কবি হুমায়ুন কবিরের কবিতা নিয়ে মোস্তাফিজ কারিগরের চিত্রপ্রদর্শনী


প্রকাশিত: ০৬:৫৭ এএম, ১০ আগস্ট ২০১৫

॥ প্রদর্শনী ॥
 
কবি হুমায়ুন কবিরের কবিতা নিয়ে মোস্তাফিজ কারিগরের চিত্রপ্রদর্শনী

ফকির ইলিয়াস
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেনেসী স্কুল অব আর্ট-এর উদ্যোগে গত ৭ই আগষ্ট ২০২৫ থেকে নক্সভিল শহরে শুরু হয়েছে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা কবি হুমায়ূন কবির-এর কবিতা অবলম্বনে আঁকা বাংলাদেশী শিল্পী মোস্তাফিজ কারিগর-এর সপ্তাহব্যাপী একক চিত্রপ্রদর্শনী– ‘লাইফ ইন লাইট’। এটা চলবে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত। উল্লেখ্য, এটা মোস্তাফিজ কারিগরের দ্বিতীয় একক প্রদর্শনী। তার প্রথম চিত্রপ্রদর্শনী হয় ২০১২ সালে ঢাকার অঁলিয়স ফ্রঁসেসে।

এতে স্থান পেয়েছে শিল্পীর ত্রিশটি চিত্রকর্ম। পাশাপাশি প্রদর্শিত হয়েছে হুমায়ূন কবিরের ত্রিশটি সম্পূরক কবিতা। কবিতাগুলো নেয়া হয়েছে তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘বিবস্ত্র গতর’ থেকে। বইটির ইংরেজি অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ জামান।

প্রতিদিন বিকেলেই নক্সভিল শহরের আর্ট ডিষ্ট্রিক্টে থাকে শিল্পরসিকদের আনাগোনা। পাশেই থিয়েটার ডিষ্ট্রিক্ট। সেই সাথে রেস্তোঁরার সারি। মাসের প্রথম শুক্রবারে আবার এই আনাগোনা ভীড়ে পরিণত হয়। ‘নক্সভিল ফার্ষ্ট ফ্রাইডে’ নামে ওই দিনে বিশেষ কোন না কোন একটা আয়োজন থাকে। এ মাসের প্রথম শুক্রবারের বিশেষ আয়োজন ছিলো ডাউনটাউন গ্যালারির ‘লাইফ ইন লাইট’ নামে এই চিত্রপ্রদর্শনী।



উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিলো ছিমছাম। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ঠিক বিকেল ছয়টায় গ্যালারি খোলা হয়। তার আগেই দরজার সামনে ভীড়। এই দিনে কোন প্রবেশমূল্য নেই। দর্শকরা ঢুকেই পাশে রাখা দর্শক-বইতে স্বাক্ষর করে নিচ্ছেন। ভিতরে হাল্কা মিউজিক। নেপথ্যে আরো হাল্কা গলায় মাহিদুল ইসলামের আবৃত্তির সিডি।

ধূসর-সাদা দেয়ালে সারি সারি করে লাগানো চিত্রকর্ম আর কবিতা। ছাদ থেকে ঝুলন্ত ফ্লাড লাইট, কোথাও তীব্র আলো আবার কোথাও হাল্কা আলো। পেছনের দেয়ালের তাকে হুমায়ূন কবিরের বই আর কবিতার সিডি সাজানো। রাখা আছে কবিতা ও চিত্রকর্মের ছাপানো অনুলিপি।

অনুষ্ঠানের আকর্ষণ ছিলেন কবি হুমায়ূন কবির। শিল্পী মোস্তাফিজ কারিগরের থাকার কথা থাকলেও ভিসাজনিত কারণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেন নি। অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করেন ইউনিভার্সিটি অফ টেনেসি’র স্কুল অব আর্টস-এর অধ্যাপক ও  গ্যালারি ডিরেক্টর স্যাম ইয়েটস। শিল্পী মোস্তাফিজ কারিগরের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, এই ধরনের ব্যতিক্রমধর্মী একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পেরে কর্তৃপক্ষ খুবই গর্বিত। তিনি উল্লেখ করেন, বছর কয়েক আগে সালভাদর দালির চিত্রকর্ম নিয়ে এই গ্যালারির একটি প্রদর্শনীতে কবিতার উপর দালির আঁকা কাজ স্থান পেয়েছিলো। তবে বর্তমান প্রদর্শনীর পুরোটাই কবিতা অবলম্বনে আঁকা চিত্রকর্ম নিয়ে। সেই হিসেবে এটি নিঃসন্দেহে বিশেষত্বের দাবি রাখে।

