অদ্ভুত গোলাপ বাগান

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০১ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০২১

নুসরাত সুলতানা

ফ্রান্সের মেন্টন শহরের উপকণ্ঠে আছে সুন্দর ছোট্ট ছিমছাম একটা পাহাড়ি গ্রাম, নাম গোর্বিও। এই গ্রামের একদম শেষ প্রান্তে থাকে ম্যারি আর তার দাদু ডিউক।
পরিত্যক্ত বাড়িটি ফাঁকাই পড়েছিল। গ্রামের সবাই জানতো, গত বিশ বছর ধরে কেউ থাকে না বাড়িটিতে।
বাড়ির মালিক মারা গেছেন প্রায় ২২ বছর। তারপর তার ছেলে দুই বছর একজন পাহারাদার রেখেছিল।
পাহারাদার একবার জ্বরে ভুগেছিলেন প্রায় দুই সপ্তাহ।
এরপর বাড়ি চলে যায়। আর এর মধ্যে বাড়ির মালিকের ছেলেকেও কেউ আসতে দেখেনি।
তারপর থেকে পরিত্যক্তই ছিল বাড়িটি।

এক সকালে ম্যারি আর তার দাদু ডিউক এসে ওঠে বাড়িতে। তারা সুন্দর করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে গোছাতে শুরু করে বাড়িটি। দেওয়ালে সুন্দর সুন্দর দৃশ্য এঁটে দিয়েছে। আছে অনেকেগুলো বড় বড় ফুলদানি আর মনোরোম সব বাহারি রঙের পর্দা। কিন্তু আলো একেবারেই অপ্রতুল। ম্যারি আর ডিউক কেউই আলো তেমন পছন্দ করে না। গ্রামের অতি উৎসাহী যে দুয়েকজন ম্যারি আর ডিউকের সাথে দেখা করতে গেছে, তাদের ডিউক জানিয়ে দিয়েছে তারা বাড়ির মালিকের যে ছেলে আমেরিকায় থাকে তার অনুমতি নিয়েই থাকতে এসেছে। এরপর আর গ্রামবাসী তেমন আগ্রহ দেখায়নি।

ম্যারি একজন কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ে। বয়স ষোলো-সতেরো বছরের মতো হবে। কৃষ্ণাঙ্গ হলেও ম্যারির গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। তার চুলগুলো ঘন কালো আর কোঁকড়া, নাক তেমন মোটা না। বড় কালো চোখ খুব সহজেই আকর্ষণ করে। ম্যারি গোর্বিও গ্রামে আসার দুইদিন পর থেকেই মেন্টন শহরে একটা বারে কাজ নিয়েছে। সুন্দরভাবে সেজেগুজে, সুন্দর পরিপাটি পোশাক পরেই ম্যারি কাজে যায়। সবার সাথেই ম্যারি হেসে হেসে কথা বলে, কিন্তু ২২-২৫ বছরের যেসব শেতাঙ্গ যুবক তার সাথে বা কোনো কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ের সাথে ইভটিজিং করে, তাদের সাথেই ম্যারির আরও সখ্য তৈরি হয়। ম্যারি তার বাড়িতে তাদের কফি খাওয়ার দাওয়াত দেয়।

ইদানীং ম্যারি বাড়ির পেছনে তৈরি করছে একটা গোলাপ বাগান। মাত্র তিনটি গাছ লাগিয়েছে এ যাবৎ। একটি গাছে একটাই বড় গোলাপ, আর কোনো শাখা নেই। আর গাছে কোনো কাঁটাও নেই।

গোর্বিও গ্রামে ঘটে গেছে একটা অদ্ভুত দুর্ঘটনা। একটা পরিবারে বেড়াতে এসেছিল ২৩ বছরের যুবক হ্যারিস। ম্যারি একদিন বেশ আকর্ষণীয় শর্ট স্কার্ট আর স্লিভলেস পরে কাজে যাওয়ার সময় হ্যারিস ম্যারিকে টিজ করছিল। গ্রামের দুয়েকজন যুবক সেটা দেখেছে। উত্তরে ম্যারি চটে না গিয়ে হ্যারিসকে তারপর দিন তাদের বাড়িতে কফির দাওয়াত দিয়েছে। এরপর দিন সন্ধ্যা থেকে হ্যারিসকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

ম্যারির দাদু ডিউক আর ম্যারি দুজনই ফিশ ফ্রাই, জুস আর বিয়ার খেতে পছন্দ করে। রান্না করা খাবার তারা কখনোই খায় না। কিন্তু অতিথিদের জন্য কেক, কফি, চকলেট সবই প্রস্তুত থাকে। সপ্তাহান্তে কেউ না কেউ আসেই ম্যারির বন্ধুরা। ম্যারি সাধারণত একজন অতিথি আসা পছন্দ করে। কিন্তু একই সাথে একদিন আসে ফ্লয়েড আর ফ্রাংক। ম্যারি ডিউককে বলেছে, দাদু দুজনই আমার খুব স্পেশাল অতিথি। ভালো করে কেক, ফল, বিয়ার এসব দাও। ডিউক ম্যারিকে সহাস্যে শুধায়, দুজনই সমান বিশেষ দাদু? ম্যারি বলেছে, হ্যাঁ দাদু। ফ্লয়েডকে দাদুর সাথে গল্পে বসিয়ে রেখে ফ্রাংককে নিয়ে যায় বাগান দেখাতে।
তার দেড় ঘণ্টা পর ফ্রাংককে নিয়ে যায় বাগান দেখাতে। খুব মুগ্ধ হয় ফ্রাংক। বাগানে এখন ২৫টি গাছ আছে, তার ভেতর একটি গাছ কালো। সেদিন রাতে ডিউক ম্যারিকে জিজ্ঞেস করেছে, দাদু ভাই কতদিন কাজে যাবে না। একজন অতিথি আসলেই তিনদিন কাজে যাও না। আজ তো দুজন এসেছে। আজ খুব ধকল গেছে। ম্যারি জানিয়েছে, পাঁচদিন যাবে না।

