আয়লান কুর্দিকে নিয়ে আবুল মোমেনের কবিতা
ধিক্কারের অধিক
এটা ছবি?
এটা কি শিশুর ছবি?
না, এটা তো ধিক্কার,
ধিক্কারের অধিক,
তিরস্কার
আমাকে তোমাকে
পৃথিবীসুদ্ধ মানুষকে।
ভূমধ্যসাগর কেন হবে
আয়লানের প্রতিপক্ষ বলো,
যুদ্ধবাজ জঙ্গি মুসলিম আর
আপন পাপের প্রায়শ্চিত্তে বিমুখ
উদাসীন গৃধ্নু প্রতীচী
যুগপৎ ইতিহাস থেকে বর্তমানে
যোগসূত্র বেঁধেছে যখন!
এটা ছবি?
এটা কোনো ছবি হলো?
যা কিছু দেখছি প্রতিদিন
এর একটিও ছবি নয়,
ভুলেও ভেবো না এরা শুধু ছবি,
সব কটি ধিক্কার এরা,
ধিক্কারের অধিক
তিরস্কার।
লোকেই দিয়েছে নাম ছবিটিকে
ভেসে যাওয়া মানবতা।
সেই সাথে বলো
সভ্যতার অবনত পতাকার প্রতিচ্ছবি।
তোমরা ভুলো নি নিশ্চয়
ইতিহাস
এসবই তো মানচিত্র ভাগের
সেই পুরোনো খেলার
শেষ-দৃশ্যের ছবি।
লোভ আর নিষ্ঠুরতার
অবিনত আগ্রাসনে ক্লান্ত শ্রান্ত
মাথাহেঁট- ন্যায় ও জয়ের
অস্তরবি।
এসবই মনুষ্যত্ব বলিদানের
বিয়োগান্ত মর্মান্তিক
অন্তিম সময়ের
ধাবমান দৃশ্যাবলী।
যবনিকা টলতে টলতে ধীরে
এগিয়ে আসছে
সভ্যতার ভগ্নস্তূপ জুড়ে।
হায় পয়গম্বর, হায় যীশু
হায় হায় সক্রেটিস
কী হাল দেখি তোমাদের
অনুসারীদের?
এক দল খুনে লিপ্ত, মুখর ধ্বংসে,
অন্যরা গা বাঁচাতে উদ্গ্রীব!
মানবতা নয়, আপন
মনুষ্য পরিচয়ও নয়,
সবকিছু জমে জমে তলিয়ে যাচ্ছে
ভূমধ্যসাগরের অতল সুনীলে।
শিশু নয়, ওরা নয় নারী,
নয় যেন একটিও মানুষ ওখানে
ভয়-পাওয়া তাড়া-খাওয়া যারা
ছুটছে ওখানে, শূন্য চোখে
ওদের বারতা একটিই
সভ্যতার ঘণ্টা বেজেছে,
ছুটি হয়ে গেছে।
যে ওখানে শুয়ে আছে
সে কিন্তু আয়লান কুর্দি নয়
ছিন্ন পাপড়ি ওটি
উড়ে এসে ভেসে এসে
পড়েছে ওখানে।
প্রাণ দিয়ে বহন করেছে
সাধ্য ছিল যতটুকু
ওর ছোট্ট দেহের
পাপার্ত এ পৃথিবীর
অবশিষ্ট পুণ্যটুকু।
ওরা তো শিশু নয়.
জলের জিম্মায় প্রাণ রেখে
জননী মৃত্তিকায়
ফুটে আছে
শুভ্র পারিজাত ফুল,
জবাব দিচ্ছে তোমাদের
খুনে-স্বভাবের আর
টেনে খুলে দিচ্ছে
মুখোশ সবার
তোমার আমার। আর
হাটে হাড়ি ভেঙে জানিয়ে দিয়েছে
সভ্যতার নামে যত জারিজুরি।
দেবশিশু লজ্জায় মুখ নিচু
করে আছে।
এত শূন্য ফাঁপা মানুষের কাছে
তার নেই কোনো প্রত্যাশা।
বাবাকে বাঁচার শেষ আকুতিতে
ধ্বনিত হয়েছে শিশুকণ্ঠে
ধিক্কারের রুদ্র ভাষা।
তারপর খুলেছে অর্গল।
অবশেষে সভ্যতার শ্লেষ্মা ঝেড়ে
আড়মোড়া ভেঙেছে ইউরোপ,
যদিও ওপাড়ে দলপতি
এখনো নিশ্চুপ।
কথা হল, কতটা জাগবে
সবার বিবেক? বলি,
কতদূর, কতদিন স্থায়ী হবে
জাগরণ?
তোমাদের বুদ্ধি বটে
ওকে ভাবো কুর্দি আয়লান শুধু
বেহদ্দ বেকুব যত -
এখন ও শুধুই ধিক্কার,
বিবেকের ছিন্ন পাপড়ি।
মুখ নিচু করে উপুড় শরীরে
প্রত্যাখ্যান করেছে ব্যর্থ
আমাদের। আর ওর
নিথর ভাষায় সোচ্চার
শুয়ে আছে যে শরীর
সেটি কোবানি শিশুর নয়,
দগদগে মোটা অক্ষরে
লিখেছে সে
প্রত্যাখ্যান।
ওটি শিশু নয়,
শুধুই তজর্নি
দণ্ড ঘোষণার আগে
উঁচানো আঙুল।
শিশুর বারতা সামান্যই
ধিক্কার তোমাদের,
ধিক্কারের অধিক
তিরস্কার।
৫-৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫, চট্টগ্রাম
এইচআর/পিআর