মায়াবতী: পর্ব ২৪
কথাসাহিত্যিক মোহিত কামালের মায়াবতী বাংলা সাহিত্যে দ্বিতীয় মনোবৈজ্ঞানিক উপন্যাস। সাহিত্যের শব্দবিন্যাসে তিনি ব্যবহার করেছেন মনস্তত্ত্ব, সমাজের আড়ালের চিত্র। মা প্রত্যক্ষ করেছেন, মেয়েরা নানাভাবে উৎপীড়ন ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়, সহজে মুগ্ধ হয়ে অবিশ্বাস্য পাতানো ফাঁদে পা দেয়। মায়ের একান্ত চাওয়া মেয়ে ক্যারিয়ার গড়ে তুলুক। বিধিনিষেধ আরোপ করেন মা। মেয়ে তখন মনে করে, মা স্বাধীনতা দিতে চায় না, বিশ্বাস করে না তাকে। মায়ের অবস্থানে মা ভাবছেন তিনি ঠিক। মেয়ের অবস্থানে মেয়ে ভাবছে, সে ঠিক। মায়ের ‘ঠিক’ এবং মেয়ের ‘ঠিক’র মাঝে সংঘাত বাধে। সংঘাত থেকে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়, ভুল করে বসে মেয়ে রিয়া। পালিয়ে যায় ঘর থেকে। এই ‘ভুল’ই হচ্ছে উপন্যাসের মূলধারা, মূলস্রোত। মায়াবতী পড়ে চিন্তনের বুননে ইতিবাচক গিঁট দেয়ার কৌশল শেখার আলোয় পাঠক-মন আলোকিত হবে। জানা যাবে টিনএজ সমস্যা মোকাবিলার কৌশল। জাগো নিউজের পাঠকের জন্য ধারাবাহিক প্রকাশিত হচ্ছে সাড়া জাগানো উপন্যাসটি—
বাইশ.
আজ রাহেলা চৌধুরি বেশ খোশমেজাজে আছেন।
নতুন অর্কিড ফুল ফুটেছে টবে। ফুল নিয়ে ব্যস্ত তিনি।
মায়ের মন ভালো থাকলে রিয়ার মনও ভালো থাকে। আজ রিয়াও আছে খোশমেজাজে।
মেয়ের খুশি ইমরুল চৌধুরিকেও খুশি করে।
সবাই আজ বাসায়। বন্ধের দিন। বেড়ানোর নানা প্রোগ্রাম থাকে।
আজ বাইরে কোনো প্রোগ্রাম নেই। ঘরেই হচ্ছে গেট টুগেদার। সবাই একসঙ্গে আছে। ঘরেই শান্তি। ঘরেই আনন্দ। ঘরের এই আনন্দোৎসবের মজা আলাদা।
ইন্টারকম বেজে ওঠে। শব্দের সঙ্গে সঙ্গে লাল সিগন্যাল জ্বলে ওঠে। সিকিউরিটি সিগন্যাল। নিচ থেকে কল এসেছে। কে এলো বাসায়?
রিসিভার তোলে রিয়া।
হ্যালো। কে?
সিকিউরিটি গার্ড বলল, আপা, মাছআলা এসেছে। স্যার মাছআলাকে আসতে বলেছিলেন। পাঠাব উপরে?
হোল্ড করুন। বলেই রিয়া ডাকে, বাপি মাছওয়ালা এসেছে। উপরে আসবে? নাকি তুমি নিচে যাবে?
