নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ : নিঃসঙ্গ ও অভিনব শিল্পীর জমিন
কে বলিল হত্যাকাণ্ড পাপ!
এ জগৎ মহা হত্যাশালা। জানো না কি
প্রত্যেক পলকপাতে লক্ষ কোটি প্রাণী
চির আঁখি মুদিতছে। সে কাহার খেলা?
হত্যায় খচিত এই ধরণীর ধূলি।
প্রতিপদে চরণে দলিত শত কীট
তাহারা কি জীব নহে? রক্তের অক্ষরে
অবিশ্রাম লিখিতেছে বৃদ্ধ মহাকাল
বিশ্বপত্রে জীবের ক্ষণিক ইতিহাস।
হত্যা অরণ্যের মাঝে, হত্যা লোকালয়ে,
হত্যা বিহঙ্গের নীড়ে, কীটের গহ্বরে,
অগাধ সাগরজলে, নির্মল আকাশে
হত্যা জীবিকার তরে, হত্যা খেলাচ্ছলে,
হত্যা অকারণে, হত্যা অনিচ্ছার বলে
চলেছে নিখিল বিশ্ব হত্যার তাড়নে
ঊর্ধ্বশ্বাসে প্রাণপণে, ব্যাঘ্রের আক্রমে
মৃগসম, মুহূর্ত দাঁড়াতে নাহি পারে...
না, এটি কোনো কবিতা নয়, দার্শনিকতাকে প্রকাশের জন্য বিচ্ছিন্ন কোনো কাব্যাংশও নয়, এটি একটি বাংলা নাটকের অংশ। একটা চরিত্র অন্য একটা চরিত্রকে কথাগুলো বলছে!
পাঠক নিশ্চয় জেনে নিয়েছেন, নাটকটির নাম ‘বিসর্জন’। রচয়িতা কবিশিরোমণি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কোমলমতি, বিবেকতাড়িত জয়সিংহকে টলাতে রঘুপতি কথাগুলো বলছেন।
তখন রাঢ় বঙ্গ মধুসূদন কথিত ‘অলীক কুনাট্য রঙ্গে’ই মজে ছিল। নাটকে সংস্কৃত নাট্যঐতিহ্যে সূত্রধারও পাওয়া যাচ্ছে, অনেক উপমা কাব্যিকতার সংলাপ পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু এধরনের সম্পূর্ণতঃ একটি কবিতাই এত প্রলম্বিত দার্শনিক অভিপ্রায়ে প্রকাশ পাবে, সেটা বাংলা নাটক বোধ হয় প্রথম দেখতে পেল। বাংলা নাটক বলছি এ কারণে যে, পাশ্চাত্যে তার অনেক প্রমাণ মিলেছে তারও বহু বছর আগে। শেক্সপীয়ার নামের সেই মহান নাট্যকার ‘হ্যামলেট’ ‘ম্যাকবেথ’-এর মতো নাটকে সে উদাহরণ রেখে দিয়েছেন। ‘হ্যামলেট-এর দীর্ঘ দীর্ঘ বোধ-উপলব্ধি-ভাঙা-চোরা সংলাপ আমাদের আলোড়িত করে। কিন্তু বাংলা নাটকে এ যে একবারেই অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। যে মধুসূদন কাব্য হিসেবে ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ বা ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’ লেখেন, সেই তিনিই কাব্যিক চিরন্তনতা বা ক্লাসিক উচ্চতাকে পরিহার করতে বাধ্য হন তাঁর ‘কৃষ্ণকুমারী’ বা ‘পদ্মাবতী’ নাটকে। কারণ এগুলো ‘নাটক’। এগুলো ‘দর্শক’-এর জন্য দর্শককে বুঝতে হবে, বোঝাতে হবে। আর রবীন্দ্রনাথ সেই দর্শকদের প্রতিই রাখলেন আস্থা বা উচ্চাকাক্ষা। তিনি মনে করেন, ‘তাহারা নিজের কল্পনাশক্তি বাড়িতে চাবিবন্ধ করিয়া আসে নাই। কতক তুমি বোঝাইবে, কতক তাহারা বুঝিবে, তোমার তাহাদের এইরূপ আপসের সম্বন্ধ।’
