চোখে আমার সমুদ্রজল
রাওয়া কনভেনশন হলে একটা বিয়ের দাওয়াত ছিল। আমার যাওয়ার মোটেও ইচ্ছে ছিল না। শাওন জোর করে নিয়ে গেল। এইসব চোখ ধাধানো অনুষ্ঠান আমি ঠিক এড়িয়ে চলি। ঠিক কেন যেন এসবে বেমানান লাগে। একবার মিরপুর এক নম্বরের চাইনিজে একটা বিয়ের দাওয়াত ছিল। ঘনিষ্ঠ ছোটবোনের। আমি বিয়েতে ঠিকই গেলাম। কিন্তু কিছুই খেতে পারলাম না। নিজেকে অবাঞ্ছিত মনে হচ্ছিল। আমি লজ্জায় মরমে মরে যাই। বিয়ের অনুষ্ঠানেই কোত্থেকে সেই ছোটবোন এসে আমাকে হাত ধরে খাওয়াতে নিয়ে গেল। আমি মাঝখানে বসে খেতে বসেছি, একদিকে বর আর অন্যদিকে সেই মেয়ে যার কি না বিয়ে হয়ে গেল। বর স্বামীটি বেশ মিশুক, হাসিখুশি টাইপের। সিটি ব্যাঙ্কের কোন ব্রাঞ্চের যেন ম্যানেজার। মোটেও অহঙ্কার নেই, গাম্ভীর্য নেই। সদালাপী, তারপরেও আমি যেন সহজ হতে পারছিলাম না। রাওয়া কনভেনশন হলে এসেছি সন্ধ্যায়। খারাপ লাগে নি। অন্তত শাওন সবসময় আমার সাথেই ছিল। শাওনের ভাইয়ের বিয়ে। ভাই ব্রিটেনের ব্রিকলেনের ব্যবসায়ী। ব্রিকলেনে কয়েকটা রেস্টুরেন্ট আছে। বেশ টাকা পয়সাওয়ালা। সিলেটিরা মূলত সিলেটের মেয়েকেই বিয়ে করে। এই ছেলের স্ত্রী চাঁদপুরের। বাবা নৌবাহিনীর অফিসার।
যাইহোক। খাওয়াটা বেশ ভালো হয়েছে। খাওয়ার শেষে বোরহানিটা ভালো হলেই আমার জন্য তৃপ্তিদায়ক খাবারের পর্বটা পূর্ণতা পায়। কিন্তু কাণ্ডটা ঘটলো ঠিক যখন বের হবো। সামনের টেবিল থেকে এক রূপবতী মেয়ে হাত ইশারা করে ডাকছে।
আমার নিজের জামা কাপড়ের প্রতি চরম উদাসীনতা কাজ করে। আলসেমিও বলা যেতে পারে। নিজেকে এই ধরনের জায়গাগুলো থেকে আড়াল রাখার চেষ্টা করি। ইস্কাটনে একবার এক কমিউনিটি হলে কিসের দাওয়াতে গেছি, এক মধ্যবয়সী মহিলা ডাক দিলেন, ভালো মনে গেলাম।
‘এই একটু ফিরনি দিতে পারবি?’
তুই? মেজাজটা গরম হতে গিয়ে ঠাণ্ডা করে ফেললাম। তাই বলে তুই?
-আমি তো ওয়েটার না, ওদের ড্রেস আছে... ড্রেস দেখলেই চিনতে পারবেন কারা ফিরনি দেয়। সেই সময় একজন ওয়েটার চলে এল। ঠিক একই ঘটনা একবার এক রেস্টুরেন্টেও ঘটেছিল।
দাওয়াত জিনিসটা এক সময় খুব প্রিয় ছিল। কিন্তু এইসব দাওয়াত, পার্টির জন্য আলাদা ড্রেস, আলাদা পরিপাটি এখন আর ভালো লাগে না।
সুন্দরী মেয়ে ডাকছে। যাব কি না চিন্তা করছি। দেখা গেল, গেলাম, তারপরেই মেয়ে বলছে-
‘এই আমাকে একটা টিস্যু দে তো...।’
কাছে এগিয়ে গেলাম।
‘আমাকে ডাকছেন?’