এভাবেই কাজ, বন্ধুত্ব আর বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করে অতিথি আপ্যায়নে চলে যাচ্ছে সময়। একদিন ডিউক বলে, তুমি কি আগের বারেই আছ দাদু ভাই? ম্যারি জানায়, না দাদু আমি আরেকটা বারে কাজ নিয়েছি এখন। ডিউক বলে, তোমার বাগানে দেখলাম ষাটটি গাছ লাগানো হয়েছে এখন। আর কতটা গাছ লাগাবে? ম্যারি হেসে জানায়, কেন তুমি ফেরার জন্য অস্থির হয়ে গেছ? ডিউক হেসে বলে, আরে না সেরকম কিছু না। ম্যারি যেতে তো হবে আমাকেও তাই না? একশ গাছ হয়ে গেলেই এই গ্রামের সবাইকে ডেকে বাগান উন্মুক্ত করে দিয়ে তুমি আর আমি একরাতে চলে যাব। ডিউক জিজ্ঞেস করে, মাকে আর ছোট ভাইকে দেখতে গিয়েছিলে? ছলছল চোখে ম্যারি জানায়, মা আরও অসুস্থ হয়ে গেছে। আর মরিসকে (ম্যারির ছোট ভাই) হয়তো কোনো মিশনারিজ বা অর্ফান সেন্টারে দিয়ে দিতে হবে। ডিউক বলে, ঠিকানা দিও। আমি একদিন পথচারী হয়ে অনেক কিছু কিনে দিয়ে আসব। ম্যারির চোখেমুখে আনন্দ খেলে যায়।

একদিন কাজ করে ফিরছিল ম্যারি। এরই মধ্যে দুজন শেতাঙ্গ যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে এসে ম্যারির ওপর চড়াও হয়। এগিয়ে আসে শেরন নামের এক যুবক। শেরন তাদের কাছ থেকে ম্যারিকে নিরাপত্তা দিয়ে বাস পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। যেতে যেতে শেরন শুধু জানতে চেয়েছে, তুমি একা যেতে পারবে তো? ম্যারি মিষ্টি হেসে জবাব দিয়েছে, নিশ্চয়ই। এরপর ম্যারি আর শেরন পরস্পরের ভিজিটিং কার্ড বিনিময় করে।

ম্যারি যে বারে কাজ করে তার থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ব্লু অ্যাঞ্জেল নামের একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ম্যানেজার হিসেবে শেরন কর্মরত। একদিন শেরন আসে ম্যারির সাথে দেখা করতে। ম্যারি খুব খুশি হয়। ম্যারি শেরনকে ভদকা অফার করে কিন্তু শেরন মৃদু হেসে জানিয়েছে অনলি বিয়ার। শেরন ম্যারিকে একদিন কফির দাওয়াত দেয়। এভাবেই কয়েকবার দেখা হয়ে যায় ম্যারি আর শেরনের। শেরনের অমায়িক ব্যবহার, বিনয়, ম্যারির খোঁজ-খবর নেওয়া সবই ম্যারির ভালো লাগে।

আগের মতো মদ্যপ, ইভটিজিং করা শেতাঙ্গ যুবকদের সাথে বন্ধুত্ব করা, বাসায় তাদের কফির নিমন্ত্রণ দেওয়া এসবে ম্যারির আগ্রহ কেমন মিইয়ে গেছে। বরং আরও কমনীয় সাজগোজ, শালীন পোশাক পরা, সুন্দর করে চোখে কাজল পরা এসবে কেমন যেন ম্যারি মনযোগী হয়ে উঠেছে। একদিন ডিউক টিপ্পনী কাটে, কি দাদুভাই? ফিরে যাবে নাকি! ম্যারি খুব রেগে যায়; বলে, শুধু ফিরে যাবার কথা বল না তো দাদু। আমি এখন এসব কিছুই ভাবছি না।

হাসপাতাল থেকে ফিরে লুসি শেরনের সব পছন্দের রান্না করতে লেগে যায়। রিটেলস, গৌগেরেস, এসকার্গটস, রাতাতোলে রান্না করে টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে লুসি। ছেলের জন্য এনে রেখেছে পোলো শার্ট, ওয়ালেট, ঘড়ি। আজ শেরনের চব্বিশ বছর পূর্ণ হলো।