উপরে আসতে বলো। সবাই মিলে চয়েস করা যাবে। সঙ্গে একজন গার্ড যেন থাকে। বলে দাও।
রিয়া মেসেজটা গার্ডকে শোনায়।
গার্ড মাছওয়ালাকে নিয়ে উপরে আসে। মাছওয়ালার সঙ্গে আছে উঠতিবয়সি দুই কিশোর। এক কিশোরের মাথায় বড়ো ডেক। জিওল মাছ। মাগুর মাছ লাফাচ্ছে। পানিতে লেজ দিয়ে বাড়ি দিচ্ছে। অন্য কিশোরের ডেকে আছে কৈ মাছ। জ্যান্ত কৈ পানিতে খলবল করছে। বিশাল সাইজের ডালাতে আছে একটা বড় কাতল মাছ, রুই মাছ এবং একটা বোয়াল মাছ। চকচক করছে মাছ। তাজা মাছ।
শোল নাই? প্রশ্ন করল রিয়া।
আছে। নিচে।
নিয়ে এসো। রিয়া অর্ডার করে।
এক কিশোর ছুটে গেল। শোল মাছের ডেক নিয়ে এলো। বিশাল আকৃতির তিনটি শোল লাফ দিচ্ছে। দাপাদাপি করছে। হুলস্থূল অবস্থা।
ইমরুল চৌধুরি বললেন, মামণি তুমিই চয়েস করো।
রিয়া বলল, আমার তো ইচ্ছা করছে সব মাছ নিয়ে নিই।
রাহেলা চৌধুরিও পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
মাছের লাফালাফি দেখে মেয়ের মতো তার মনেও আনন্দ জাগে। আনন্দ নিয়ে বললেন, সব মাছ রেখে দাও। তবে কৈ মাছ নিয়ে আমার আপত্তি আছে।
কেন? এত জ্যান্ত কৈ, এত বড় সাইজ, আপত্তি কেন, মা?
কারণ এগুলো ফার্মের কৈ। দেশি না, বিদেশি জাত। দেখতে বড় হলেও খেতে স্বাদ নেই। খেতে বসে তুমি তো এগুলো ছুঁয়েও দেখো না।
ইমরুল চৌধুরি বললেন, তাহলে বাদ। মামণি খায় না। বিদেশি ফার্মের কৈ বাদ দিয়ে বাকি সব দিয়ে দাও।
মাছওয়ালা খুশি হয়। দামাদামির প্রয়োজন নেই। নিয়মিত মাছ সাপ্লাই দেয় সে। বেশি লাভ করে না। দাম নিয়ে কথা বলল না। দাম নিয়ে আনন্দমনে বেরিয়ে যাচ্ছে সে। এ বাসায় বিক্রি হয়েছে সাত হাজার টাকার মাছ। নিট লাভ দেড় হাজার। মাছওয়ালার মনে স্বস্তি আসে। স্বস্তি নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় ডাক দিলেন মিসেস চৌধুরি।
শোনো। ভালো মাছ পেলে দিয়ে যাবে।
জি। দিয়ে যাব। আপা আমার মোবাইল নম্বর রাখেন। প্রয়োজন হলে কল দেবেন। মাছ এসে যাবে ঘরে।
টিভির বিজ্ঞাপনটার কথা মনে পড়ে: ‘দিন বদলাইছে না, হেই দিন কি আর আছে? দিন আসলেই বদলায় গেছে গা।’
রিয়া খুশি হয়। নিজেই আগ বাড়িয়ে মোবাইল ফোনের নম্বর রেখে দেয়।
মাছওয়ালা এখনো যেতে পারেনি। দরজার সামনে এ সময় হাজির হয় মুনা। সঙ্গে একজন অচেনা নারী।
রিয়া চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে ওঠে। জ্যান্ত শোলের দাপাদাপির মতো আহাজারি না, স্বগত উল্লাসে অন্যরকম হয়ে গেল বাসার পরিবেশ।
মেয়ের আনন্দ বুকে পুরে নিলেন ইমরুল চৌধুরি। স্বাগত জানালেন মুনাকে। অপরিচিত ভদ্রমহিলাকেও।
মুনা বলল আঙ্কেল, উনি ইংরেজির টিচার। গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজির লেকচারার, যেবু আপা।
ইমরুল চৌধুরি বললেন, ওয়েলকাম।
যেবু আপা বলল, থ্যাঙ্কস।
রিয়া মুগ্ধ হয়ে গেল। অল্পতে সে মুগ্ধ হয়। মুগ্ধ হওয়ার প্রবণতা তার মধ্যে বেশি। যেবু আপাকে দেখে মুগ্ধতা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে লাগল।
রাহেলা চৌধুরি একবার থমকে গিয়েছিলেন।