‘তুমি সমুদ্র না?’
‘জ্বি, আপনাকে চিনতে পারছি না’
‘আরে গর্দভ, আমি ফাইজা। ফার্মগেটে একসাথে কোচিং করতাম....। ওই যে আমি অনেক জ্বর নিয়ে ক্লাসে এলাম....।’
‘হ্যাঁ মনে পড়ছে। ফাইজা। কি খবর?’
ফাইজার চেহারায় এত পরিবর্তন এসেছে? স্বাস্থ্য ভালো হয়েছে। হাইট ও বেড়েছে নাকি? নাকি প্রসাধনের কারণে চিনতে পারি নি!
‘তোমার কি খবর বলো, কি করছ?’
‘এইতো এক পত্রিকায় কাজ করি। বাকিটা সময় ঘুরে বেড়াই... কিংবা ঘুরে বেড়াই বাকিটা সময় পত্রিকায় কাজ করি।’
‘কি আশ্চর্য তোমার সাথে এইভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবতে পারি নি। শোনো আমি, সিএমএইচে আছি। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরেই থাকি। একদিন আসো।’
ফাইজা আমার হাতে একটা কার্ড ধরিয়ে দেয়। রীতিমতো ডাক্তার। এমবিবিএস, ইন্টার্ন শেষ করে সিএমএইচের ডক্টর।
‘শোনো কার্ডে ফোন নম্বর দেওয়া আছে। একদিন ফোন করে চলে এসো। আমি ঠোঁটে হ্যাঁ সূচক হাসি এনে চলে এলাম....।
ফাইজা আমাকে মনে রেখেছে। আগের চেয়ে যথেষ্ট ম্যাচিউরড হয়েছে। চেহারায় কী কমনীয়তা এসেছে। ফার্মগেইটের কনকর্ড টাওয়ারে তখন আমরা ভার্সিটি ভর্তি কিংবা মেডিকেল ভর্তি কোচিং করছিলাম। আমি সামনের দিকে বসার মতো ছেলে না। ক্লাস করি আর মাঝে মাঝেই মনোযোগ চলে যায় ফার্মভিউ মার্কেটের বিশাল বিশাল স্পিকারে বেজে যাওয়া গানে। জনপ্রিয় সব হিন্দি ইংরেজি, বাংলা গান বেজে যায়। খুব প্রিয় গানের সুর কানে আসতেই কান চলে যায় পেছনে। এমনই ইন্টার পরবর্তী বেসামাল দিনগুলোতে ফাইজা একবার জ্বর নিয়ে ক্লাসে এলো। ক্লাসের মাঝপথে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। সেই সময় স্যার ছিল না। বুঝতেছিলাম না কি করবো। শুধু ফাইজাকে পাঁজাকোলা করে লিফটে নিয়ে গেলাম। ছয়তলা। এরপরে নিচে নেমেই সিএনজি পেয়ে গেলাম। আমার সাথে ছিল পল্লব। দুই জন মিলে ওকে গ্রিনরোডের একটা ক্লিনিকে নিয়ে গেলাম। ফাইজা নিউমোনিয়া বাঁধিয়ে ফেলেছিল সম্ভবত। ওর মাকে টেলিফোন করে খবর দিয়ে আনা হয়। ওদের বাসা ছিল তখন মাদারটেক। বাবা জাহাজে চাকরি করে। সেইসময় সেনেগাল নাকি কোথায় ছিল। যাই হোক, সেদিন আমি আর পল্লব ফাইজাকে রেখে চলে যেতে পারি নি। পল্লবের বাসা মিরপুর। পল্লব বাসায় জানিয়ে দিয়েছিল বন্ধু অসুস্থ রাতে হাসপাতালে থাকতে হবে। সে রাতে আমি আর পল্লব ছিলাম। ফাইজার পাশে সারারাত মা ছিল। মধ্যরাতে একবার ঘুম ভেঙে ফাইজা আমাদের দুইজনের দিকে অদ্ভুতভাবে চেয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পরে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমের ইঞ্জেকশন সম্ভবত দেওয়া হয়েছিল।
