বৃষ্টিস্নাত কবিতা সন্ধ্যায় রক্তে প্রেমের ঢেউ
সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা। দুপুরে রোদের দেখা মিললেও বিকেলে শুরু হয় বৃষ্টি, সঙ্গে শীতল বাতাস। শুক্রবার এমন উদাস বৃষ্টিস্নাত বিকেল থেকেই রাজধানীর পরীবাগে সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে বাড়তে থাকে প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের পদচারণা। তবে সবাই ব্যস্ত রাজধানী নিত্য কোলাহল ছেড়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন কাব্যিক জগতে। মাটির গন্ধে কথা বলছিলেন নিজেদের ভাষায়। জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠন ‘দিয়াড়’র আয়োজনে ‘আজ কবিতা সন্ধ্যা’য় যে তাদেরই কবিতা পাঠের আয়োজন করা হয়।
কবিতার পাশাপাশি মাটির গন্ধ নিতে আয়োজন বসে সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের খোলা মাঠে। কিন্তু বৃষ্টির বাগড়ায় কিছুটা বাধা পড়ে আয়োজনের। কিছুক্ষণ মন ভার করে বসে থাকা। অবশেষে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই শুরু হয় আয়োজন। কবি, কবিতা আর শ্রোতা সবাই মঞ্চে। বৈঠকী ঢংয়ের এ আয়োজন জমে ওঠে কবিতা আর কথায়। আর এগুলো দিয়ে মালা গাঁথেন সংগঠনের সদস্যসচিব আনোয়ার হক। তার মনোমুগ্ধকর উপস্থাপনাও সবাইকে আকৃষ্ট করে।
ভিন্নধর্মী এ আয়োজনে নিজের লেখা কবিতা আবৃত্তি করেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, মোহন রায়, রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন, আপেল আবদুল্লাহ, ভাস্কর চৌধুরী, আমিনুল ইসলাম, আশরাফ জুয়েল, চন্দ্রশিলা ছন্দা, এসআই শহীদ। রাত অবধি চলা কবিতা সন্ধ্যায় সবশেষ আয়োজন ছিল ভারতের গুণী আবৃত্তিকার সৌমিত্র ঘোষের বিশেষ পর্ব। কলকাতার অন্যতম এ বাচিক শিল্পী সুরের মূর্ছনায় আবৃত্তি করেন এপার-ওপার বাংলার অনেক কবিতা। একে একে সমাপন, বিনোদিনীর প্রতি, ২৬ নম্বর চিঠি, সম্পর্ক, গরীবগঞ্জের রূপকথা, দুই বাংলা আবৃত্তি করে জয় করে নেন দর্শক মন।
কবিতা আবৃত্তির ফাঁকে ফাঁকে চলে গুণীজনদের আলোচনাও। একুশে পদক পাওয়া বাঙালির জাতিসত্ত্বার কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা বললেন, ‘সমকালীন বাংলা কবিতায় পুরোনোদের দিন প্রায় শেষ। শুরু হয়েছে নতুনদের, নতুন শতকের, নতুন দশকের কবির দিন। নতুনদের অন্যরকম ভাষা, অন্যরকম নির্মাণ, অন্যরকম তৎপরতা দেখছি। নতুনদের হাতে সযত্নে চর্চিত হয়ে নতুন বাঁক নেবে বাংলা কবিতার। আমার এক কথা, খেয়ে ফেলতে হবে রবীন্দ্রনাথদের মতো রুই মাছদের।’
দিয়াড়’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক নাট্যজন অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ বললেন, ‘জাতীয়ভিত্তিক এ সংস্থার মাধ্যমে বাংলা সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেয়া হবে। এরই অংশ হিসেবে এ আয়োজন। আগামীতে আরো বড় পরিসরে আয়োজন করা হবে লোকগান উৎসব। এছাড়া এ বছরই ঢাকায় আয়োজন করা হবে প্রথম জাতীয় গম্ভীরা উৎসব। চলছে তার প্রস্তুতিও।’
সংস্কৃতির পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘শিগগিরই এ সংগঠনের মাধ্যমে আমরা ‘একুশে’ ও ‘বঙ্গবন্ধু’ নামে আমের নতুন দু’টো জাত মানুষের হাতে তুলে দেবো। দিয়াড়’র আয়োজনে আগামী ফেব্রুয়ারি ও মার্চে প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে আম গাছের চারা রোপণের অনুরোধ জানানো হবে।’
দিয়াড় আহ্বায়ক মুখলেসুর রহমান মুকুল, পৃষ্ঠপোষক ড. অধ্যাপক মেসবাহ কামালসহ বিশিষ্টজনরা আলোচনায় অংশ নেন।
এমইউএইচ/বিএ/এবিএস