জাতীয় কবির ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ


প্রকাশিত: ১০:৫১ পিএম, ২৬ আগস্ট ২০১৫

আজ ১২ই ভাদ্র (২৭ আগস্ট)। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৯তম প্রয়াণ দিবস। ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের আজকের এই দিনে (১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

যে দিনটিতে কবি চলে গিয়েছিলেন সেদিন খ্রিস্ট্রীয় ক্যালেন্ডারে তারিখ ছিল ২৯ আগস্ট। কিন্তু বাংলাদেশে বাংলা পঞ্জিকার তারিখগুলো স্থির হয়ে যাওয়ার পর থেকে ২৭ আগস্টকেই তার প্রয়াণ দিবস হিসেবে পালিত হয়েছে আসছে। কবির ইচ্ছানুযায়ী কবিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়।

কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা, কবির স্মৃতিধন্য ময়মনসিংহের ত্রিশাল, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে পালিত হবে নানা কর্মসূচি। আজ ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাবেন কবির ভক্ত ও অনুরাগীরা। ঢাকায় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল নানা কর্মসূচি পালন করবে। এর মধ্যে রয়েছে সকালে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ, শোকর‌্যালি, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। নজরুল ইন্সটিটিউট ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যৌথ উদ্যোগে আলোচনা, নজরুল পুরস্কার ২০১৪ প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আজ বিকালের এ আয়োজনে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

শরীরী পদচারণা না থাকলেও শিল্প-সাহিত্যের নানা শাখায় আজও তার ‘উন্নত মম শির’। তাই কাজী নজরুল ইসলাম এখনো প্রাসঙ্গিক। কবির জীবনকাল ৭৭ বছরের। ১৯৪২ সালে অসুস্থ হয়ে বাকশক্তি হারিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সৃষ্টিশীল ছিলেন। এ সময়ের মধ্যে কবি শিল্প-সাহিত্যকে যা দিয়েছেন তা এক বাংলা তথা বিশ্ব পরিমণ্ডলেই অমূল্য সম্পদ।

‘আমি চির বিদ্রোহী বীর/বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির!’ ‘বিদ্র্রোহী’ কবিতার সেই অমর পঙ্তিতে বাঙালি এবং নিজের আত্মপরিচয়কে এভাবেই তুলে ধরেছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। মানবতা, প্রেম, দ্রোহ, চেতনার কবি তিনি। নিজের ক্ষুরধার লেখনীর আঁচড়ে স্থান করে নিয়েছেন বিশ্বসাহিত্যে। গদ্য, পদ্য, উপন্যাস, সঙ্গীত- সব শাখায় তার আগমন ছিল ধূমকেতুর মতো। বাংলা সাহিত্যে তার আগমন প্রসঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজের এক গ্রন্থের উৎসর্গপত্রে লিখেছিলেন ‘আয় চলে আয়রে ধূমকেতু/আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।’

১৮৯৯ সালের ২৫ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কবি নজরুল। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়েও তিনি কএনা আপস করেননি লোভ-লালসা, খ্যাতি, অর্থ-বিত্ত ও বৈভবের কাছে। শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য আজীবন তিনি সংগ্রাম করে গেছেন। মানবতার মুক্তির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপমণ্ডুকতার বিরুদ্ধেও তিনি সোচ্চার ছিলেন। ভালোবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ ইত্যাদি বিষয় তার সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে।

তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সঙ্গীতজ্ঞ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক। কবির ডাক নাম ছিল দুখু মিয়া। জীবিকার তাগিদে রুটির দোকানে কাজ করা থেকে শুরু করে মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবেও কাজ করেছেন। মূলত লেটো দলে যোগদানের মাধ্যমেই সাহিত্যচর্চা অঙ্কুরিত হয়। এ দলের বিভিন্ন নাটকের জন্য তিনি গান ও কবিতা লেখেন। নজরুলের পড়ালেখার হাতেখড়ি হয় মক্তবে। দারিদ্র্যের কারণে মাত্র দশ বছর বয়সেই পরিবারের ভার বহন করতে হয়েছে তাকে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি পেশা হিসেবে বেছে নেন সাংবাদিকতাকে। সাম্রাজ্যবাদবিরোধী কবি তৎকালীন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সোচ্চার ভূমিকা রাখেন। সক্রিয় রাজনীতি করার কারণে বারবার তাকে কারাবরণ করতে হয়েছে। কারাবন্দি থাকা অবস্থায় তিনি রচনা করেন ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’। বন্দিদশার ভেতর দিয়ে তার হাতে সৃষ্টি হয়েছে গান, কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস, ছোট গল্পসহ অসংখ্য রচনা।

১৯২১ সালের ডিসেম্বরে কুমিল্লা থেকে ফেরার পথে কাজী নজরুল ইসসলাম দুটি বৈপ্লবিক সাহিত্যকর্মের সৃষ্টি করেন। একটি হচ্ছে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ও অপরটি ‘ভাঙ্গার গান’। এই দুই সাহিত্যকর্ম বাংলা পদ্য ও গণসঙ্গীতের ধারাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিল তখন। ১৯২২ সালে তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’ প্রকাশিত হয়। এর মাধ্যমে বাংলাকাব্য জগতে নতুন দিনের সূচনা হয়। এ কাব্যগ্রন্থের ‘প্রলয়োল্লাস’, ‘বিদ্রোহী কামাল পাশা’, ‘শাত-ইল-আরব’, ‘আগমনী’, ‘খেয়াপারের তরণী’সহ প্রত্যেকটি কবিতাই বাংলা কাব্যে নতুন বাঁক সৃষ্টি করেছিল।

সঙ্গীত রচনায় নজরুল অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। তিনি প্রায় তিন হাজার গান রচনা ও সুর করেছেন। রাগ-রাগিণীকে দারুণভাবে খেলিয়েছেন গানে গানে। ছোটগল্প, উপন্যাস, সঙ্গীত, নাটক লিখলেও মূলত কবি হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। আজীবন বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গি আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠের কারণে তিনি ভূষিত হন ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে।

১৯৭২ সালের ২৪ মে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। তাকে দেয়া হয় জাতীয় কবির মর্যাদা। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি প্রদান করে।

১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়। একই বছরের ২১ ফেব্র“য়ারি একুশে পদকে ভূষিত করা হয় কবিকে। কবির জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে। ৭৭ বছর বয়সে সেখানেই ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট (১২ ভাদ্র) তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।