সৈয়দ আনোয়ার রেজার চারটি কবিতা
ক্রোধ
পরাজিত হয়েছি আমি বারবার
ক্ষত-বিক্ষত হৃদয় পরীক্ষাগার,
অভিমানে পথচলা স্বভাববশত
এই মননে চলছে যুদ্ধ স্বভাবত।
মিলন মোহনায় ভাঙন আক্রোশ
লিখতে গিয়ে সতত হয়েছি বেহুঁশ,
মৃদু কষ্টে হৃদয়ে ছোঁয় উত্তাল তরঙ্গ
সংবেদী জীবনে চেয়েছিনু অনুষঙ্গ।
তীব্র অসন্তোষে বাড়ে রক্তচাপ
প্রকৃত ভালোবাসায় হয় না পাপ,
আবেগময় কষ্টের দুর্লভ আশা
কৃপায় সৃষ্টি অন্তঃকরণে বাসা।
আমি সত্যের উপর অবিচল
অপরাহ্ন গোধূলী রাঙা টলমল,
উজ্জ্বল বদনে প্রণয় অটল
নিরবচ্ছিন্নতায় ঝরছে বাদল।
****
নয়না
তুমি এলে, হৃদয় আকাশে ছেঁয়েছে তারা
তোমার দৃষ্টিপথের অন্তরালে বাঁধা এ মন
কতটা ভালোবাসলে তৃপ্তিতে দেবে সাড়া
ততটা স্রষ্টার কাছে বিনম্রে করবো পণ
তোমার রূপের মোহনায় আমি অন্ধ
অন্তরজয়ী হয়ে থাকবো শত জনম
প্রেমানন্দের বাহুবন্দনে হবো আবদ্ধ
ভুলে যাবো প্রেমহীন পুরোনো জীবন
মোর স্বর্গসুখের গহীনে অপরূপ স্বপ্ন
শিশির বিন্দুর মতো সোহাগী প্রভাত
মৃধু জ্যোৎস্নামাখা অপূর্ব প্রণয়ী রাত
তোমাতেই খুঁজি সুখ, তোমাতে নাজাত।
কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে তৃষ্ণার্থ তানপুরাটা
কানে এসে দেবে আলতো ধ্বনী
ঘুম শেষে পাশে এসে বসবে সোহাগিনী
তুমিই মোর নয়না জীবনের রানী।
****
স্মৃতির পাতা
দুরন্ত শৈশব ফুটন্ত বাস্তব
সবার জীবনে আসে,
পানিতে ঝাপ, গোল্লাছুট
নয়ন দৃশ্যে ভাসে।
সাথীদের নিয়ে পুতুল বিয়ে
খেলেছিনু হাঁড়ি-পাতিল,
ঝগড়া-ঝাটি বাক-বিতণ্ডা
সবকিছু হয় বাতিল।
মার্বেল হাতে, সন্ধ্যা ও প্রাতে
জননীর হাতে ধরা,
কলি ও পলি সহসা এসে
দরজায় নাড়লো কড়া।
এসব দিন হবে না বিলীন
স্মৃতির পাতায় গাঁথা,
তাড়িয়ে বেড়ায় ইচ্ছেঘুড়ি
হারানো দিনের কথা।
****
স্বপ্নে দেখা চাঁদ
স্বপ্নের কি দাম, যদি চোখ খুলে না পাই কাছে?
আকাশের কি দোষ, রংধনু আঁকে বৃষ্টির ফাঁকে।
বারিধির তরে কষ্টে ম্লান, তরঙ্গে সাজে মন বিবাগী
বনের চারুতা বনলতা আর নীল সাদা ছড়ায় কেতকী।
বাহুডোরে শপে দিলাম আমার এই তনুমন
স্পর্শকাতরে গুনছি প্রহর আসবে কবে এই ক্ষণ
যেদিকে তাকাই দেখি মনোহর মুখ ঘরে-বাইরে
ভালোবাসা দিতে চাই নিরবধি থাকি যতটাই দূরে।
বিষাদসিন্ধু পাড়ি দেব ভালোবেসে দিন-রাত
রাত জেগে দেখব প্রাণোচ্ছল হাসিপূর্ণ চাঁদ
ভোরের মৃদু দীপ্তি, জানালার রন্ধ্রে দেবে উঁকি
রক্তিম ওষ্ঠে কপাল ছোঁব বুকে টেনে নিয়ে সখি।
আমি কাল্পনিক প্রহরীর আঁচলে ঢাকা বদন
যতনে রাখিব ইচ্ছেঘুড়ি, ভালোবাসব শত জনম
মুখেই যদি বলি অনুষঙ্গের সব আলাপন
নয়না কীসের তরে? অবুঝ মন তাই দেখে যে স্বপন।
এসইউ/জিকেএস