের ছায়াগ্রহণ শেষ হলে
যে পাখি দেশান্তরি হবে-
তার জন্য কয়েকটি পাপড়ি জমিয়ে রাখে সতীর্থরা,
জমিয়ে রাখে কয়েকটি পাথর।

এইচআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।