চাকরি থেকে ফিরেই শেরন মাকে কোলে তুলে ফেলে।
লুসি আনন্দে কপট রাগ করে বলে, এই তুমি বড় হয়েছ না? লুসি শেরনকে বলে, তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও; খাবে চল। খেতে খেতে মা-ছেলে সারা সপ্তাহের গল্প বলে। লুসির হসপিটালে কোন পেশেন্টের কী অবস্থা? তারপর লুসির কলিগ ব্রাউনিয়া সিস্টারের অসুস্থ ছেলেটা এখন কেমন আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এরকম গল্প বলতে বলতেই শেরন ম্যারির কথা মা লুসিকে বলে। লুসি ম্যারির ছবি দেখতে চায়। কিন্তু শেরন কোনো ছবি দেখাতে পারে না।

এরপরও দুজন অতিথিকে নিয়ে আসে এবং গোলাপ বাগানও দেখিয়েছে। তারপর থেকে দশদিন যাবৎ বসে আছে ঘরে। কোথাও যেতে ইচ্ছা হয় না ম্যারির। কী যেন এক অসহায়ত্ব পেয়ে বসেছে তাকে। দুদিন শেরন গিয়ে খোঁজ নিয়ে এসেছে ম্যারির বারে। বার থেকে জানিয়েছে, ম্যারি দশদিন আসে না।

ম্যারির অফিস থেকে ঠিকানা নিয়ে এক সন্ধ্যায় শেরন আসে ম্যারির বাসায়। শেরনকে দেখে ম্যারি খুব খুশি হয়ে যায়। ম্যারি দৌড়ে গিয়ে শেরনকে জড়িয়ে ধরে। ডিউক ম্যারির কাণ্ডকীর্তি দেখে মুখ বন্ধ করে মিটিমিটি হাসে। ম্যারি শেরনের হাত ধরে ডিউকের কাছে নিয়ে যায়। বলে দাদু ওর নাম শেরন, ও আমার খুব ভালো বন্ধু, খুব ভালো ছেলে শেরন। ডিউক জিজ্ঞেস করে, ভালো বন্ধু নাকি স্পেশাল বন্ধু? ম্যারি জানায়, ভালো এবং অন্তরঙ্গ বন্ধু। ওর জন্য কেক, ফল, চকলেট, ফিশ ফ্রাই, ভালো বিয়ার সব দাও। ডিউক বলে, নিশ্চয়ই দেব। তোমার বন্ধুকে তোমার গোলাপ বাগান দেখাবে না? ম্যারি বলে, আমি না। তুমি দেখিয়ে নিয়ে আসবে।

এরপর শেরনের আর ম্যারির দেখা হয় বারবার কারণে-অকারণে। শেরন প্রায়ই ম্যারিকে নিয়ে কফিশপে যায়, ছোট ছোট উপহার দেয়। ম্যারিও শেরনকে উপহার দেয় মাঝে মাঝেই ওয়ালেট, পারফিউম, সুন্দর সুন্দর কলম। প্রায়ই শেরন আর ম্যারি ঘুরে বেড়ায় বিভিন্ন পার্ক, নদীর পাড়। শেরন একদিন বলে, চল, মায়ের হাসপাতালে গিয়ে মাকে চমকে দেই। ম্যারি বলে, আমি আজকে ভালো কাপড় পরে আসিনি। অন্যদিন লং স্কার্ট আর ফুল স্লিভ টপস পরে আসব, সেদিন যাব।

ডিউক ম্যারিকে জিজ্ঞেস করে, দাদুভাই তুমি এসব কী করছ? এরপর যদি শেরন তোমাকে বিয়ে করতে চায়? তখন কী করবে! ম্যারি বলে, আগে সেরকম কিছু ঘটুক তারপর চিন্তা করব। এখন শেরন আমার খুব ভালো বন্ধু।

ম্যারির সাথে প্রতিদিন দেখা করাটা শেরনের নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। বিভিন্ন লেক, পার্ক, নদীর পাড় সব জায়গায় ঘুরে বেড়ায় দুজন। শেরন ম্যারিকে জিজ্ঞেস করে, ম্যারি আমাকে তোমার কেমন লাগে? ম্যারি দুষ্টুমি করে; কী হিসেবে? ছোট বোনের বর হিসেবে? শেরন ফের বলে, ছোট বোন শব্দটা কেটে দিয়ে উত্তর দাও। ম্যারি বলে, তুমি নিঃসন্দেহে খুব ভালো ছেলে। কিন্তু বলে ম্যারির চোখ ছলছল করে জলে। শেরন বলে, কী হলো ম্যারি? আমি কি তোমাকে আঘাত দিলাম? ম্যারি বলে, হ্যাঁ ভালোবাসার আঘাত দিয়েছ। শেরন ম্যারির হাত ধরে বলে, আমি তোমাকে কখনো কষ্ট দেব না কথা দিচ্ছি। ম্যারি শেরনের কাঁধে মাথা রাখে।

