টুটুল স্যারের টিউশনি : শিশুসাহিত্যে মাইলফলক

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ , লেখক ও সাংবাদিক
প্রকাশিত: ১১:৫৪ এএম, ০৪ মার্চ ২০১৭

শিশুসাহিত্যে সমকালীন তরুণদের মধ্যে অগ্রগামী মিজানুর রহমান মিথুন। এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা এক ডজনেরও বেশি। তিনি বিষয়ভিত্তিক কিংবা শিক্ষণীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে কোমলমতি শিশুদের মনে শিক্ষার বীজ বুনে দেন। তার বইগুলো এমন সাক্ষ্যই বহন করে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের বইমেলায় প্রকাশ হয়েছে শিশুতোষ গল্পের বই ‘টুটুল স্যারের টিউশনি’।

বইটিতে মোট ১১টি গল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো হচ্ছে- বুদ্ধিমতী অবনী, রিতুর আঁকা ছবি, টুটুল স্যারের টিউশনি, চশমা মামা, মিতুর বেঁচে যাওয়া, একজন মুক্তিযোদ্ধা ও একটি বাঘ, নিরাপদে পথ চলা, নূরীর চাঁদ দেখা, রাহাতের অন্যরকম স্কুল, তানভীর ও মুক্তিযোদ্ধা দাদা ভাই এবং টুটুলের যাদুর মেশিন।

যদিও বইয়ের ভূমিকায় লেখা রয়েছে ৯টি গল্প। সূচিপত্রে গিয়ে পাওয়া যায় ১১টি গল্প। তার গল্পে শিশুদের নৈতিকতা, সততা, আদব-কায়দা, ভালোবাসা, দেশপ্রেম, শ্রদ্ধা-ভক্তি শিক্ষা দেয়া হয়েছে। ঢাকা শহরে পথ চলতে গেলে কেমন সতর্ক থাকতে হবে, রাস্তা পারাপারে কেমন নিয়ম মানতে হবে- তাও ফুটিয়ে তুলেছেন গল্পের মাধ্যমে। তবে কোনো কোনো গল্প শুধু হাস্যরসাত্মক বা ঘটনায় ঠাসা; সেখানে শিক্ষণীয় ব্যাপারটা অতো প্রকট হয়ে ওঠেনি।

তার ‘বুদ্ধিমতি অবনী’ গল্পে অবনীর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়া হয়েছে। বাবা রেগে গেলে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয় অবনীর কাছেই শিখে নেয় তার ছোটভাই লিপন। ‘চশমা মামা’ গল্পে মামার চশমা ভেঙে ফেলার গল্প বলা হয়েছে। সাঁতার না জানা মিতু নদীতে গোসল করতে নেমে ডুবে গিয়েও প্রাণে বেঁচে যায়। এখানে সাঁতার শেখার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে। সাঁতারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে গ্রামে অন্যরকম স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয় ‘রাহাতের অন্যরকম স্কুল’ গল্পে। শহরের চার দেয়ালের মাঝে শিশুরা চাঁদ দেখতে পায় না। ‘নূরীর চাঁদ দেখা’ গল্পে মামার বিবাহ উপলক্ষে তাদের আহ্বান জানানো হয় গ্রামে গিয়ে চাঁদ দেখে আসতে।

দেশাত্মবোধ বা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানাতে ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা ও একটি বাঘ’ এবং ‘তানভীর ও মুক্তিযোদ্ধা দাদা ভাই’ গল্প দুটি ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। ছবি আঁকা নিয়ে শিশুদের আগ্রহের কমতি নেই। শৈশবে কম-বেশি সবাই ছবি আঁকতে পছন্দ করে। ছবি আঁকা প্রসঙ্গও এসেছে ‘রিতুর আঁকা ছবি’ গল্পে। ‘টুটুলের যাদুর মেশিন’ গল্পটি তেমন কোনো শিক্ষা বহন করে না। তবে শিশুদের কৌশলে কোনো দুষ্টুমি থেকে নিবৃৃত্ত করতে এমন পন্থা অবলম্বন করা যেতেই পারে।

সবমিলিয়ে গল্পের বিষয়বস্তু চমৎকার এবং শিশুদের মানসিক বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। অহেতুক ভূত-প্রেত, এলিয়েন, রোবট কিংবা জল্পনা-কল্পনার সমাবেশ না ঘটিয়ে বাস্তবমুখি শিক্ষার আয়োজন করেছেন লেখক। এ হিসেবে সার্থক গল্পগ্রন্থ বলা যেতে পারে। তবে যথাযথ সম্পাদনার অভাবে অর্ধশতাধিক ত্রুটি কোমলমতি পাঠককে বিভ্রান্ত ও হতাশ করতে পারে। প্রথমত এর দায় লেখকের; দ্বিতীয়ত দায় প্রকাশকের। যেহেতু আমাদের প্রকাশনা শিল্প এখনো প্রুফনির্ভর হয়ে উঠতে পারেনি।

সাতচল্লিশ পৃষ্ঠার বইটিতে অর্ধশতাধিক বানান ভুল থাকলে কার্যত শিল্প মান ক্ষুণ্ন হয়। যা একটি প্রকাশনীর জন্যও হুমকিস্বরূপ। এছাড়া দুর্বল বাক্য নির্মাণ, দুর্বোধ্য শব্দচয়ন এবং বিষয়বস্তুর সঙ্গে কোনো কোনো ঘটনার পরম্পরা অসঙ্গতিপূর্ণ হওয়ায় কিছুটা হতাশ হতেই হয়। তবে আশাকরি পরবর্তী প্রকাশনায় বিষয়টির প্রতি লেখক ও প্রকাশক উভয়েই সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন।

সময়ের আলোচিত প্রচ্ছদশিল্পী মোস্তাফিজ কারিগরের চমৎকার প্রচ্ছদে বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ১৩৫ টাকা। বইটি প্রকাশ করেছে সাহস পাবলিকেশন্স। আপনার শিশুকে বইটি উপহার দিয়ে শিশুসাহিত্যের অগ্রযাত্রায় শামিল হতে পারেন।

এসইউ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।