তৃতীয় অশ্বারোহী’র পাঁচটি কবিতা

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:১১ এএম, ১৫ জুলাই ২০১৭

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে তরুণ কবি রাসেল রায়হানের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘তৃতীয় অশ্বারোহী’। তার কাব্যগ্রন্থের পাণ্ডুলিপি থেকে পাঁচটি কবিতা জাগো নিউজের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-

আংটি

শিরিন, নির্দিষ্ট এই ডালিমের সর্বোচ্চ সাফল্য তোমার হাতের ছুরিতে ফালি ফালি হয়ে প্লেটে ছড়িয়ে যাওয়া। তার দানাগুলিও পাখির ডানার ভঙ্গিতেই ধারণাতীত ক্ষিপ্র গতিময়তায় ছড়িয়ে পড়ে, যখন দেখে তোমার ওষ্ঠ ঈষৎ খোলা। আর অব্যবহৃত খোসা—উচ্ছিষ্ট হওয়াই যার নিয়তি—নষ্ট হয়ে যাওয়ার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত তার স্মৃতিতে থাকে তোমার বিনিদ্র দশটি আঙুল, আর অনামিকায় বিবাহকালীন আকিক পাথর বসানো আংটি—আমার বৈমাত্রেয় বড় ভাইয়ের দেওয়া

****

বিনতি

একদিন অন্ধকারে অকস্মাৎ আমায় জড়িয়ে ধরেছিলে। চারপাশ আরও অন্ধকার হয়ে গেলো। আর আমি গলে যেতে লাগলাম। গলে যেতে যেতে ক্রমশ নিজেকে বায়বীয় মনে হলো, যেহেতু ছড়িয়ে যাচ্ছিলাম সর্বত্রব্যাপী।

আর তখন স্তোত্র পাঠ করতে করতে মহান জিব্রাইল তার পর্বতপ্রমাণ মস্তক আর দীর্ঘ সোনালী ডানা নিয়ে আমার সম্মুখে দাঁড়ান। সামান্য দুর্বোধ্য কিন্তু স্পষ্ট ভাষায় জানান, আমায় নিয়ে এসেছেন তিনি। আমি তাকে মাতৃভাষায় বললাম, হে জিব্রাইল, আরও প্রশস্ত হোন। দিগন্তপ্রসারী ডানা আরও প্রসারিত করুন। 

কিছু কিছু মুহূর্তে মানুষকে ধারণ করার জন্য আরও প্রশস্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়

সর্বদাই আকাশ থাকে ঝুঁকে
তোমার দেয়া মাটির সিন্দুকে 

আর তোমার পা মাটিতে থাক। শুধু আকাশের নামিয়ে দেওয়া আঙুরসমূহে সামান্য চুম্বন দিয়ে রেখো

****

ভ্রান্তি

আমাকেই জড়িয়ে ধরেছিলে? না কি আমার ভাইকে? তার শরীর থেকে মাঝে মাঝে তোমার ঘ্রাণ পাই—

...বলেছিলে এই প্রশ্নের উত্তর তখনই দেবে, যখন একটি বিশেষ নক্ষত্র সামান্য সরে যাবে তার জায়গা থেকে। জানো না, নিজের জায়গা থেকে মানুষ সামান্য সরে গেলেই নক্ষত্রও সরে যায়

আজ যে আপেল গাছের নিচে বসে তোমরা চারজন তাস খেলছ, কাল এর নিচেই তোমাদের নারীটির কবর হবে। সঙ্গীত ভালোবাসত বলে অন্য তিনজন কবরের পাশে বসে বেহালা বাজাবে

****

আরব্য রজনী

বরং বেহালা শোনো। 
ঘোড়াটির নাম ছিল লালকমল, যার লেজের তন্তু দিয়ে তৈরি এই বেহালার ছড়
ছুটে আসা সামুদ্রিক সে ঘোড়ার পিঠে সমুদ্রের নিঃশ্বাস পর্যন্ত লেগে থাকবে সোনার লাগাম—মোমের শিখার মত উচ্চাকাঙ্ক্ষী তার লেজ। আমি চিৎকার করতেই ঝিমিয়ে আসবে জাহাজঘাটা, খালাসকৃত মশলার আকর্ষণ—
এলাচের সমুদ্র ডিঙিয়ে উঠে আসবে সিসিম ফাঁক!
অন্ধ পাঠিকা, প্রবেশ করব তোমার খুলে যাওয়া জিপারের মতো উরুর ভেতর

****

বেহালাবাদক

প্রাচীন সেই মানুষটিকে চিনতে চাইলে আজ তার কোনো উত্তরপুরুষের দিকে তাকাও। প্রসূতিসদনে তুমি একদিন দেখতে এসেছিলে যার সাবেক স্ত্রীকে। আর তাকে উপহার দিয়েছিলে প্রাচীন বেহালা

...আর বেহালার রঙিন ভাঁজে হাত বোলাতে গিয়ে 
আমার মনে পড়ে যাবে গর্ভবতী স্ত্রীটির কথা। 
এটা খুব স্বাভাবিক যে এক বেহালাবাদক 
তার গর্ভবতী স্ত্রীর পেটকে 
বেহালার সবচেয়ে রঙিন ভাঁজটির সাথেই তুলনা করবে

****

কাব্যগ্রন্থ : তৃতীয় অশ্বারোহী
কবি : রাসেল রায়হান
প্রকাশক : জেব্রাক্রসিং প্রকাশনী
প্রকাশকাল : জুন ২০১৭
প্রচ্ছদ : সারাজাত সৌম
মূল্য : ১২০ টাকা

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।