বিয়ের দাওয়াত থেকে থেকে ফিরে বাসায় এসে টানা গোসল দিলাম। সকালে রাঙামাটি যেতে হবে। অফিস এসাইনমেন্ট। সবকিছুই গুছিয়ে বিছানায় এসে গা ছেড়ে দিতেই অদ্ভুত আলস্য ঘিরে ধরলো। ঘুমুতে গেলাম, কিন্তু ঘুম আসছে না। ফাইজার সাথে আমাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। কোচিং ক্লাস না থাকলে বসুন্ধরা সিটির লেভেল এইটের ফুডকোর্টে আড্ডা মারতাম। মাঝে মাঝে এস্কেলেটরে উলটো দিক দিক দিয়ে প্রতিযোগিতা করে ওপরে উঠতে চেষ্টা করতাম। এই ব্যাপারটা পল্লব ভালো পারতো। আর ফাইজা ওপর থেকে ভয়ে চেঁচামেচি শুরু করতো। সিনেপ্লেক্সে পোস্টার দেখতে দেখতে কেটে যেত সময়। সবচেয়ে মজার বিষয়টাই ভুলে গিয়েছি। মফস্বল থেকে উঠে আসা এই আমি কত সহজেই ঢাকাকে মানিয়ে নিয়েছি। একদিন ফাইজা বলল
‘চলো সিনেমা দেখবো’
আমি আমতা আমতা করতে লাগলাম। দেড়`শ টাকা টিকেট দিয়ে সিনেমা দেখার ক্ষমতা আমার নেই। ফাইজা বুঝতে পারলো কি না জানি না।
‘টিকেটের কথা চিন্তা করার দরকার নেই, আমি দেখাবো।‘
সেই প্রথম সিনেপ্লেক্সের ভেতরে ঢুকি। মনে হয় ‘পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান’ সিরিজের একটা মুভি চলছিল। কি রোমাঞ্চ! এতো স্মুথ সাউন্ড। আমাদের ওখানে মানে গ্রামের বাড়িতে একটা সিনেমা হল ছিল। সাগর সিনেমা। স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখতে গেলাম। হাফ টাম না হতেই হল থেকে পালালাম। ছাড়পোকা গোটা নিন্মাংশ লাল গোটা গোটা করে দিয়েছিল। সিনেপ্লেক্সের নার্ভাসনেস কাউকে বুঝতে দেই না। স্মার্টনেস ধরে রাখতে হয়। সেই প্রথম অত্যাধুনিক কোনো সিনেমা হলে সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা আমার।
খুব দ্রত কোচিং-এর সময় গুলো চলে গেল। ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল। আমরা সবাই ব্যস্ত হয়ে গেলাম। কারো সাথে যোগাযোগ নেই। আমার ফোনটাও রাজশাহী ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিতে গিয়ে হারিয়ে গেল। পল্লবের সাথে যোগাযোগ আবার কেমন করে জানি হয়ে যায়। কিন্তু ফাইজা একদম হারিয়ে গেল। পল্লবও বলতে পারলো না। ফাইজার আগের নাম্বারটা নাকি বন্ধ। সেটা আর কখনো খোলা হয় নি। পল্লবের ফোন থেকেও ফাইজার নাম্বারটা হারিয়ে গেল...।
রাঙামাটি থেকে ফিরে ঢাকায় তুমুল বর্ষার মুখোমুখি হলাম। কলাবাগান থেকে সিএনজি নিলাম। তারপরেও কাকভেজা হয়ে ঘরে ফিরলাম। রাতের ঢাকা যেন ঘনঘোর বর্ষার কবলে পড়েছে। পরেরদিন অফিসে এসেই পিএবিএক্স থেকে নোট পেলাম। কেউ একজন আমাকে দুইদিন খুঁজে গেছে। তাঁর নাম্বারে যেন আমি এসেই যোগাযোগ করি এমনই বার্তা দিল টেলিফোন অপারেটর। আমার মোবাইলে নাকি যোগাযোগ করা হয়েছিল। মোবাইল বন্ধ ছিল। মোবাইল তো বন্ধ পাওয়া যাবে। বাঘাইছড়ির দুর্গম অঞ্চলে টেলিফোন নেটওয়ার্ক নেই। ফোন দিলাম। শীতল নারী কণ্ঠ
‘সমুদ্র?’
