মেহেদী হাসান শুভর চারটি কবিতা

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০৩ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

 

শেষ সন্ধ্যার গল্প

তুমি চলে গেছো।
আকাশে তখন সন্ধ্যা নামছিল ধীরে,
আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম একা—
তোমার ছায়া মিলিয়ে যাচ্ছিল দূরে।
আমি কিছু বলিনি।
বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু শব্দরা ঠোঁটের কাছে এসে
বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

তুমি ফিরে তাকাওনি।
হয়তো তাকালেও আমি দেখিনি।
কারণ আমার চোখ তখন
একবুক সমুদ্র ঢেলে দিয়েছে।
তুমি জানলে না,
তোমার চলে যাওয়ার পদচিহ্ন
আমার বুকের ভেতরে রয়ে গেল চিরকাল।

তুমি বলে গিয়েছিলে, ভালো থেকো।
কিন্তু ভালো থাকা কি এত সহজ?
তোমার ছোঁয়া যেখানে রয়ে গেছে,
তোমার গন্ধ যেখানে এখনো টিকে আছে বাতাসে,
সেখানে ভালো থাকা মানে প্রতিনিয়ত ছটফট করা।

আমি ভুলে যেতে চাই,
কিন্তু স্মৃতিরা এতটা সহজ নয়।
তারা রাতের নিস্তব্ধতায় ফিরে আসে,
তোমার কণ্ঠস্বর হয়ে বাজে আমার কানে।
তারা ভোরের আলোয়
তোমার হাসির ছায়া ফেলে দেয় চোখের পাতায়।

তুমি চলে গেছো,
আমি রয়ে গেছি।
সময় বয়ে যাচ্ছে,
তবু আমার সময় থমকে আছে
তোমার শেষ বিদায়ের মুহূর্তে।

আমি জানি, তুমি আর ফিরবে না।
তবু অপেক্ষা শব্দটা
আমার বুকে শেকল হয়ে বেঁধে রেখেছে।
আমি এগোতে চাই,
কিন্তু পেছনে টেনে ধরে এক অসমাপ্ত গল্প।

তুমি চলে গেছো।
কিন্তু তোমার ছায়া এখনো হাঁটে আমার পাশে—
নিঃশব্দে, নিরলস।

****

বিদ্রোহী প্রেম

আমি প্রেমের গল্পে জ্বলেছি,
ফুলের মতো ফুটেছি কারো চোখে।
আমি নরম হাতের ছোঁয়ায়
শীতল নদীর মতো বয়ে গেছি—
তবু আমার বুকে ছিল লুকানো আগুন।

আমি ভালোবেসেছি ভোরের সূর্যকে,
যার আলোয় ঘুম ভাঙে মানুষের।
আমি ভালোবেসেছি সন্ধ্যার নক্ষত্রকে,
যে নিঃসঙ্গ হৃদয়ে ছড়ায় স্বপ্ন।
কিন্তু যখন দেখেছি প্রেমের নাম ভাঙিয়ে
বিক্রি হচ্ছে মানুষের রক্ত,
তখন আমার চোখে উঠে এসেছে বিদ্রোহের আগুন।

আমি একসঙ্গে প্রেমিক আর বিদ্রোহী।
আমার হাত একবার নরম ফুল তোলে,
আবার সেই হাত শিকল ভাঙে।
আমি ভালোবাসতে জানি,
কিন্তু অন্যায় দেখলে আমিই হয়ে উঠি দাবানল।

তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিলে—
আমি প্রেমে সাড়া দিয়েছি,
কিন্তু যখন দেখলাম তোমার চোখেও
লুকিয়ে আছে শৃঙ্খলের ছায়া,
আমি নিজেকে ছিঁড়ে বেরিয়ে এলাম।

আমি প্রেমে বাঁধা পড়তে চাই,
কিন্তু সে প্রেম হতে হবে মুক্তির,
সে প্রেম হবে বিদ্রোহের গান।
যেখানে ভালোবাসা হবে সম্মানের,
যেখানে প্রেম মানে হবে হাত বাড়িয়ে দেওয়া,
না যে শেকলে বাঁধার ফাঁদ।

আমি প্রেমিক—
তবু আমি দ্রোহীও।
যতক্ষণ পর্যন্ত ভালোবাসা হবে মুক্তির,
ততক্ষণ আমি প্রেমিক।
আর যখন প্রেম পরিণত হবে শেকলে,
আমি হয়ে উঠবো আগুন।

****

বিপ্লবী

আমি জন্মেছিলাম শেকল ভাঙার জন্য।
আমার শিরায় বইছে বংশগত বিদ্রোহ।
আমি কুঁকড়ে যাইনি কোনো অন্যায়ের সামনে,
আমার পিঠ ঝোঁকেনি প্রভুর লাঠির নিচে।
আমি জানি, এই মাটি আমার, এই আকাশ আমার।
তবে কেন শেকল পরাবার চেষ্টা?
কেন আমার কণ্ঠরোধের আয়োজন?

আমি জাগবো।
আমি জাগাবো মৃতপ্রাণ জনপদ।
তাদের চোখের ঘুম সরিয়ে দেবো—
দেখাবো স্বপ্নের রং আর বাস্তবের কণ্টকময় পথ।
আমি জানি, পথে কাঁটা থাকবে,
তবু আমি হাঁটবো,
কারণ আমি জন্ম নিয়েছি হেঁটে যাওয়ার জন্য।

এই শহর, এই গ্রাম, এই ধুলো-ধোঁয়ায় ভরা বাতাস—
সব আমারই মতো ক্লান্ত,
সব আমারই মতো ক্ষুধার্ত।
তাই আমি তাদের পক্ষে দাঁড়াবো।
আমার কণ্ঠে ঝংকার তুলবে বিপ্লবের ভাষা।

আমি অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দেবো—
সেই আগুনে পোড়াবে পাপের নগরী।
আমি জানি, ধ্বংসই গড়ার শুরু।
আমি গড়বো নতুন ভোর, নতুন দিগন্ত,
যেখানে মানুষ মানুষকে চিনবে মানুষ বলে।

আমি জন্মেছিলাম শেকল ভাঙার জন্য।
তাই আমি ভাঙবো।
তাই আমি গড়বো।

****

জীবন কী?

সৃষ্টি-প্রেম-বিচ্ছেদ-দ্রোহ-সংগ্রাম-ধ্বংস
হ্যাঁ, অনুধাবন করে আরেকবার পাঠ করো হে পাঠক
তবে, এবার আনমনে; একাকী, নেত্রপল্লব শান্ত করে
বদ্ধদৃষ্টিতে!
হে পাঠক! যা দৃশ্যায়িত হলো তোমার অভ্যন্তরে
তোমার হৃদয়ের আয়নাতে তাই জীবন নয় কী?

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।