তাঁর এই উক্তি যেমন নাট্যাভিনয় বা নাট্যনির্দেশনা ক্ষেত্রটিকে কল্পনামুখি ভাবাত্মক বাস্তবকৈবল্য-মুক্ত করে তুলল, তেমনি তাঁর আরেকটি উক্তি নাটক রচনাকে করে তুলল অনেক স্বাধীন, সাহিত্যমনোযোগী, স্পর্ধী।
তিনি তাঁর বিখ্যাত ‘রঙ্গমঞ্চ’ প্রবন্ধে নিজের নাট্যরচনার আপাত ‘অ-নাট্যসুলভ’ সাহিত্যিক উচ্চাকাক্সক্ষী রচনাশৈলীর পক্ষে কারণ দাঁড় করাতে সেউ উক্তিটি করেছিলেন : ‘স্ত্রৈণ স্বামী যেমন লোকের কাছে উপহাস পায়, নাটক তেমনি যদি অভিনয়ের অপেক্ষা করিয়া আপনাকে নানা দিকে খর্ব করে, তবে সে-ও সেইরূপ উপহাসের যোগ্য হইয়া ওঠে।’
এ-কথার মধ্য দিয়ে রচিত নাটক বা পাণ্ডুলিপির অভিনয়- যোগ্যতা মঞ্চায়ন-সম্ভাব্যতা ইত্যাদি শর্তগুলো দূর হয়ে গেল। বাংলা থিয়েটারের গোড়ার দার্শনিক স্তরে এটাকে এক ধরনের ‘বৈপ্লবিক’ চিন্তা বললে ভুল হয় না। বাংলা নাটককে অন্যান্য সাহিত্যকর্মের পাশে গুণে মানে স্থান দেবার জন্য, তার ভাষা-ভঙ্গিকে পাশ্চাত্য-অনুকারি রীতি, ধারা থেকে মুক্ত করতে এই তৎপরতা শুরু করেছিলেন তিনি।
আরও দৃঢ় মেরুদণ্ডে তিনি খাড়া হলেন নিজের মতের পক্ষে, আরও এক ধাপ পা বাড়িয়ে বললেন : ‘নাটকের ভাবখানা এইরূপ হওয়া উচিত যে, আমার যদি অভিনয় হউক তো হউক, না হয় তো অভিনয়ের পোড়াকপাল আমার কোনোই ক্ষতি নাই।’
এই স্পর্ধা বা দুঃসাহস দেখাতে গিয়ে রবীন্দ্রনাটককে কম বঞ্চনা সহ্য করতে হয়নি। দীর্ঘকাল। নিজে থিয়েটার করতেন, করাতেন বলে তিনি নিজে সেই স্পর্ধিত নাট্যভাষার মূর্তায়ন ঘটাতে পেরেছিলেন। কিন্তু তার বাইরে সেই রচনাকর্ম অনাদরেই পড়ে ছিল। শম্ভু মিত্রদের না পেলে রবীন্দ্রনাটককে গ্রন্থিত বস্তু থেকে নাট্য হওয়ার পথে আরও অনেকদূর অপেক্ষা করতে হত, এ-সন্দেহ উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
আমরা বলতে পারব না, রবীন্দ্রনাথ কি মতাদর্শ আগে প্রতিষ্ঠা করে সে-ধারায় নাটক লিখতে বসেছিলেন, নাকি নাটক রচনার পরেই মতাদর্শ প্রস্তুত করেছিলেন কিংবা দুটোই যুগপৎ গতিশীল রেখেছিলেন। এটা সন তারিখ মিলিয়ে হয়তো দেখা যেতে পারে, কিন্তু তার মানসিক রসায়নটি এত অন্দরের নিভৃতের বিষয় যে সে-হদিস পাওয়া বাইরের লোকের পক্ষে দুরূহ।