এরপর দুদিন ম্যারি তার কার্যালয়ে যায় না। শেরন খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। কী হলো? আমি ম্যারিকে বুঝতে পারছি না। তৃতীয় দিন ম্যারি যায় শেরনের সাথে দেখা করতে। শেরন জিজ্ঞেস করে, তাকে এত টেনশনে রাখার কারণ কী? ম্যারি বলে, আমি একটু অসুস্থ ছিলাম। শেরন তাকে বলে, ফোনে তো জানাতে পারতে! শেরন ম্যারিকে বলে, আজ ডিনার করে আমি তোমাকে গোর্বিও পৌঁছে দিয়ে আসব।

দুজন মিলে একটা ছোট রেস্তোরাঁর একপাশে বসে। শেরন ম্যারিকে খাবার অর্ডার করতে বলে। আজ তারা গাজরের স্যুপ, ফিশ ফ্রাই, বিয়ার, আর পটেটো ফ্রাই অর্ডার করেছে। খাবার এলে শেরন ম্যারিকে বলে, আজ আমি তোমার সাথে আমার জীবনের কিছু কথা শেয়ার করতে চাই। আমি আমার মায়ের একমাত্র ছেলে। আমার বাবা ছিলেন মদ্যপ এবং জুয়াড়ি। মা বাবাকে অনেক পছন্দ করতেন। তাই বাবার সবকিছু মেনে নিয়েও মা চেয়েছিলেন বাবার সাথে থাকতে। কিন্তু আমার যখন দশ বছর বয়স; তখন বাবা অন্য একজন নারীকে বিয়ে করে চলে যান। বাবা খুব সুদর্শন পুরুষ আর কথাও বলতেন অনেক সুন্দরভাবে। তাই নারীরা তাকে খুব পছন্দ করত। কিন্তু মায়ের সাথে বাবা চরম দুর্ব্যবহার করতেন। সবকিছুর পরেও মা মনে করতেন, আমি বড় হলে হয়তো বা বাবা পরিবর্তন হবেন আর সেদিনের জন্য অপেক্ষা করে ছিলেন। কিন্তু বাবা যখন মাকে ডিভোর্স দিয়ে দেন; তখন মা খুব ভেঙে পড়েন। তখন মায়ের এক বন্ধু জিম কাকা মাকে খুব সাহায্য করেন এবং মনোবল জুগিয়ে যান। একসময় জিম কাকা মায়ের প্রতি খুব দুর্বল হয়ে পড়েন। কিন্তু জিম কাকার ছিল দুই বছরের ফুটফুটে একটি মেয়ে।

মা নিজের জীবনের কষ্ট অন্য একজনের জীবনে আসতে দিতে চাননি। তাই জিম কাকাকে বিয়ে করতে রিফিউজ করেন। জিম কাকা তখন মায়ের সাথে লিভিং করতে চাইতেন। কিন্তু মা ক্যাথলিক খ্রিষ্টান বিয়ে না করে অন্য নারীর স্বামীর সাথে যৌন সম্পর্কে একদমই বিশ্বাসী না। সেই থেকে মা আমাকে নিয়েই বেঁচে আছেন। আর আমার যখন আঠারো বছর বয়স হয়ে যায়, তখন মা আমাকে প্রতিজ্ঞা করান; আমি কোন মেয়ের সাথে যেন বিয়ে বন্ধন বা ফাদারের সামনে গিয়ে সারাজীবন একসাথে থাকার প্রতিজ্ঞা ছাড়া যৌন সম্পর্ক স্থাপন না করি। তাই আজ অব্দি তোমার ঠোঁটে চুমু খাওয়া ছাড়া তোমার বুকেও হাত দেইনি। আমি মায়ের মৃত্যু অব্দি তোমাকে নিয়ে মায়ের সাথে থাকতে চাই। আর মা যেমন সুন্দর; তেমনই অমায়িক তার ব্যবহার। আমার মা বলে বলছি না, তুমি গেলেও দেখতে পাবে। আর হ্যাঁ, আগামী পরশু মা তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছেন। ম্যারি এতক্ষণ নিবিষ্ট মনে শুনে উত্তর দেয়, কিন্তু আমি তো কালো (কৃষ্ণাঙ্গ), তোমার মা আমাকে ছেলের বউ করে নেবেন কেন? শেরন উত্তর দেয়, আমি তো তোমার কথা মাকে বলেছি। আর তুমি যে কৃষ্ণাঙ্গ সেটাও বলেছি। মা বলেছেন, বর্ণবাদের কালো শাপ তোমাকে যেন ছোবল না দেয়। ম্যারি ছলছলে চোখ নিয়ে বলে, পৃথিবীটা তোমাদের মতো কেন না!