এমন ধারালো এক নারী বাসায় এসেছে। ইমরুল চৌধুরি ভদ্রতায় গলে গেছেন। কোনো মেয়েকে দেখে বিগলিত পুরুষের চেহারা দেখতে ইচ্ছা করে না। নিজের স্বামী বলে কথা। ম্যানলি অভিব্যক্তি দেখতে চান স্বামীর মধ্যে। সেটা দেখতে পাননি। তবু তিনি স্বতঃস্ফূর্ত আছেন। খুশি আছেন।
মুনা বলে, আন্টি, রিয়াকে ইংরেজি পড়াবেন যেবু আপা। বাসায় এসে পড়াবেন। উনার ইউনিভার্সিটি আপনাদের বাসার কাছে। ভার্সিটিতে ঢোকার আগে এখানে একঘণ্টা পড়াবেন। সপ্তাহে তিনদিন।
রাহেলা চৌধুরি এবার আরও খুশি হলেন। হাত ধরে উনাকে টেনে নিয়ে এলেন বসার ঘরে।
রিয়া এখনো কথা বলছে না। যেবু আপাকে দেখছে ও। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।
গায়ের রং শ্যামলা। ধারালো চাউনি। উন্নত নাক। পুতুলের মতো মেদহীন চিকন শরীর। স্মার্ট। হাতে একটা ক্যাজুয়াল ব্যাগ। পরনে আছে গ্রামীণ চেকের শাড়ি। একদম সহজ সাধারণ সাজ। ঠোঁটে আত্মপ্রত্যয়ী মোহিনী হাসি। লম্বায় প্রায় রিয়ার সমান। পাঁচ ফিট চার ইঞ্চি।
রিয়া ভেতরে ভেতরে দাপাদাপি করছে। কৈ মাছের মতো ছটফটাচ্ছে। মাগুর মাছের লেজের মতো বারবার নড়েনড়ে উঠছে মন। কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে না ও।
তাজা মাছ স্বপ্ন দেখলে নাকি মনে সুখ আসে?
বাস্তবে দেখেছে তাজা মাছ। এ কারণেই কি সুখ এসেছে বাসায়? যেবু আপাই কি সুখ বয়ে এনেছেন? মনে সুখ আসছে কোত্থেকে?
রাহেলা চৌধুরি বেশি খুশি হয়েছেন। পুরুষ টিচারের কাছে টিউশনি একদম পছন্দ না। মেয়ের জন্য নারী টিচারই তার পছন্দের। পছন্দের টিচার পাওয়া গেছে। মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে আর ভাবতে হবে না। মেয়েরা কোথাও নিরাপদ নয়। বয়স্ক শিক্ষকেরাও শয়তানের হাড্ডি। বয়স্ক হুজুররাও একই লাইনের। অল্পবয়সি শিক্ষকেরা বয়স্কদের মতো ধূর্ত না। তবে তারা প্রেমে পড়ে যান। রূপবতী ছাত্রী হলে তো কথা নেই, প্রেমে পড়তে তাদের রূপের প্রয়োজন হয় না। মেয়ে হলেই হয়, কালা-ধলা, মোটা-বেঁটে বলে কথা নেই।
স্বস্তি নিয়ে তিনি বললেন, আপনি এসেছেন, খুশি হয়েছি। নিজের মতো দেখবেন সবকিছু।
যেবুর মুখে ভদ্রতার হাসি লেগেই আছে। ছোট কথায় জবাব দিলো, আপনাদের আন্তরিকতা ভালো লেগেছে। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব, দায়িত্ব পালনে গাফিলতি হবে না, এ আশ্বাস দিতে পারি।
রাহেলা চৌধুরি এবার ওঠেন। ইমরুল সাহেব পরিচিত হয়েই চলে গেছেন নিজের ঘরে।
রিয়া উল্লাসের সঙ্গে বলে উঠল, এবার যেবু আপাকে পাওয়া গেছে।
মুনা বলল, পাওয়া গেছে কিরে! তোর জন্যই তো এসেছেন।
যেবু বললেন, হ্যাঁ। তোমার জন্যই আসা। মুনা চেপে ধরল। না করতে পারলাম না। এখন মনে হচ্ছে, না এলে ভুল হতো।
রিয়া আবারও খুশিতে নেচে ওঠে। কেবল টিচার হিসেবে না, সিনিয়র ফ্রেন্ড হিসেবেও চাই আপনাকে।
মুনা তেড়ে ওঠে, এই! শেষে আমার আসন দিয়ে বসিস না।
হেসে ওঠেন যেবু। হেসে ওঠে রিয়া। দুজনের সঙ্গে হেসে ওঠে মুনাও।
হাসি থামিয়ে মুনা বলল, কুসুমকলিকে খবর পাঠিয়েছিস?
