তমিজ উদদীন লোদী-এর চারটি কবিতা
কারণ ছাড়া ভালো না লাগার দিন
কোনো কারণ ছাড়াই
রোদ ভাল্লাগছে না । হাওয়া ভাল্লাগছে না ।
এতো যে চমৎকার সব পাখি-ভাল্লাগছে না
আকাশের নীলের সাথে মিশে আছে যে সমুদ্রের নীল
উড়ন্ত আল্বাট্রাস কী সী-গাল
ঝুপ করে ডুবে যাওয়া পানকৌড়ি
অস্তমিত সূর্য, গোধূলি, ক্ষীণতোয়া চাঁদ
ভাল্লাগছে না ! ভাল্লাগছে না !
শীতের শিশির কিংবা বসন্তবাতাস
অথবা ঝরা পাতা, বর্ষার মেঘেরা
মুগ্ধ কি উদ্ভ্রান্ত কোনো মুখের ছবি
ভাল্লাগছে না ।
এমনকি তোমার খুনসুটি
অভিমানের অন্যরকম আমেজ
অতি পছন্দের ব্রীড়া কিছুই
ভাল্লাগছে না, ভাল্লাগছে না আজ ।
তাড়া আছে, চলি
আগস্টের তাতানো রোদ থেমে আছে। হাওয়া নেই। আর
গোল হয়ে ওরা ঠেসে ধরেছে তাকে। পালাবার পথ নেই।
এখনই ছিনতাই দৃশ্য দৃশ্যমান হবে- তবে
আমার তাড়া আছে , চলি।
যুবকটি দৌড়চ্ছে। ঊর্ধ্বশ্বাসে। পেছনে চাপাতি বাহিনী।
সারিবদ্ধ মানুষেরা ঔৎসুক। আহা মানুষটা মরে যাবে।
তা যাক। আমার খুব তাড়া আছে, চলি।
অন্ধগলি থেকে কারা ওঠে আসে। কারা রাতারাতি ফুলেফেঁপে ওঠে।
করাতকলের মতো কারা ফালাফালা করে দিচ্ছে সব
কারা ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে রং-তুলি-কাগজ-কলম।
কারা হার্মাদের মতো উঠে আসছে উন্মুক্ত রাস্তায়, তাতে কি ?
আমার তাড়া আছে, চলি, যাই ।
একালের বালকেরা
ঈশপের গল্পের বৃদ্ধ ভেকের মতো আর্তি
নিবৃত্ত করেছিল হন্তারক বালকদের ।
কিন্তু একালের বালকেরা কোনো আর্তিরই তোয়াক্কা করে না ।
তারা স্থিতধি,করুণাবিরত,মমতাহীন, নির্বিকার হানে
তারা উল্লাসে, আনন্দে যথারীতি দলবদ্ধ-
কোপায়, ছুঁড়ে, ছিন্নভিন্ন কিংবা তছনছ করে।
ওরা কোরাস গাইতে গাইতে চাঁদকে নামিয়ে আনে ধরায়
এবং ফালাফালা করে, ফালাফালা করে, শুধু ফালাফালা করে।
ডেড-এণ্ডের দিকে
দৌড়তে দৌড়তে ক্লান্ত । এ এক অন্তহীন দৌড় ।
সামনে ডেড-এণ্ড
এগোনোর আর কোনো পথ নেই । গুঁড়ো গুঁড়ো অন্ধকার
কয়লার ধুঁয়ার মতো চাঁদোয়া হয়ে ঝুলছে বাতাসে ।
বিষাদ মোড়কে যারা ঢেকে রেখেছে অনিচ্ছুক দুঃখের দাগ
তারা পশ্চাৎগামী ট্রেনের মতো মন্দনে
তারা খুঁজে ফিরছে হারিয়ে যাওয়া নিষ্কলুষ সব আয়না
যাতে কোনো প্রতিবিম্বই আর দৃশ্যমান নয়।
তারা খুঁজে ফিরছে দূরত্বদহন , করোটির ভেতরে ফিসফিসে হাওয়া
তারা খুঁজে ফিরছে বেহাত হয়ে যাওয়া জমি
জবরদখলের ইতিবৃত্ত
মানুষের একদার নিরবচ্ছিন্ন শান্তি ও স্বস্তির ইতিহাস ।
যেন নিশ্চিহ্ন সবুজের মতো চারপাশে `পাতাহীন ফুলহীন শাখাকঙ্কাল`।
মানুষ ছুটছে দিগ্বিদিক
সর্বস্বান্ত ,উন্মূল ,উদ্বাস্তু
মানুষ ছুটছে তবু অন্তহীন অন্য এক ডেড-এণ্ডের দিকে ।
এইচআর/এমএস