তবে সবকিছু ছপিয়ে বাংলা নাটকের একটা একলা, বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো ভূমি তৈরি হতে লাগল। তার কোনো পাড়া প্রতিবেশী বন্ধু-বান্ধব সঙ্গী দোসর মিলল না, আমাদের মজ্জায় ধমণিতে গেড়ে যাওয়া নাট্যবিষয়ক ধারণার ভূত নামাতে বাধ্য হল না তার অপচ্ছায়া; তার অনেক সামাজিক রাজনৈতিক কারণ হয়তো আছে। কারণ ব্যক্তি নিজেই একটা রীতি বা প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারে, কিন্তু সেটা সবসময় নয়। রবীন্দ্রনাথ নিয়মাবির্ভূত শিল্পস্রষ্টাও নন।
তিনি একাই নিজের নাটক-ভূখণ্ডের মানচিত্র তৈরি করতে থাকলেন। রচনা করলেন রক্তকরবী, রাজা, ডাকঘর... আরও অনেক নাটক, ঘটনা বা ক্রিয়ার চেয়ে যেখানে ভাব ও ভাবের বিচিত্র বিস্তার স্থান করে নিল। (এখানে স্মর্তব্য, এরিস্টোটলের নাট্যতত্ত্বের সাথে প্রাচ্যের ভরত নাট্যশাস্ত্রের একটা জায়গায় অমিল আছে, ভরতে ক্রিয়ার চেয়ে ভাবটাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবং কালিদাসের ‘শকুন্তলা’য় রাজা দুষ্মন্তের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার আগে বনের লতাপাতাজীব এবং সঙ্গী সহচরীদের সাথে তার আবেগঘন ও প্রলম্বিত দৃশ্যও প্রচলিত নাট্য-বহির্ভূত পরিকল্পনা বলা চলে এবং এটাও মনে করা বাহুল্য হবে না, রবীন্দ্রনাথ আমাদের মধ্যযুগের লোকপালাগুলোর সন্দর অন্দর বুঝতে পারেন নি, যেখানে এক নারীর বেদনাকে বারোমাস বা ছয় মাস বা চার মাসের প্রাকৃতিক অনুষঙ্গের সাথে মিলিয়ে একটা প্রবহমান ঘটনার মধ্যেই বিস্তৃতভাবে প্রকাশ করা হয়।)
ধ্বনিমাধুর্য, শব্দব্যঞ্জনা, অন্তর্গত আলোড়নের উৎসার, দার্শনিক অভিপ্রায় সবকিছু একাকার হয়ে গেল রবীন্দ্রনাথের নাট্যভাষ্যে। রাজা ও রানীর বিক্রমদেবের সংলাপ মনে করা যাক :
‘একি মুক্তি! একি পরিত্রাণ! কী আনন্দ
হৃদয়-মাঝারে! অবলার ক্ষীণ বাহু
কী প্রচণ্ড সুখ হতে রেখেছিল মোরে
বাঁধিয়া বিবর-মাঝে ! উদ্দাম হৃদয়
অপ্রশস্ত অন্ধকার গভীরতা খুঁজে
ক্রমাগত যেতেছিল রসাতল-পানে।
মুক্তি। মুক্তি আজি। শৃঙ্খল বন্দীরে
ছেড়ে আপনি পলায়ে গেছে। এতদিন
এ জগতে কত যুদ্ধ, কত সন্ধি, কত
কীর্তি, কত রঙ্গ কত কী চাহিতেছিল
কর্মের প্রবাহ আমি ছিনু অন্তঃপুরে
পুড়ে, রুদ্ধদল চম্পককোরক-মাঝে
সুপ্ত কীটসম। কোথা ছিল লোকলাজ!
কোথা ছিল বীরপরাক্রম! কোথা ছিল
হৃদয়ের তরঙ্গ-তর্জন! কে বলিবে
আজি মোরে দীন কাপুরুষ। কে বলিবে
অন্তঃপুরচারী! মৃদু গন্ধবহ আজি
জাগিয়া উঠিছে বেগে ঝঞ্ঝাবায়ুরূপে।
এ প্রবল হিংসা ভালো ক্ষুদ্র প্রেম চেয়ে
প্রলয় তো বিধাতার চরম আন্দ!
হিংসা এই হৃদয়ের বন্ধনমুক্তির
সুখ। হিংসা জাগরণ! হিংসা স্বাধীনতা!’