সেদিন বাসায় ফিরে ম্যারি ডিউকের সাথে একটা কথাও বলেনি। ম্যারি অনেকক্ষণ ভেবে ভেবে পরে সিদ্ধান্ত নেয়; যা হওয়ার হবে আমি শেরনের মায়ের সাথে দেখা করব। উনাকে আমার ভীষণ দেখতে ইচ্ছা করছে।

নির্দিষ্ট দিনে ম্যারি লং স্কার্ট, ফুল স্লিভ টপস, কানে টপ, চোখে কাজল পরে যায় শেরনের মা লুসির সাথে দেখা করতে। ডাইনিং টেবিলে এসে ম্যারির চোখ কপালে। অন্তত পঁচিশ রকম খাবার প্রস্তুত করেছেন লুসি। ম্যারি শুধু জুস আর ফিশ ফ্রাই খায়। খাওয়া শেষ করে লুসি বলে, তোমার বাসায় আর কে কে আছেন মা? ম্যারি উত্তর দেয়, আমি আর দাদু। লুসি জিজ্ঞেস করে, আমার ছেলে তার জীবনের বিস্তীর্ণ পথে তোমাকে পাশে নিয়ে হাঁটতে চায় তুমি কি রাজি? ম্যারি বলে, শেরনের এই চাওয়া আমার জন্য পরম সৌভাগ্যের। শেরন একজন আলোকিত মানুষ এবং যোগ্য পুরুষ। লুসি হেসে বলে, তুমিও খুব মিষ্টি মেয়ে। তারপর লুসি ম্যারির আঙুলে পরিয়ে দেয় একটা পার্পল রঙের হীরার আংটি। লুসি বলে, এতদিনে আমি ভারমুক্ত হলাম। আমার মাদার ইন ল আমাকে দিয়েছিলেন। আর আজ আমি তোমাকে দিলাম। তুমি দেবে তোমার ছেলের বউকে।

এবার ম্যারি আরও চিন্তায় নিমগ্ন হয়। কী করবে সে? সে কি ফিরে যাবে শেরনকে কিচ্ছু না জানিয়ে? তাহলে তো শেরন আমৃত্যু হয়তো বা কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েদের প্রতারক ভেবে ঘৃণা করতে থাকবে। নাকি সে শেরনের মনে নিজের জন্য ঘৃণার উদ্রেক করবে? আবার ভাবে, নাহ তা হয় না। এবার সে ডিউকের শরণাপন্ন হয়; বলে, দাদু আমাকে বলে দাও আমি কী করব? ডিউক বলে, তুমি সত্যের মুখোমুখি হবে। সত্যেই মুক্তি।

শেরন খুবই উল্লসিত। প্রতিদিনই কিছু না শপিং করছে ম্যারির জন্য। ম্যারির সাথে দেখা করে বলে, আগামীকাল তোমার জন্য গাউন অর্ডার করতে যাব। তুমি আমার সাথে যাবে। ম্যারি চোখে জল আর মুখে হাসি নিয়ে বলে, আচ্ছা যাব। গাউন বানাতে দিয়ে আসে শেরন আর ম্যারি। সাথে পার্লের মালা আর গোল্ড ব্রেসলেট।

‘নাহ আমি আর পারছি না! এভাবে হয় না। আমি বরং আমার মিশন শেষ করব। আজ যে কোনো একটা বারে গিয়ে বিকিনি আর শর্ট প্যান্ট পরে নাচানাচি করব। যদি শেরন এসে এ অবস্থায় আমাকে দেখে ফেলে আরও ভালো।’ এভাবেই নিজের সাথে কথপোকথন করছিল ম্যারি। আজ মেন্টনের সবচেয়ে ব্যস্ত ক্যাসিনো, যেখানে জুয়াড়িরা মেতে ওঠে ভয়ানক জুয়া খেলায়; সেখানে নাচতে চলে যায়। লাল বিকিনি, লাল লিপস্টিক, কালো শর্ট প্যান্ট পরে নেচে যাচ্ছে ম্যারি। ইতোমধ্যে জুটেছে কয়েকজন জুয়াড়ি। এরই মধ্যে মরিস রবার্ট এসে দিয়েছে খোঁচা; কিরে কালা বিল্লি এক রাত কত? ম্যারি ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি দিয়ে বলে, ফ্রি সাথে কফি, বিয়ার, কেক যা খেতে চাও। আমার সাদা পুরুষের সাথে শুতে খুব লোভ হয়। একদিন আসো আমার আমার বাড়ি। রবার্ট এসে ম্যারির স্তনে হাত দিতে নেয়।
এই, এখানে না ডিয়ার। বলে ম্যারি পিছিয়ে যায়।

শেরন হন্যে হয়ে খুঁজছে ম্যারিকে। খুঁজতে খুঁজতে শেরন আসে ম্যারির অফিসে। ম্যারি রবার্টকে সাথে নিয়ে আসে নিজের বারে। শেরন ফিরে যাচ্ছিল নিজের কর্মক্ষেত্রে। এমন সময় রবার্টকে সাথে নিয়ে প্রবেশ করতে দেখে ম্যারির অফিসে। ম্যারির সাজ-পোশাক শেরনকে ধাঁধায় ফেলে দেয়। শেরন এসে ম্যারির সামনে দাঁড়িয়ে বলে, ম্যারি আমি তোমাকে হন্যে হয়ে খুঁজছি।
আর তোমার এই অবস্থা কেন? তেড়ে আসে রবার্ট; বলে, আমার গার্লফ্রেন্ড যা ইচ্ছে পরবে। তাতে তোমার কী? নিজের রাস্তা মাপো। শেরন বলে, তাই, তোমার গার্লফ্রেন্ড? তাহলে ওর হাতের পার্পল কালারের আংটিটাকে আমার পরিচয় জিজ্ঞেস কর। রবার্ট এবার ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। শেরনের শার্টের কলার ধরে বলে, আংটির কিছু বলা লাগবে না। তুমি বল চান্দু। ম্যারি রবার্টের হাত সরিয়ে দিয়ে প্রবল ঝাঁকুনি দিয়ে বলে, শেরনের মা আমাকে এ আংটি দিয়েছেন। তুমি যাও রবার্ট। তোমার সাথে পরে কথা হবে। রবার্ট বলে, আমি তোমাকে দেখে নেব কালা বিল্লি। ম্যারি চোখে হিংস্র চাহনিতে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।

