মাসুম আহাদের মেঘকাব্য-২০

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:৫৫ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০২০

যদি বেঁচে যাই

এই জন্মে বেঁচে গেলে...
জমাবো আড্ডা প্রিয় ক্যাম্পাসের সিঁড়ি ঘরে
হাসানের টুং টাং অ্যাকোয়িস্টিক গিটারে;
ওয়ারফেজের মিহি স্বরে
(চুপচাপ চারদিক মাতাল হাওয়ায়)
বাবুর হাইভোকালে ‘নিঃস্ব করেছ আমায়’!
কোয়ান্টাম জাহিদের কণ্ঠে ফসিলের গান।

এবারের মতো বেঁচে গেলে...
শাহবাগের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে,
‘লালনের টি স্টলে’ চুটিয়ে সংলাপ হবে-
রাষ্ট্র-বিরাষ্ট, সমাজ, সংস্কৃতি
চাকরি, প্রেম-পলিটিক্স, অর্থনীতি বিষয়ক।
আশা রাখছি- পল্টি এমরান, মিয়াজী, সুমন, সুমিত,
চৌধুরী আজিম, মামুন, গিট্টু, আলম, সৌরভ বড়ুয়া,
কবীর-সেলিম ভাই, হীরা আপু, আনন্দ চ্যাটার্জী,
কবি মিঠা মামুন প্রমুখরা সভার মুখ উজ্জ্বল করবে।

সত্যিই যদি বেঁচে যাই,
নাসিমের পেন্সিল স্কেচে নিজের প্রতিবিম্ব খুঁজবো
সদা হাস্যোজ্জ্বল তারেকের গল্পের রসমালাইয়ের
রস সত্যি সত্যিই আস্বাদন করবো।

শিকারী ত্রিদীপ রয়ের শিকারে অর্জুনের ভাগ
শুধে নিবো, তোদের শিকারে আমায় একটু রাখ
আসফাক আকবর, ক্যাপাচিনো হবে গ্লোরিয়া জিনসে
ব্যবসায়ী হিসাব করে নিবো সামছুল আলম বেপারী।

যদি বেঁচে যাই,
চারুকলার সামনে কালোকায় বাঁশিওয়ালার সুরে
ঘণ্টার পর ঘণ্টা অলসতা বিলাস করবো।
থাকবে ধোয়াময় চা, ঠোঁটের ফাঁকে- উড়ন্ত
কুণ্ডলি পাকানো নিকোটিনের নির্যাসময় দুঃখবিলাস।

এ মহামারীর কালে বেঁচে গেলে
দাদুর মতন শীতল পাটি পেতে
বাড়ির পুরোনা আম গাছতলায়
উদযাপন করবো নিশি।
সাথে চিংড়ি-মিষ্টি কুমড়া ফুলের বড়া,
ডাল পিঁয়াজু, অ্যালকোহল কড়া,
সাথে চলবে ভূত, প্রেত, রাজ, রানি আর মৃত্যুপুরীর গল্প।

এই জন্মে বেঁচে গেলে
আমার গ্রামের বিলে
সাকরাইনে ঘুড়ি খেলায় মাতবো,
কাজিনদের বহরে চড়ুইভাতি, গুলতি দিয়ে পাখি শিকার,
মাছধরা, প্রজাপতি হয়ে ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াবো।

এই জন্মে বেঁচে গেলে সং সাজবো
বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রায়
মুড়ি-মুড়কি, গুড়ের জিলাপি
বাতাস, কদমা, দই-চিড়া খাবো দাসকান্দির মেলায়।

এই যাত্রায় বেঁচে থাকলে
মেঘনা নদীর কূলে জোছনা বিলাসে
বরাবরের মত নেমন্তন্ন করবো-
সোহেল, হেলালকে...
যদিও তারা ঘরকুনো ঘুমকাতুরে।
না এলেও তুহিনের সাথে শৈশব স্বপ্নজাল বুনবো,
সাথে শান্তু, ফোক গায়ক ইমান আলি...

এই যাত্রায় বেঁচে থাকলে
শান্ত নদীর মাঝ বুকে নৌকা ছেড়ে স্রোতের সাথে
পথ চলবো... (মাঝি বাইয়া যাও রে)

বেঁচে থাকলে বারবার ছুটে যাব সমুদ্রে
কান পাতলেই গর্জন দিয়ে ডাকে
আয় ফিরে আয়।
সাজেক ভ্যালি, নাফাখুম, জাফলং ঠাঁয় অপেক্ষায়
কখন তার স্নিগ্ধতায় বিমুগ্ধ হবো।
শুধু বেঁচে গেলেই হয়।

বেঁচে থাকলে ক্ষেতের আঁকাবাঁকা আইল ধরে
তপ্ত দুপুরে কৃষাণীর হাতের রান্না কাচা মরিচে পাটশাক,
আলু, কাচা আমের পাতুরি, মলাই মাছের চরচরি
বাওড় ঘরে বইস্যা খামু।

বাঁইচা, থাকলে এইবার
কবিতা লিখমু, মিছিল করুম, প্রতিবাদ করুম
আন্দোলন করুম।
দিক নির্দেশনায় থাকবে বীর সিপাহশালা আজিজ ভাই,
কমান্ডিংয়ে থাকবেন বরাবরের মত ক্যাপটেন কাউসার ভাই...

বাঁইচা গেলে এবার,
আমার ওনার হাতে আইড় মাছের কাবাব,
জালি কাবাব, পোলাও, চিকেন রোল, কালো ভুনা
জর্দা ভাত, বেশ জম্পেশ করে খামু।

বাঁইচা গেলে মিষ্টি বউটারে
এইবার একটা ফুটফুটে
‘আসমানি পুতুল’ আইনা দিমু...
সাথে দোলনা, কলসী ফুল, ঝুনঝুনি।

করোনাকাল হতে বাঁইচা গেলে
দাদা-দাদির কবরটা একটু স্পর্শ করে দেখবো
এতটা শীতল হয়ে কী করে অপেক্ষা করছে?
পুনরুজ্জীবনের...

এসইউ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।