নারী ও ছায়াবৃক্ষ : বাস্তবতার এক নতুন অধ্যায়

মিজানুর রহমান মিথুন
মিজানুর রহমান মিথুন মিজানুর রহমান মিথুন , লেখক ও সাংবাদিক
প্রকাশিত: ০৬:৪৭ এএম, ০৪ মে ২০১৭

কথাশিল্পী সালাম সালেহ উদদীন ‘নারী ও ছায়াবৃক্ষ’ শীর্ষক গল্পগ্রন্থের মাধ্যমে একগুচ্ছ জীবনমুখী গল্প পাঠকের হাতে তুলে দিয়েছেন। তিনি লেখালেখির প্রায় আড়াই দশকে এক শ্রেণির নিবেদিত পাঠক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এই পাঠক শ্রেণি তার লেখা পাঠ করে রসাচ্ছাদন করেন, হাসেন, কাঁদেন, কেউ কেউ অপার আনন্দ ভুবনে প্রবেশ করেন।

সালাম সালেহ উদদীনকে একজন জীবনশিল্পী বললেও অত্যুক্তি হবে না। তিনি আমাদের মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্তদের জীবনবোধকে সাহিত্যের সুক্ষ্ন সুতোয় গেঁথে চলেছেন। যদিও তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী গল্প লেখেননি। তার লেখার মাঝে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে নতুন বোধের উৎসারণ ঘটিয়ে মানব মনস্তত্ব, প্রেম ও জীবন-বাস্তবতাকে তার লেখায় এমনভাবে তুলে এনেছেন- যা পাঠককে অনায়াসেই আলোড়িত করে। তার গল্পে উঠে এসেছে মানুষের ভেতরের মানুষ, বাস্তবতার ভেতরের বাস্তবতা। তার গল্পে স্বতন্ত্র জীবনবোধ তৈরির এবং তা উন্মোচনের শিল্প সফল প্রচেষ্টা রয়েছে। তার গল্প পাঠে পাঠক জীবন বাস্তবতার এক নতুন অধ্যায় সম্পর্কে জানতে পারবে।

‘নারী ও ছায়াবৃক্ষ’ গল্পগ্রন্থে ‘পথদর্শক’, ‘শেকড় ছেঁড়া একজন’, ‘নিম্নবিত্তের প্রতিশোধ’, ‘কান্না ভেজা কামান্নায় আরেক যুদ্ধ’, ‘নারী ও ছায়াবৃক্ষ’, ‘রিকশারোহীর দাহন উৎসব’, ‘অধ্যক্ষ সমীপেষু’, ‘শূন্যে ওড়ে চুল’, ‘একই বৃত্তে সোম বাবু’, ‘গুলেন-বারি সিনড্রোমের পর’ এবং ‘বৃষ্টিমুখর এক রাতে’ শিরোনামে ১১টি গল্প স্থান পেয়েছে।

‘নিম্নবিত্তের প্রতিশোধ’ শিরোনামের গল্পে গ্রাম থেকে আসা শহরে স্থায়ীভাবে বসবাসকারীদের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। এ গল্পে তিনি লিখেছেন, ‘বৃষ্টির পানিতে লেবু অত্যধিক সতেজ হয়ে উঠলে মিতার চোখে-মুখে স্বর্গীয় আনন্দ খেলা করে। সে লেবু গাছের দিকে তাকায় আর তার কৃতিত্বের জন্য সুখবোধ করে। গ্রামে গাছ লাগিয়ে যেখানে নিরাপদে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় না, সেখানে এই মহাজঞ্জালপূর্ণ রাজধানী ঢাকায় ভাড়া বাসার ছোট্ট বারান্দায় ফলবতী লেবু গাছ লাগিয়ে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।’ গল্পটিতে তিনি যতই অগ্রসর হয়েছেন ততই পাঠককে শহুরে জীবনের আখ্যানে নিবিড়ভাবে জড়িয়েছেন।

অন্যদিকে গল্পকার সালাম সালেহ উদদীন মানব-মানবীর চিরায়ত আকর্ষণের কথা তুলে ধরেছেন। ‘নারী ও ছায়াবৃক্ষ’ গল্পে তিনি লিখেছেন, ‘তোমাকে বহুবার বলেছি স্পর্শহীন ভালোবাসা আমার মোটেও পছন্দ নয়। মধ্যযুগের রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান একুশ শতকে অচল। ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে স্মৃতি তপড়ানোর জন্য তা মাঝে মধ্যে স্মরণ অথবা পাঠ করা যেতে পারে।’

‘অধ্যক্ষ সমীপেষু’ গল্পে শহরের একটি স্কুলের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। এ গল্পে বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে, ‘ছেলে মেয়েদের ছুটির জন্য অপেক্ষারত অভিভাবক বলতে সাত-আটজন প্রায় যৌবনোত্তীর্ণ মহিলা। এরাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্কুল ছুটি পর্যন্ত অপেক্ষা করে প্রতিদিন। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক এমন গল্প নেই যা তারা করে না। কে কত টাকা দিয়ে শাড়ি অথবা থ্রি-পিস কিনেছেন, জুতা ভ্যানিটি ব্যাগ দেশের না দেশের বাইরের, কোন বিউটি পার্লারে নিয়মিত যান, পার্লারের নামে কী কী অপকর্ম হয়- এসব নিয়ে সারাক্ষণ আলাপে মত্ত থাকেন।’

তার কাহিনি নির্মাণ, চরিত্র চিত্রণ পাঠকের পাঠাকাঙ্ক্ষা নিবারণে সচেষ্ট হয়েছে। গল্পকার একইভাবে তার প্রতিটি গল্পের নানা চরিত্রের মধ্য দিয়ে পাঠককে আবিষ্ট করবেন জীবনের সুক্ষ্নতম অনুভূতি।

প্রচ্ছদশিল্পী শতাব্দী জাহিদের নজরকাড়া প্রচ্ছদে ‘নারী ও ছায়াবৃক্ষ’ নামের গল্পের বইটি প্রকাশ করেছে শোভা প্রকাশ। এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ টাকা।

এসইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।