রবার্ট চলে যাওয়ার পর শেরন ম্যারিকে জিজ্ঞেস করে, ম্যারি আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার কি কোথাও ভুল হচ্ছে? ম্যারি বলে, আগামীকাল বিকেলে পার্কে আমি তোমাকে সব বলব। এখন চল কোথাও গিয়ে ফিশ ফ্রাই আর জুস খাব।

সারারাত শেরন ছটফট করতে থাকে। ম্যারি কি তবে অন্য কাউকে ভালোবাসে? এমন প্রতারণা আমার সাথে কেন করল? এসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে শেরন অল্পকিছু সময়ের জন্য শেষ রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে ম্যারির কোলে ফুটফুটে একটা মেয়ে। লুসি তার পাশে হাসিমুখে বসে আছে। হঠাৎ কপালে কারো স্পর্শ। ঘুম ভেঙে দেখে লুসি। মা বলে শেরন লুসির হাত জড়িয়ে ধরে। লুসি বলে, কিরে পাগলা কাজে যাবি না? শেরন বলে, যাব মা। খাবার দাও। লুসি খাবার টেবিলে দিয়ে হাসপাতালে বেরিয়ে যায়।

শেরন বিকেলে পার্কে এসে অপেক্ষা করে ম্যারির জন্য। ম্যারি আসে খুব স্নিগ্ধ সুন্দর সাজে। এসে দেখে শেরনের চোখ কোটরে ঢুকে গেছে। ম্যারি বেশ বুঝতে পারছে কী ঝড় বইছে শেরনের ভেতরে। ম্যারি পাশে এসে বসে শেরনের হাত মুঠোয় পুরে নিয়ে বলে, শেরন আমি এখন যা বলব তার সবটুকু সত্য।

সেদিন অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল বাসায় ফিরতে। রাত এগারোটায় একা সাইকেল চালিয়ে ফিরছিলাম। চার্চের কিছু দূরে যেতেই ছয়জন শেতাঙ্গ যুবক আমার পথ আটকায় আর আমার চারপাশে শিষ বাজাতে থাকে। আর আজেবাজে কথা বলতে থাকে। বলে, বুক দেখ একেবারে কচি, কামড়ে কামড়ে খেতে বেশ মজা হবে। কালা মাগীর ঠোঁটগুলোও বেশ মাংসল। হিপটা দেখ, ডগি স্টাইলে দারুণ মজা হবে! এরপর শুরু করে ওরা টানা-হেঁচড়া। আমার কাপড় ছিঁড়তে থাকে ওরা। আমি প্রথমে ওদের খুব অনুরোধ করি, দয়াকরে আমাকে বাড়ি যেতে দাও। আমার মায়ের ব্রেস্ট ক্যানসার। আমার ভাইটার বয়স কেবল সাত বছর। ওরা আমাকে মারতে মারতে বলে, চুপ কর কালি মাগী! ছয় ছয় জন সাদা পুরুষ তোকে ভোগ করবে, এতেই তো তোর আনন্দ হওয়া উচিত। তোরা কালোরা এই সুন্দর পৃথিবীটাকে নোংরা করেছিস। এরপর ওরা ছয়জন আমাকে ধর্ষণ করে। আর এতে ওদের সাধ মেটেনি, ওরা আমাকে কণ্ঠরোধ করে হত্যা করে রেখে যায়।

পরদিন খুব সকালে চার্চের এক সিস্টার ওইদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই ফুজি সিস্টার, আমার অফিসের আইডি কার্ডের মাধ্যমে আমার অফিসে যোগাযোগ করেন। এরপর আমি যে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কাজ করতাম; তারা মাকে আর ভাইকে খবর দেয়। চার্চের ফাদারের সহযোগিতায় আমাকে সমাহিত করা হয়। আমার অফিস থেকে মাকে বলা হয়, আপনি কোনো কেস করবেন কিনা? আমার মা বলেন, আমি কাকে সন্দেহ করব? আর এসব করে কি আমি আমার মেয়েকে ফিরে পাব? সেদিন আমার ভাইটি সারারাত চিৎকার করতে থাকে; বলে, আমাকে কে চকলেট কিনে দেবে? ও ম্যারি দি ফিরে আস। বাবাও চলে গেলেন, তুমিও চলে গেলে আমার কী হবে! মা চিৎকার করেও কাঁদতে পারেনি। ভাইকে বুকে নিয়ে নীরবে শুধু চোখের জল ফেলেছে আর বলেছে, ঈশ্বর আছেন। তিনি আমাদের দেখবেন।

