সাদিয়া আফরোজ উর্মির গুচ্ছ কবিতা
বিশ্ব
এই অস্থিতিশীল রক্ত মাখা বিশ্ব নিয়ে ভাবিনা
সৃষ্টির আদি থেকে আজ পর্যন্ত রক্ত ঝরছেই,
কখনো তলোয়ারের ঝনঝনানিতে, কখনোবা বারুদের গন্ধে।
তার থেকে আমি যেতে চাই
সবুজ বনানীর মাঝে, নিশিগন্ধার বুকে
শিরিষ পাতার ফাঁক দিয়ে উকি দেওয়া মায়াবী চাঁদের দেশে...
অই দূরে দুলে উঠে আমলকীর শাখা দিগন্তের নিঃস্তব্ধতায়;
পায়ের কাছে এসে জড় হয় নক্ষত্রের ছায়া।
আমি এক ছুটে চলে যাই শৈশবে
যেন কোন অবারিত উন্মুক্ত প্রান্তরে দাঁড়িয়ে আছি,
আমায় জড়িয়ে আছে বিশাল সাদা প্রান্তর, নিঃস্তব্ধ রাতের আকাশ
পুকুর ঘাটের শ্বেত শুভ্র সাদা সিঁড়ি ।
আর মায়ের বুকের অদ্ভুত অজানা ঘ্রাণের বুক ভরা সুখানুভুতি
মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসা সুমধুর ধ্বনি
শৈশবের স্বপ্ন আর কোমলতার মাঝে জেগে থাকি...।
রঙ
শুনেছি লাল নাকি জীবনের রঙ, আনন্দের রঙ
লাল দোপাট্টায় নিজেকে জড়িয়ে
আয়নার সামনে এসে দাঁড়াই
চোখ রাখি তার চোখে এক টুকরো রঙধনু দেখবো বলে;
কি আশ্চর্য! এক জোড়া গভীর বিষাদ চোখ ধেয়ে আসে
কি গভীর করুণ বিষাদে মাখা চোখ!
আমার চারপাশে মাঘের কুয়াশা ভর করে
আমি সেই কুয়াশায় ক্রমশ তলিয়ে যেতে থাকি;
আমি শূন্য হতে থাকি...শূন্য হয়ে থাকি...
হঠাৎ বুকের খুব গভীর থেকে একটি ডাহুক ডেকে ওঠে,
মহাশূন্যের কোন এক নক্ষত্রে অজস্র লাল গোলাপ ফুটে...
মেয়ে
ও মন খারাপের মেয়ে
এখানে বসে থাকো চুপচাপ, শোনো ঝর্ণার গান
না হয় একটি গোলাপ খোঁপায় তুলে নাও;
যেওনা মুখোশে ঢাকা অই শহরে
ওখানে আজো বীভৎস চিৎকার বাতাসে ভেসে আসে,
মুখ ও মুখোশে ঢাকা এই শহরের গলিতে গলিতে জমাট বাঁধা অন্ধকারে ঘুরে বেড়ায় কয়েটির দল;
ওঁত পেতে থাকে শিকারের খোঁজে,
ভুলেও যেওনা; স্বপ্নগুলো ছাই কর না।
মেয়েগো,
কমলাফুলের গন্ধ মাখ, দুচোখে তোমার স্বর্ণরেনুর স্বপ্ন জড়াও
শিশির ভেজা দূর্বা ঘাসে পা ডুবাও;
আকাশের সবটুকু নীল বুকে নিয়ে মেঘেদের মত শুভ্র হও।
সোনালি রোদেরা ডানা মেলুক
তুমি উড়ে যাও রূপকথার দেশে,
ক্লান্ত হয়ে ফিরে আস শান্ত নদীর তীরে
কাশফুলেরা চামর হয় তোমার আগমনে।
রাতের পৃথিবীতে ডুবে যাও
স্নিগ্ধ বাতাস বুকে জড়িয়ে নাও
ঐ দূর নক্ষত্রের সাথে মিতালি পাতো
তার রুপালি চাদরে মুড়ে নাও তোমায়।
গল্প
রাত্রি মধ্য প্রহর; ধীরে ধীরে ছিটখানিটা খুলে বের হয়ে আসি
জোনাকিরা জ্বলে উঠে
ক্ষয়ে যাওয়া নক্ষত্রেরা ছুটে আসে
জ্যোৎস্নার অপার্থিব আলোয়
পৃথিবীকে দূর নক্ষত্রলোকের দ্বীপ বলে মনে হয়;
আমি গল্পের ঝাপি খুলে বসি।
জীবন ফুরিয়ে যাবে; নক্ষত্ররা ডুবে যাবে
তবু তোমার আমার গল্প ফুরাবেনা এ জীবনে।
সময়
সমুদ্রের তীরে একরাশ অন্ধকার বুকে নিয়ে বসে আছি
তোমার আসার পথে পায়ের কাছে
ঢেউ এর মত ভেঙে যাচ্ছে অজস্র কাঁচ।
সময়; এক অতিকায় বিশাল ডানার পাখি হয়ে
নিঃসঙ্গ আলবাট্রস এর মত অসীম দূরে চলে যায়...
আসলে জীবন কখনোই বড় নয়;
না ভালবাসার জন্য না বেঁচে থাকার জন্য...
চাঁদের সিম্ফনি
চাঁদ, তুমি তো অনেক প্রাচীন।
ঠিক এভাবেই বহুকাল
আগে কোন এক মায়াবী রাতে থমকে ছিলে তারাভরা রাতে রূপালি মায়ায়...।
আমি তোমার কোমল ছোঁয়ায় অঘোরে ঘুমাচ্ছিলাম।
বুকে লেগেছিল কমলাফুলের সৌরভ,
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম; ঠোঁটের কোণে ছিল চন্দ্রমল্লিকার অস্ফুট হাসি...
ও চাঁদ তুমিতো জেনেছিলে পৃথিবীর আরেক প্রান্তে
লেখা হচ্ছিল বিদায়ের নিষ্ঠুর সিম্ফনি!
সেই রাত তো কবেই শেষ হয়ে গেছে নিশাচর এক রুপালী
পাখির ডানার ঝাপটায়।
ঝরা পত্র পালকের মত হারিয়ে গেছে
সেইসব দিন রাত্রির কথা...
আজ সমস্ত পথ জুড়ে জ্যোৎস্না
নেমেছে; এমনও রাতে,
ফিরে আসার পথে-
ও চাঁদ, তোমার জ্যোৎস্না কি জানে- আমায় কিভাবে
মেরে ফেলা হয়েছিল?
এক টুকরো কবিতা
সত্যিকারের কবিতা, কিচ্ছু বলেনা।
শুধু দরজা খুলে দেয়।
ঠিক আমার জন্য রাত জেগে জেগে
জোনাকির মালা গাঁথে!.
এইচআর/এমএস