ফাইজা। ফাইজার কণ্ঠ একবারেই বুঝে ফেললাম। আমার অবসেন্স কি এই কণ্ঠটাকে ধরে রেখেছিল? জানি না। ওর কার্ড থেকে মোবাইলে নাম্বারটা সেভ করা হয় নি। আর সেও কি সেও জানতো অপরিচিত নাম্বার থেকে যে ফোনটা আসবে সেটা আমারই? নাকি আমাদের টেলিফোন অপারেটরের কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে নিয়েছিল!
‘ফাইজা বলো’
‘কোথায় ছিলে? তোমাকে কয়েকদিন খুঁজেছি’
-ছিলাম না, পাহাড়ে গিয়েছিলাম, ওখানে নেটওয়ার্ক ছিল না।
‘বাহ, বেশ, ভালো এনজয় করলে নিশ্চই। তুমি পাহাড়ে প্রায়ই যাও নাকি?
‘প্রায়ই না, মাঝে মাঝে যাওয়া হয় আর কি’
‘ শোনো যে জন্য ফোন দিয়েছি, তুমি আমার সাথে দেখা করতে পারবে?’
‘কবে?’
‘কাল, আগামীকাল?’
ফাইজার এই কণ্ঠের সাথে আমি পরিচিত না। এইতো রাওয়াতে যেদিন দেখা হলো সেদিনও ওকে অনেক আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিল।
‘আচ্ছা, কোথায় আসবো বলো...।’
‘এক কাজ করো তুমি ধানমন্ডিতে চলে এসো, আবাহনী মাঠের কাছে...।’
ফাইজা মেডিক্যালে ভর্তি হয়ে যাবে। এটা মাথায়ই ছিল না। আর আমার কি ইচ্ছে ছিল? ইচ্ছে ছিল বৈমানিক হবো। অথচ দর্শনে অনার্স নিয়ে হয়ে গেলাম সাংবাদিক। পল্লব একটা বেসরকারি ব্যাংকে আছে। অদ্ভুত মানুষের জীবন। যেন হিমালয়ের মানস সরোবর থেকে বেয়ে আসা ব্রহ্মপুত্র, কখনো যমুনা হয়ে ইচ্ছেমতো বেঁকে গিয়েছে, কখনো পুরাতন ব্রহ্মপুত্র হয়ে চলে গেছে আরেকদিক। অফিসে বেশ চাপ ছিল আজ। কাজ শেষ করে যখন বাসায় ফিরলাম। মধ্যরাত। কাল ফাইজার সাথে দেখা করতে হবে। হাতের কাজ শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ি।
আবাহনী মাঠের কাছে রিক্সা থেকে নামতেই চোখে পড় ফাইজাকে। ফাইজা একটা সবুজ কামিজ পরে এসেছে। ফাইজার মধ্যে কি কি পরিবর্তন এসেছে খেয়াল করার চেষ্টা করি। হাঁটতে হাঁটতে একটা আইসক্রিম পার্লারে বসি। লোকজন তেমন একটা নেই। বৃষ্টি নেই, কিন্তু মেঘ করেই আছে সম্পূর্ণ আকাশ। ভোরের দিকে বেশ বৃষ্টি হয়ে গেছে। হয়তো ঘণ্টাখানেক আধা ঘণ্টার ভেতর ফের বৃষ্টি নামবে। ফাইজা আইসক্রিমের অর্ডার দিয়ে এসে কথা বলতে শুরু করে
‘সমুদ্র, তোমার মনে আছে আমরা সিনেপ্লেক্সে পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান দেখতে গিয়ে সিনেপ্লেক্সের অন্ধকারে একবার ভয় পেয়ে তোমার হাত ধরে ফেলেছিলাম, মনে আছে?’