ওই কান্না আমি সহ্য করতে পারিনি। আমি ঈশ্বরকে বললাম, আমাকে কিছুদিনের জন্য পৃথিবীতে যাওয়ার অনুমতি দাও আর বিশেষ ক্ষমতা দাও। ঈশ্বর জানতে চাইলেন, বেশ! কী ক্ষমতা চাও বলো। আমি বললাম, আমি বর্ণবাদী শেতাঙ্গ যুবকদের ওপর প্রতিশোধ নেব।

ওরা যেই আমাকে ধর্ষণ করতে আসবে, আমি সাপ হয়ে পেচিয়ে ধরে ওদের গোলাপ গাছ করে দেব। আমাকে সেই ক্ষমতা দাও। ঈশ্বর একজন দেবদূতকে বলেন, ম্যারির যোনিতে ঢুকে লক্ষ-কোটি সাপের ভ্রুণ পুতে দিয়ে আসো। দেবদূত এক প্রকাণ্ড সাপ হয়ে আমার যোনিতে ঢুকে যায় আর কোটি কোটি সাপের ভ্রুণ রেখে আসে আমার জরায়ুতে। আমি বারে কাজ নেই এ কারণেই। যখনই কোনো বর্ণবাদী শেতাঙ্গ যুবক পেয়েছি নিয়ে গেছি বাড়ি অব্দি। আর বাড়ির পেছনে গিয়ে আমিই প্রলুব্ধ করেছি। যখনই আমার সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হয়েছে; তখনই ছোট ছোট অসংখ্য সাপ বের হয়েছে। তারপর ভয় পেয়ে যেই পালাতে চেয়েছে, আমিই মস্ত সাপ হয়ে সমস্ত শরীর জড়িয়ে ধরে কানে যেই কামড়ে দিয়েছি; অমনই গোলাপ গাছ হয়ে গেছে।

শেরন চোখভরা জল নিয়ে জিজ্ঞেস করছে, যারা তোমাকে রেপ করেছিল; তাদের কাউকে পেয়েছিলে? ম্যারি বলে, তুমি তো দাদুর সাথে গোলাপ বাগানে গিয়েছো। দুটো কালো গোলাপ দেখেছো না? শেরন বলে, হ্যাঁ। ম্যারি জানায়, ওই দুজন আমাকে রেপ করেছিল।

তারপর ম্যারি এবং শেরন কিছুক্ষণ চুপ থাকে। ম্যারি শেরনের কাছে ঘেঁষে বসে জিজ্ঞেস করে, তোমার কি আমাকে ভয় বা ঘৃণা হচ্ছে? শেরন বলে, এসব কিছু হচ্ছে না। তবে একটি বিষয় খুব জানতে ইচ্ছে করছে। ম্যারি বলে, জানি; বলছি।

তারপর ম্যারি শেরনকে বলে যায় চোখের জল ফেলতে ফেলতে, শেরন তোমার সাথে পরিচয়ের আগ অব্দি আমার বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিল, অধিকাংশ শেতাঙ্গ কৃষ্ণাঙ্গদের ঘৃণা করে। তারপর তোমার বিনয়, আমার প্রতি সম্মান এবং সর্বোপরি কৃষ্ণাঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও আমাকে বিয়ে করতে চাওয়া এসব কিছুই তোমাকে ভালোবাসতে আমাকে বাধ্য করেছে। আর আমি কেবল আত্মা হলেও আমার বয়স সতেরো। প্রেম, ঘর-সংসার এসবের কিছুর সাথেই জীবদ্দশায় আমার পরিচিতি ঘটেনি। তাই এসব পেতে আমার ভীষণ লোভ হচ্ছিল। দু-একবার ভেবেছি, তোমাকে না বলেই স্বর্গে ফিরে যাব। কিন্তু তাতে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি তোমার ঘৃণা জন্মাতো আর তোমার সাথে প্রতারণাও করা হতো। আমি তোমার ক্ষতি চাই না কখনো। তুমি অনেক কষ্ট পাবে। তাই সেটা করতে পারিনি। আবার এও ভেবেছি যে, আমি উধাও হয়ে যাব আর তুমি যাকে বিয়ে করবে তার ভেতরে আমি প্রবেশ করে তোমার কাছে থেকে যাব। কিন্তু আবার ভেবেছি, তোমার সন্তানের মা তো হতে পারব না। আর তাছাড়া আমি তো ঈশ্বরকে কথা দিয়েছি যে, আমি ফিরে যাব। শেরন বলে, তোমার ছোট ভাইয়ের দায়িত্ব আমার আর যতদিন বেঁচে আছেন, তোমার মাকেও আমি দেখব। তুমি কী করতে চাও? ম্যারি শেরনের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলে, আমি স্বর্গে ফিরতে চাই না। এই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও থেকে যেতে চাই; গাছ, ফুল, নদী, পাহাড় যে কোনো কিছু হয়ে। তুমি তোমার বাচ্চা এবং স্ত্রী নিয়ে সেখানে যাবে, আমি তোমাদের দেখব দুচোখ ভরে।

