উর্দু থেকে ইংরেজিতে রাহাত আরা বেগমের গল্প
‘অনেক দিন আগে’ হারিয়ে যাওয়া গল্প, উর্দু ভাষায় লিখেছিলেন রাহাত আরা বেগম। গুপ্তধনের মতো সেসব লুকানো ছিল পরিবারের জিম্মায়। বহুকাল পর লেখিকার নাতনির উদ্যোগ ও সম্পাদনায় ইংরেজি অনুবাদে বই আকারে প্রকাশিত হলো গল্পগুলো।
১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগ হওয়ার আগে কলকাতায় থাকতেন রাহাত আরা বেগম। লেখালেখি করতেন উর্দু ভাষায়। প্রয়াত হন ১৯৪৯ সালে। দেশভাগ ও রাজনৈতিক ডামাডোলে তার অনেক সাহিত্যকর্ম হারিয়ে যায়। পরিবারের কাছে গচ্ছিত অংশগুলোর সংকলন ‘লস্ট টেলস ফ্রম আ বাইগন এরা’ প্রকাশ করেছে নিমফিয়া পাবলিকেশন।
২৫ ডিসেম্বর বুধবার ছিল ‘লস্ট টেলস ফ্রম আ বাইগন এরা’ বইটির মোড়ক উন্মোচনের আয়োজন। সন্ধ্যায় বনানীর চারুতা মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অনুবাদক, সম্পাদক ও বিশিষ্টজনেরা।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক সাদাফ সাজ। তিনি বলেন, ‘এখানে উর্দু ভাষা রাজনৈতিকভাবে উপেক্ষিত ছিল। তাই উর্দু সাহিত্যের সৌন্দর্য, বিশেষ করে রাহাত আরা বেগমের মতো লেখকদের কাজ এতকাল খুঁজে পাওয়া যায়নি।’
‘লস্ট টেলস ফ্রম আ বাইগন এরা’ বইয়ে রয়েছে নয়টি গল্প। ‘দ্য সাউন্ড অব দ্য ফ্লুট’, ‘দ্য বেগার ওম্যানস টেল’, ‘দ্য সঙ অব দিলনাওয়াজ’, ‘দ্য কনফেশন’, ‘দ্য ইয়াং স্টুডেন্ট’, ‘ফ্রিডম’, ‘জাস্টিস’, ‘মাজদাস টেল’, এবং ‘নাসরা’ গল্পগুলো তার চার গল্পসংকলন ‘প্রেমি’, ‘ইনকিলাব’, ‘গঞ্জে আফসানা’, ‘মনতাখাব আফসানে’ থেকে নেওয়া হয়েছে। জোর করে বিয়ে দেওয়া, ত্রিভূজ প্রেম, দেখা-শোনার বিয়ে, ঈর্ষা ও স্বাধীনতার জন্য নারীর আকাঙ্ক্ষা উঠে এসেছে তার গল্পে।
উর্দু থেকে গল্পগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন নীমান সোবহান, রুখসানা রহিম চৌধুরী এবং আমের হুসেন। ভূমিকা ও লেখকের জীবনীসহ বইটি সম্পাদনা করেছেন লুবনা মারিয়াম। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি।
অনুবাদক নীমান সোবহান বলেন, ‘তার গল্প থেকে তখনকার নারীদের ঘরের ভেতর অবরুদ্ধ থাকার কঠোর নিয়ম কানুনের কথা জানা যায়। তার ছিল সংবেদনশীলতার সঙ্গে গল্প বলার অনন্য ক্ষমতা। স্বাভাবিক কথোপকথনকেও তিনি দূর্দান্তভাবে সংলাপে রূপ দিতে পারতেন।’
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সুপার নিউমারারি অধ্যাপক ফকরুল আলম। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘রাহাত আরা বেগম দক্ষিণ এশিয়ার বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের একজন নারী লেখক ছিলেন। ঐতিহাসিকভাবে তিনি তাৎপর্যপূর্ণ। নারীদের পর্দার বিষয়টি আমাদের সমাজে এখনও প্রাসঙ্গিক বলে তার গল্পগুলোও এখনো প্রাসঙ্গিক ও সমসাময়িক হয়ে আছে। তার লেখা সহজপাঠ্য, তবে চিন্তার খোরাক জোগায়।’
বইয়ের একটি গল্প নিয়ে কথা বলেন লুবনা মারিয়াম। তিনি বলেন, ‘তার দিলনাওয়াজ গল্পটি সুফি অভিব্যক্তিতে লেখা ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসার একটি প্রতীকী ধরণ। বইটি রাহাত আরার পরিবারের যৌথ প্রচেষ্ঠার ফল।’
অনুষ্ঠানের শেষে ‘দিলনাওয়াজ’ গল্পের ওপর ভিত্তি করে একটি ছোট্ট নৃত্যনাট্য পরিবেশিত হয়। লুবনা মারিয়াম পরিচালনায় কানাডিয় নৃত্যশিল্পী সাশার জারিফের প্রশিক্ষণে সাধনার একঝাঁক নৃত্যশিল্পী এটি পরিবেশন করেন। মূল চরিত্রে ছিলেন বিজু ও ইরা।
আরএমডি/এএসএম