রিয়ার উল্লাস কিছুটা দমে যায়। প্রশ্ন শুনে আনন্দের জগৎ থেকে ফিরে এলো সাবলীল জগতে। ঠান্ডা গলায় বলল, পরে জানাব।
পরে আবার কখন? এখন জানা।
ও বোধ হয় এখন পড়ছে। বাসায় কেমিস্ট্রির টিচার আসে এ সময়। থাক, ওকে না জ্বালানোই ঠিক হবে।
জ্বলবে কেন? ও তো খুশি হবে। যেবু আপার সঙ্গে পরিচিত হবে।
হ্যাঁ। খুশি তো হবেই। তবে ও ইংরেজি পড়ে ওর বাপির কাছে।
গুড। ভেরি গুড। যেবু আপা বললেন, বাবা সন্তানকে ইংরেজি পড়ান। ভালো খবর এটা। কুসুম ইংরেজিতে নিশ্চয়ই ভালো করবে।
রিয়া বলল, জি আপা, বরাবর ইংরেজিতে কুসুমের রেজাল্ট এক্সিলেন্ট।
মুনা বলল, রিয়ার রেজাল্টও ভালো।
রিয়াও হেসে বললে, আপা, মুনার রেজাল্টও এক্সিলেন্ট।
যেবু বললেন, বাহ! তিন মেধাবী বন্ধুর মিলন ঘটছে। মেধাবীরা ভুল করে না। আশা করি তোমরাও জীবনে ভুল করবে না।
‘ভুল’ শব্দটা হঠাৎ আক্রান্ত করে বসল রিয়াকে।
আবেগের জোয়ারে ঘটে যাওয়া নিজ জীবনের ভুলের ঘোড়াটা দুম করে ছুটে এসে সামনে দাঁড়াল।
অফ হয়ে যেতে থাকে রিয়া। লোডশেডিং শুরু হয়ে গেছে, মনের বাতির আলো কমতে থাকে।
মুনা আলো বাড়াতে চায়, আবার রিয়াকে চাঙা করতে চায়। জমে উঠবে এমন আলাপে ওকে টেনে আনতে চায়।
রিয়াকে খোঁচা দিয়ে মুনা বলল, কেমিস্ট্রির টিচার কি বুয়েটের ছাত্র?
রিয়া উত্তর না দিয়ে পারল না। উত্তরে হালকা হাসির ঝলক ভেসে ওঠে, হ্যাঁ। বুয়েটের ছাত্র।
শক খেলেন যেবু আপা। বুঝতে পারে মুনা। শক খেলেও মুখে তার ম্লানহাসি ফুটে থাকে। ভুল হতে পারে এমন একটা অনুষঙ্গ সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেছে।
মুনা মনে মনে ভাবতে লাগল, রিয়া কি কুসুমকে ঈর্ষা করছে। কুসুমের কথা শুনে জমে গেল কেন ও? এমন তো হওয়ার কথা না।
কুসুমের মায়ের আচরণ কাউকে বলেনি রিয়া। নিজের মনে হজম করেছে সব। ওর মায়ের আচরণই নিজের মনে খুঁত ঢুকিয়ে দিয়েছে। কুসুমের জন্য ঈর্ষা নেই। রাগ নেই। নেতিবাচক মনোভাব নেই। কীভাবে সে বোঝাবে মুনাকে, জানে না। তবে মুনার মনের ভাষা যেন পড়তে পারছে ও। পড়ে নিজে আরও গুটিয়ে গেল। আরও সেঁটে গেল।
যেবু আপা দমে যাওয়া পরিবেশে আলো জ্বালালেন আবার। চলো রিয়া, তোমার ঘরে যাই।
রিয়া ফিরে এলো নিজের মাঝে। নিজের আনন্দের জগৎ হচ্ছে তার নিজস্ব ঘর। ঘরটা মনের মতো সাজিয়েছে ও।
রিয়ার ঘরে পড়ার টেবিলের ওপর রয়েছে ঝাড়বাতির আদলে একটি বড়ো ল্যাম্প। বেড সাইড টেবিলের ওপর খাটের দুপাশে দুটো অপেক্ষাকৃত ছোট ল্যাম্প। রাতের বেলায় আধো আলো আধো ছায়ার অপূর্ব এক আবহ তৈরি হয় ঘরের ভেতর। খাটের উলটো দিকে রয়েছে বেশ বড় একটা আয়না। আয়নার প্রতিবিম্বে ঘরের পরিধি বড় লাগে, খোলা লাগে মনের জানালা।
