ফখরুল হাসানের কবিতা
কবরস্থান অথবা পৈতৃক ভিটা এবং অন্যান্য
কবরস্থান অথবা পৈতৃক ভিটা
মৃত্যু সে তো এক মুহূর্তের ঝড়
প্রতি মিনিট প্রতি ঘণ্টা প্রতিদিন
তার জন্য আয়োজন, রসিকতা নয়!
এদিকে আজকাল মৃত্যুকে মনে হয় ডাকঘর...!
অন্যদিকে আঙুলে তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকার পরও
শখের ভায়োলিন ছুঁয়ে দেখা হয় না
হাজার চেষ্টার পরও সুর ওঠে না বাঁশিতে
অথচ এত অপারগতার মাঝেও
বেঁচে থাকা নিয়ে কত আয়োজন।
জীবনের ফলাফল আসলে কী?
মাঝে মাঝে মনে হয় জীবন একটা ঝুলন্ত রশি
বা গলায় জড়ানোর অপেক্ষায় থাকা ফাঁসির দড়ি
এসব ভাবতেই ভয় হয় বড্ড ভয়
অথচ জল্লাদও স্বজন হতে পারে অনায়াসে।
তবু যেন চরম বিরক্তিকর লাগে বন্ধনে আটকে থাকা
চিরতরে চলে যাওয়া স্থানই কি পৈতৃক ভিটা।
পৈতৃক ভিটা বলতে আমি অবশ্য কবরস্থানই বুঝি
উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া, পূর্বপুরুষের ঘর
বাকি সব ভূমি মিছে মায়া
যেমন মৃত্যু অথবা আমি একে অপরের পরমাত্মীয়।
****
আত্মহত্যা অথবা উচ্ছিষ্ট
পরপর কয়েকবার আত্মহত্যা করতে গিয়ে
বিষাক্ত পোকামাকড় লোভী শেয়ালের হাঁক
কুকুরের কান্না বাধ্য করে ফিরে আসতে।
আত্মহত্যা করতে গিয়ে দেখি স্তূপে স্তূপে
উচ্ছিষ্ট খাবার, উদর ভরতে বেরিয়ে আসে
লম্বা জিহ্বা, কে বা কারা হাতের লাঠি দিয়ে
সপাং শব্দে বসিয়ে পিঠ বরাবর। চিৎকার
করে ডেকে উঠতে পারি না, কেননা এতে
আঘাতের বেগ ও পরিমাণ আরও তীব্র হবে।
দেশের নোংরা রাজনীতির বুলডোজারে পিষ্ট
জেলে বেদম মারপিট খাওয়া শরীর যেমন
আন্দোলনে নামতে চায় না। তেমনই আত্মহত্যা
অন্তিম ইচ্ছা, ভেতরের বুনো শুয়োরের সাথে
পাল্লা দিয়ে অস্তিত্ব রক্ষার প্রতিযোগিতা করে।
নিস্তব্ধ তালপুকুরে আকাশ যেমন উপুড় হয়ে পড়ে
ঝুলন্ত শরীর না ঘুমিয়ে ইঙ্গিত দেয় তার খাদ্য চাই।
ব্রহ্মপুত্রের জলে অতলে ঝাঁপ দিতে গিয়ে দেখি
তার বুকের ভেতরটা ব্রাশফায়ার করা।
ক্ষত-বিক্ষত নদীর জলে আত্মহত্যা হলো না
নদীটি অসহ্য চিৎকার করে তাড়িয়ে দেয়।
অথচ আত্মহত্যাই ছিল একমাত্র মুক্তির বার্তা।
এসইউ/জেআইএম