স্ত্রীর প্রেমে বুঁদ হয়ে থাকা রাজা বিক্রমদেব শত্রুর আক্রমণের খবরে এভাবে নিজেকে বিপ্রতীপ উচ্ছ্বসিত করে তোলেন, এই প্রতি-আক্রমণের মন্ত্রে স্পর্ধায় সাহসে তিনি ভাবের আগল ভেঙে কর্মকে ঠাঁই দিতে চান। একটি নাটকের মধ্যে একটি বিশেষ অনুভূতি বা প্রতিক্রিয়া জানানোর এই মহাপ্রলম্বিত সংলাপ যার প্রায় পুরোটাই ক্রিয়াত্মক নয়, ভাবাত্মক ‘নাটক’-এ বিরল ছিল। আমাদেরকে তা মনে করিয়ে দিল আমাদের নাট্য-মূলক পালারচনার ঐতিহ্যের কথা। এবং প্রাচ্যের একটি দার্শনিকতাকে হোক তা একটি বিশেষ সম্প্রদায়ে চর্চিত তিনি নাটকের ঘটনার উপলক্ষ নয় লক্ষ করে তুললেন। সেখানে দর্শনটির প্রতিষ্ঠাই মুখ্য, নাট্যঘটনা তার উপলক্ষ, সেই দার্শনিকতা হচ্ছে ভাব নয় কর্মেই মুক্তি। কিংবা কর্ম ও ভাব অদ্বৈত। আর নাটকের প্রচলিত শর্ত ‘দ্বন্দ্ব’ নাট্যঘটনার পাশাপাশি সংলাপের অন্তর্গত বৈপরীত্যে, দ্বন্দ্বে, আত্মপ্রশ্ন ও উত্তরের মুহুর্মুহু খেলায় নিল বিচিত্রতর রূপ।
এ ধরনের রচনাপ্রকরণ নাটকরচনায় যেমন এক বিস্তর ভাব-কল্পনা-কাব্যিকতা সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হল, তেমনি নাট্যনির্মাণেও নির্দেশককে সাহসী হবার পথ দেখাল তাঁরই আরেক বাণী : ‘প্রাচ্যদেশের ক্রিয়াকর্ম খেলা আনন্দ সরল-সহজ। কলাপাতায় আমাদের ভোজ সম্পন্ন হয় বলিয়া ভোজের যাহা প্রকৃততম আনন্দ, অর্থাৎ বিশ্বকে অবারিতভাবে নিজের ঘরটুকুর মধ্যে আমন্ত্রণ করিয়া আনা, সম্ভবপর হয়। আয়োজনের ভার যদি জটিল ও অতিরিক্ত হইত তবে আসল জিনিসটাই মারা যাইত।’
নাট্যনির্মাণে, দৃশ্যউপস্থাপন ও অভিনয়সজ্জায় আড়ম্বর, ডিটেইলস বা পুঙ্খানুপুঙ্খতার দায় খারিজ হয়ে গেল তাঁর এই উক্তির মধ্য দিয়ে। নাটকের মতো নাট্যও হয়ে উঠল প্রচণ্ড কল্পনামুখি সৃষ্টিশীল একটি প্রকরণ। সেজন্যই ‘রক্তকরবী’র মতো অবিশ্রাম মুক্তি ও বন্দীত্বের আত্মখেলায় অন্তর্মুখি সংলাপভাষাও মঞ্চে আনা সম্ভব হল, শুধু হল-ই না প্রবল জনপ্রিয়ও হল।
রক্তমাংসের নির্দিষ্ট চরিত্র বা মানুষ নাটকে যতটুকু স্থান পেল, তার চেয়ে বেশি ঠাঁই পেল মানুষের বা চরিত্রের এক একটা আর্কিটাইপ। এবং তার নিরন্তর দার্শনিক অভিপ্রায় ও জিজ্ঞাসা। রচিত হল প্রাচ্যের নাটক ও নাট্যকলার এক স্বতন্ত্র ও স্বকীয় জগৎ। তা মূলত প্রতীকী।
নাটককে কাহিনী বা ঘটনা-অঘটন-দুর্ঘটনের আধার হিসেবে দেখতে চাইলেন না রবীন্দ্রনাথ। তিনি ভাব বা আইডিয়ার শক্তিতে বদলিয়ে দিতে চাইলেন খোদ নাটকেরই ধরনকে।