পড়ার টেবিল বেশ ফিটফাট। গোছানো।
ওর ঘরে ঢুকেই মুগ্ধ হয়ে গেলেন যেবু। টেবিলের সামনে থেকে চেয়ার টেনে বসলেন।
মুনা ও রিয়া দাঁড়িয়ে থাকে সামনে। ওদের দিকে মুখ তুলে তাকালেন তিনি।
শান্তি ঝরে পড়তে থাকে তার কথা থেকে।
এত সুন্দর গোছানো ঘর কম দেখেছি আমি! ধন্যবাদ তোমাকে।
রিয়া লজ্জা পেল।
মুনা বলল, আপা, আরও অনেক ধন্যবাদ জানাতে হবে রিয়াকে। ধৈর্য ধরুন। রিয়া অসাধারণ গুণবতী। গুণবতীর গুণ দেখতে পাবেন ধীরে ধীরে।
যেবু আপা বললেন, বুঝেছি।
রিয়া বলল, আপা, মুনা আমার জানের জান ফ্রেন্ড। এজন্য গুণের কথা বলছে। গুণের আড়ালে চুনও থাকতে পারে। জ্বালিয়ে দিতে পারে আপনার ভালো লাগা।
যেবু চোখ তুলে তাকালেন। রিয়ার এখনকার মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করে মনে হলো, রিয়া ভুল বলেনি। কোথাও গোপন কষ্ট লুকিয়ে আছে। সুযোগ পেলেই কষ্টের তালা খুলে যাবে। ঝরতে থাকবে কষ্টের ধারা।
যেবু এবার টিচারের ভূমিকায় ফিরে এলেন।
রিয়ার ইংরেজি বইটা নিলেন হাতে। সিলেবাসটা বুঝে নিয়ে ওর পড়ার প্রোগ্রেসটা জেনে নিলেন। বুঝতে পারলেন নিজের পরিকল্পনামতো এগোতে হবে। রিয়া যেন ইংরেজিতে চমকপ্রদ রেজাল্ট করতে পারে, নজর রাখতে হবে। মনপ্রাণ ঢেলে রিয়ার সঙ্গে মিশতে হবে।
অপূর্ব মায়াবতী তরুণীর জন্য ভেতর থেকে একধরনের ডাক অনুভব করলেন তিনি। বুঝলেন, এই ডাক কল্যাণের, মঙ্গলের। এই ডাক সফলতার।
যেবু আপা চলে গেছেন। রিয়াকে পড়ানোর নিজস্ব স্টাইল নিয়ে কথা বলে গেছেন।
মুনা ও রিয়া এসেছে বায়োলজি ম্যাডামের বাসায়।
ম্যাডাম বললেন, এখন তো কোনো স্টুডেন্ট নিচ্ছি না আমি।
রিয়া বলল, ম্যাডাম স্পেশাল রিকোয়েস্ট। রাখতে হবে। আপনার নিয়ম ভঙ্গ করে হলেও রাখতে হবে। বায়োলজিতে মুনার ভালো রেজাল্ট চাই আমরা। এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ। মুনার ভালো রেজাল্ট হবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা।
ম্যাডাম অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন, প্রতিবাদের ভাষা?
জি ম্যাডাম।
দুজনকে নিয়ে ভেতরে গেলেন ম্যাডাম।
ওদের কথা শুনলেন। শুনে হতবাক হয়ে গেলেন। শিক্ষক হিসেবে লজ্জাবোধ করলেন। ছোট্ট করে জবাব দিলেন, দেখব মুনাকে। স্পেশাল অ্যারেঞ্জমেন্টে দেখব। তুমি ভেবো না। আশ্বস্ত করলেন রিয়াকে।
চলবে...
এসইউ/জিকেএস