গ্যালারির কিউরেটর মাইক বেরী তাঁর বক্তব্যে হুমায়ূন কবিরের কবিতার উপর আলোকপাত করেন। হুমায়ূনের কবিতার বিষয়বস্তুর গভীরতা আর ভাবের প্রগাঢ় বিস্তার পাঠককে ভাবায়। সেই সাথে চিত্রকলায় বিবৃত রঙ আর রেখা দর্শকের মনকে কবিতার অন্তর্গত দর্শনে আন্দোলিত করে তুলে। হুমায়ূন কবির তাঁর বক্তব্যে আমেরিকার মূল ধারায় বাংলা সাহিত্য ও চিত্রকলার সৌকর্য্য প্রদর্শনের সূযোগ করে দেয়ার জন্য উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানান। সেই সাথে ধন্যবাদ জানান শিল্পী মোস্তাফিজ কারিগর ও অনুবাদক কবি মোহাম্মদ জামানকে। তিনি বলেন, এই প্রদর্শনীটি আসলে কবি, অনুবাদক ও শিল্পী- এই তিনজন শিল্পকর্মীর যৌথ প্রয়াস।

উদ্বোধনী দিনের বাড়তি আকর্ষণ ছিলো কবি কণ্ঠের কবিতা। গ্যালারিতে তখন প্রচণ্ড ভীড়। ঘোষণার সাথে সাথেই লোকজন মেঝেতে বসে পড়তে লাগলো। হালকা আবহ সঙ্গীতের সাথে কবি একে একে পড়লেন তাঁর ছয়টি নির্বাচিত কবিতা। পিনপতন নীরবতার মাঝে পুরো গ্যালারির শিল্পরসিক মানুষগুলো হঠাৎ কবিতামোদী হয়ে উঠলো। পাঠ শেষে অনেককেই বাংলাদেশ আর বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে খোঁজখবর নিতে দেখা গেলো।

নক্সভিল শহরে বাংলাদেশী কোন চিত্রকরের প্রদর্শনী এই প্রথম। কবিতা ও চিত্রকলার সমন্বয়ে প্রদর্শিত ভিন্নধর্মী এই আয়োজনটি সবার দৃষ্টি কেড়েছে। ডাউনটাউনের বনেদি এই গ্যালারিটির প্রদর্শনীতে সবসময়ই ভালো লোক সমাগম হয়। তবে প্রদর্শনীর উদ্বোধনী দিনেই প্রায় তিনশর মতো দর্শক শ্রোতার আগমন উদ্যোক্তাদের মতে স্বাভাবিকের চেয়ে খানিক বেশিই মনে হয়েছে।



দর্শকদের অনেককেই দেখা গেছে প্রথমে কবিতাগুলো সংগ্রহ করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছেন। এর পর দীর্ঘক্ষণ ছবির সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছবির মর্মোদ্ধার করছেন। অনেকেই কবির কাছে এসে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ নিজের পছন্দের কবিতা বা ছবির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন। কেউ কেউ চিত্রকলা বা কবিতার অনুলিপির উপর অটোগ্রাফ নিয়েছেন। শহরে বেড়াতে বা কাজে এসেছেন এমন বেশ কিছু ভিনদেশি পর্যটকও এসেছিলেন অনুষ্ঠানে। দেখা পাওয়া গেলো হন্ডুরাসের একজন চিত্রশিল্পীর। ব্রাজিলের একজন লেখকের। ভারতের একজন চিত্রকলা সমালোচকের। ইটালির একজন গায়কের।

গ্যালারির নিয়মমাফিক অনুষ্ঠানটির জন্য বিশেষভাবে কাউকে নিমন্ত্রণ পাঠানো হয় নি। তারপরও স্থানীয় বেশ কিছু বিশিষ্টজনকে দেখা গেছে উদ্বোধনী দিনে।

হুমায়ূন কবির একজন কবি, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা সাত। তাঁর বই দুই বাংলা থেকেই প্রকাশিত। দুইটি বইয়ের ইংরেজি অনুবাদ হয়েছে। তাঁর একটি উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মানের উদ্যোগ চলছে।

পেশাগত জীবনে হুমায়ূন কবির একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। চিকিৎসাবিদ্যার নানা বিষয়ে পাঁচটি বই বোর্ড সার্টিফাইড।

আর মোস্তাফিজ কারিগর এই সময়ে বাংলাদেশের একজন নান্দনিক চিত্রশিল্পী। বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকিয়ে হিসেবেও তিবি সুনাম কুড়িয়েছেন বেশ।শিল্পী, হুমায়ুন কবিরের কবিতার বিমূর্ত মরমিয়া রূপকেই ধরতে চেয়েছেন বিভিন্ন রঙে, কখনো রেখায়। তার কবিতার ভাষা বা বক্তব্যকে শিল্পী সরাসরি চিত্রকর্মে না এনে, আদতে তার কবিতার ভাবেরই একটা চিত্রায়ণ করেছেন। ফলে তার কবিতা পড়লে যেমন একটা মিষ্টিক জগৎ তৈরি হয়, চিত্রকলার ভেতরেও এক ধরনের আলো-আঁধারির সৃষ্টি হয়েছে। মূলত শিল্পীর আঁকা এই চিত্রগুলো সত্যিকার অর্থেই চিত্র-কবিতা বলা যায়।

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।