শেরন তারপর যায় চার্চে ফাদারের সাথে কথা বলতে। সাথে করে নিয়ে যায় ম্যারিকেও। ফাদার সবকিছু শুনে ডাকেন ম্যারিকে চার্চের ভেতরে। ফাদার বলে, কাম অন মাই চাইল্ড। অনেক কষ্ট পাচ্ছ তুমি! বল, আমি তোমার জন্য কী করতে পারি? শেরন বলে, ফাদার আপনি ঈশ্বরকে বলুন আমি স্বর্গে ফিরতে চাই না। আমাকে বরং রোজমেরি পার্কের সাথে একটা সুপেয় পানির হ্রদ করে দিন। যে পানি পান করলে যুগলদের ভেতর সৃষ্টি হবে প্রেম এবং সঙ্গম তৃষ্ণা। তারপর পৃথিবীতে জন্ম নেবে বিশুদ্ধ মানব প্রাণ; যাদের ভেতর থাকবে না কোনো বর্ণবাদ, সাম্প্রদায়িকতা। তারা নিঃশঙ্ক চিত্তে ভালোবাসবে সব মানুষকে, সব শিশু, বৃদ্ধ, ফুল, পাখি সবাইকে। সব শুনে ফাদার বলেন, তোমরা দুজন আগামীকাল আসো। আজ গভীর রাত অব্দি আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করব।

পরদিন শেরন আর ম্যারি আসে চার্চে। ফাদার দুজনকে দেখেই বুকের দুপাশে চেপে ধরে দুজনের কপালে চুমু দেন আর বলেন, মাই সুইট চিলড্রেন! ম্যারি কাঁদতে কাঁদতে বলে, ফাদার বলুন ঈশ্বরের ইচ্ছা। ফাদার জানান, আমি স্বপ্নে দেখেছি; ঈশ্বর তোমার ইচ্ছায় সম্মতি দিয়েছেন। কিন্তু নির্দোষ ব্যক্তিদের তোমার গোলাপ বাগান থেকে অবমুক্ত করতে হবে। ম্যারি জিজ্ঞেস করে, নির্দোষ বুঝব কীভাবে? ফাদার বলেন, আমি বুঝতে পারব গোলাপের গন্ধ শুকে। আমাকে তোমার গোলাপ বাগানে নিয়ে চলো।

ফাদার, ম্যারি এবং শেরন আসে গোলাপ বাগানে। ফাদার গন্ধ শুকে দেখেন কালো গোলাপ দুটিতে অদ্ভুত দুর্গন্ধ। আর একটা আছে কমলা রঙের গোলাপ, সেটা থেকেও গন্ধ আসছে। কিন্তু বাকিগুলো থেকে গন্ধ আসছে না। ফাদার ম্যারিকে আর শেরনকে বলেন, শেরন তুমি ম্যারিকে বুকে জড়িয়ে ধরবে। তখন ম্যারির চোখে যে জল আসবে, সেটা ছুঁয়ে দিলেই ওরা আবার মানুষ হয়ে যাবে। দুটি দুর্গন্ধযুক্ত কালো গোলাপ রয়ে যায়; পৃথিবীতে বর্ণবাদে খুনের চিহ্ন হিসেবে আর একটা কমলা গোলাপ থেকে যায় বর্ণবিদ্বেষের চিহ্ন হিসেবে।

এরপর ম্যারি আর শেরনকে নিয়ে ফাদার যান রোজমেরি পার্কের ভেতর। এক কোণে গিয়ে ফাদার শেরনকে বলেন, তুমি ম্যারিকে জড়িয়ে ধরে প্রগাঢ় আলিঙ্গন করে ওর ঠোঁটে গভীর চুমু দেবে আর আমি ম্যারির হাত দিয়ে আশীর্বাদ করব। অত্যন্ত আনন্দের সাথে ম্যারির প্রস্থান হবে আর গজিয়ে উঠবে সুপেয় পানির হ্রদ। আলিঙ্গনের আগে ম্যারি পার্পল কালার আংটি খুলে শেরনের হাতে দেয় আর বলে, আমি অত্যন্ত আনন্দের সাথে কৃতজ্ঞ চিত্তে চলে যাচ্ছি কিংবা জন্ম নিচ্ছি ঝরনা হিসেবে। তুমি একটুও কষ্ট পেয়ো না শেরন। শেরন ফাদারের দিকে তাকায়। ফাদার হ্যাঁ সূচক সম্মতি দেন আংটি নেওয়ার জন্য।

পরের রোববার শহরের সব মানুষ উপচে পড়ে নতুন সৃষ্টি হওয়া ঝরনা দেখার জন্য। মেন্টনের মেয়র ফাদারকে নিমন্ত্রণ জানান ঝরনাটি সবার জন্য অবমুক্ত করার জন্য। ফাদার বলেন, এই ঝরনা ঈশ্বরের বিশেষ কৃপা। এই কিছুদিন আগেই আমরা ম্যারি নামের একটা প্রাণবন্ত কিশোরীকে হারিয়েছি। তার নামে ঝরনাটির নাম হোক ম্যারি। আর ঝরনার পাশে বানানো হবে ম্যারির একটা মূর্তি। কিছুদিন পর দেখা যায়, ম্যারির হাস্যোজ্জ্বল মূর্তি। ডানহাতের অনামিকায় শোভা পায় একটা পার্পল রঙের আংটি।

লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।