সব চরিত্র, সব সংলাপ ক্রিয়া যেন সেই বিশেষ ভাব বা আইডিয়াকে সম্পন্ন করার জন্য মরিয়া হয়ে ছুটছে। সৈয়দ আলী আহসানসহ অনেক পণ্ডিত, সমালোচক বিষয়টাকে রবীন্দ্রনাট্যের দুর্বলতম দিক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু ‘ডাকঘর’ দেখার পর এক প্রত্যক্ষদর্শী যখন মন্তব্য করেন `For where art is there is life, and the loftier, serener, more symbolic is that art, the nearer is man to God’, তখন নিশ্চয় সেই সমালোচনাটাও চ্যালেঞ্জেরে মুখে পড়ে। তাই একেবারেই সমকালে যখন বাংলা নাটক তার একটা আপন দেশ ও ভূমি খুঁজে পাবার স্বপ্নে মেতে উঠেছে, তখন রবীন্দ্রনাথের সেই ‘অ-নাটকসুলভ’ রচনাশৈলী দাঁড়িয়ে পড়েছে দারুণ সহায়কের ভূমিকায়।
আধুনিক অন্যান্য শিল্প বা সাহিত্য মাধ্যমের সাথে এই নাট্য আঙ্গিকটি বরাবরই একটু পিছিয়ে ছিল ভাবগত উৎকর্ষে। কারণ পাত্র-পাত্রীর কথা বা সংলাপ ছাড়া নাটকে আর কিছুই উপস্থাপন আদতে সম্ভব ছিল না। সংস্কৃত নাটকের যে সূত্রধর, সে আসলে ঘটনার সূত্র উপস্থাপনকারী ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু উপন্যাস বা গল্প যে কোনো পাত্র পাত্রীর সংলাপ, লেখকের বর্ণনা, নানান মনোস্তাত্ত্বিক অবস্থার বিবরণ নিয়ে একটা বিচিত্র ও পূর্ণাঙ্গ কলেবরে নিজেকে বেঁধে ফেলতে পারে, নাটক ছিল সেখানে অচল, সেজন্য দুর্বলও।
আমরা গভীরে বুঝে নিতে পারি, রবীন্দ্রনাথের নাটকরচনার মর্মে একটা সাহিত্যিক আক্ষেপই ছিল প্রধান। তাঁর অনেক অনেক কাল পরে এসে যে-তাড়না অনুভব করলেন আমাদের সেলিম আল দীন। তিনি ঐতিহ্যের আবিষ্কার ও নবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলা নাটককে আরেক অভিনব রূপ দিয়ে গেলেন। এবং সেলিম আল দীন স্বীকার করেছেন, রবীন্দ্রনাথই তাঁর ভেতরকার নান্দনিক তীব্র অনুপ্রেরণা ।
বর্ণনাত্মক নাট্যরীতির যে ধারা আমরা হালে চর্চা করছি, তার মূল কিন্তু কেবল মধ্যযুগের বঙ্গ নয়, তার এক দূরান্বয়ী অবলম্বন রবীন্দ্রনাথ। কারণ তিনিই প্রথম বঙ্গের বর্ণনাত্মক নাটককার। সংলাপের ভেতরেই কীভাবে বর্ণনার অফুরন্ত ফল্গুধারা বইয়ে দেওয়া যায় তিনিই প্রথম তা দেখিয়েছিলেন। আর একেবারে হালে এসে যখন বর্ণনাত্মক নাটকধারা নানান প্রশ্নের মধ্যে পড়েছে, দুর্বল রচনার জীর্ণ আশ্রয়ে যখন ক্রমাগত এই ভাবকুটিরখানা ভেঙে পড়তে বসেছে, তখন রবীন্দ্রনাথের সেই একলা বিচ্ছিন্ন দ্বীপটিতে নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায় আমরাও ভ্রমণ করে আসতে পারি।
এইচআর/আরআইপি