হ্যাঁ, ফাইজা একবার আমার হাত ধরেছিল সম্ভবত, উঁহু সম্ভবত নয়, পুরো সিনেমা চলার সময় পর্যন্ত আমি সে আমার হাত ধরে রেখেছিল।
‘হু, মনে আছে... একবার নয় হাফ এন হাওয়ারের পর থেকে মুভি শেষের আগ পর্যন্ত’
‘মনে আছে, আমি পুরো সময়টা ভয়ে আর আতঙ্কে তোমার হাত ধরে রেখেছিলাম’
‘সেটা ভয়ে কি আতঙ্কে সেটা বলতে পারবো না।’
‘তোমার কি মনে হয় আমি এতটা ভিতু? তুমি আমার অসুখের সময় আমার প্রাণশক্তি দেখো নি?’
‘তুমি এতটা ভিতু ছিলে না’
‘সমুদ্র জানো, আমি কেন আড়াল হয়ে গিয়েছিলাম? কেন যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলাম? কেন ফোন নাম্বার পালটে ফেলেছিলাম?
‘না, আমি কিভাবে জানবো, তাছাড়া তোমার অধ্যায়টা একেবারে মুছে ফেলেছিলাম।
‘হুম তুমি জানবে না, আমি নিজেও তো কিছু জানতাম না। শুধু আমাকে জানতে হয়েছিল আমাকে মেডিক্যালে ভর্তি হতে হবে। যখন জানলাম তখন তোমরা কেউ নেই। যোগাযোগ করার উপায় নেই। ফেসবুকে খুঁজেছি কতবার। কতজন সমুদ্রকে পেলাম শুধু তোমাকে ছাড়া।’
সম্ভবত ফাইজা কাঁদছে, অথবা আমার দেখার ভুল হতে পারে। চোখটা কি জলে টলটল করছে? একজন এমবিবিএস ডাক্তার অনেক শক্ত মানুষ হয়ে যায়। তাদের চোখে জল জমতে নেই। তাদের পড়াশোনা দৈনন্দিন রুটিন, চোখের সামনের অজস্র মৃত্যু তাদের অনেক শক্ত করে দেয়। আকাশ আরো কালো হয়েছে। ফাইজা আমার হাতের ওপর হাত রাখে। গাঢ় স্পর্শ অনুভব করি। স্বাভাবিক থাকি। ফাইজার প্রতি আমারও কি কখনও দুর্বলতা ছিল না? সেই অনার্সে পড়ার সময় সমুদ্রে চলে গিয়েছিলাম। কক্সবাজারে একাই সৈকতে গোসল করছিলাম। প্রায় ফাঁকা বিচ। তারপরেও কিছু দম্পতি ছিল। আমি একা মাঝে মাঝে ঢেউ আসছিল। একটা বড় ঢেউ এসে আমাকে টালমাটাল করে দিল। মনে হচ্ছিল আমি গভীরে চলে যাচ্ছি। একদম ভেসে যাচ্ছি। হঠাৎ করে ফাইজার মুখটা তখন ভেসে উঠেছিল। সৈকতের এক যুবক আমাকে বাঁচিয়েছিল বটে। কিন্তু সেই সময়টা ফাইজার কমনীয় মুখটা ঝলকের জন্য কেন ভেসে উঠেছিল! ব্যাখ্যাটা আমি পাই নি। চোখের মাঝে সমুদ্রজলে ভেসে ওঠা ফাইজা আমার সামনে বসে আইসক্রিম গিলছে। কী অদ্ভুত!
আইসক্রিম পার্লার থেকে বেরিয়ে ফাইজার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে আকাশের দিকে তাকালাম। না আজ আর বৃষ্টি নামবে না…।
এইচএন/পিআর