অনিরুদ্ধ সাজ্জাদের কবিতা
আগুনের শহর এবং অন্যান্য
আগুনের শহর
তুমি বলেছিলে, মানুষের জীবনে
স্বপ্নের চেয়ে বড় কিছু নেই;
অথচ কোথাও ধ্বংসের গান বাজে,
কোথাও প্রতিশ্রুতির;
স্বপ্ন নিত্য খুন হয় মানুষের হাতে।
আগুনের শহরে যুদ্ধঘোরে
জেগে ওঠে রক্তের নদী
ধোঁয়া ওঠা ছাঁইয়ের ভেতর
হারিয়ে যায় মানুষের নাম।
কোথায় সেই আলো? কোথায় সেই কণ্ঠ
বলবে বেঁচে থাকো, ভালোবাসো?
নির্জন চাঁদের আলোর মতো
ম্লান হয়ে আসা শেষ রাতে
ধোঁয়া-ঢাকা স্মৃতির ঘূর্ণিতে
তোমার কথা, শব্দগুলো হারিয়ে যায়।
তুমি কে? মানুষ, পাখি না জলরেখা?
একটি সন্ধ্যা, একটি ভোর, নাকি
নিস্তব্ধতার গভীর থেকে উঠে আসা
একটি অন্ধকারের আলাপ?
শুধু জানি, তুমিও পালিয়ে যেতে চাও,
অন্য এক আকাশের নিচে।
পালাবার জায়গা কি আর বাকি আছে?
তবে জেগে উঠুক ঘুমিয়ে থাকা দ্রোহ,
যে প্রশ্ন ভুলে গেছি আজ সে-ই হোক উত্তর
আগুনের ভাষা শিখে নিক পৃথিবী,
আমরা হবো এক নতুন কবিতার পাতা।
****
বিবর্ণ সময়
শীতের নীরবতা যেন শব্দহীন সমুদ্র,
জমাট শূন্যতার গান;
হিমেল বাতাসে পাতা ঝরে,
ঠান্ডা নিশ্বাসে ক্লান্তির টান।
অন্তহীন তৃষ্ণা বয়ে চলা নির্জনতা
ধূসর পথে আঁকা,
সিক্ততাহীন মাটির বুকও
কুয়াশার আস্তরণে ঢাকা।
পথের ধারের গাছেরা দাঁড়িয়ে আছে
নির্বাক, পাতাগুলো খসে পড়ে,
বুকের গভীরে কোথাও শীতলতা জমে,
কোনো নিঃশেষে ভেসে মরে।
জীবনও এমন কোনো এক
ঋতুর শেষে বাঁচতে শেখে,
তুষারের নিচে চাপা পড়া গল্পেরা
আবার কখনো হাসতে শেখে।
****
প্রান্তরেখা
আকাশের পথে সন্ধ্যা গুছিয়ে
তোমাকে দিয়েছি ছিন্নমলিন ক্ষণ,
সূর্যাস্তের ধূসর রাঙা গানে ভেসে
আসে বিষাদের অনুরণন।
কিছু স্মৃতিধারা থেমে গেছে পথে,
কিছু স্বপ্নবাক্য ভেঙে গেছে ধীরে,
নিরন্তর শূন্য ফ্রেমে ঝুলে থাকা
অন্যায় ছবির ছাপ পড়েছে নীড়ে।
বাতাসে গড়ায় শুকনো পাতারা
যাপিত দিনের জীবন হলো চুরি,
পাতা-কুড়োনিরা স্বপ্ন কুড়াতে এসে
দেখে ধুলোদের বাহাদুরি।
কিছু ধুলো জমে ব্যর্থতার পায়ে,
কিছু পাখি কাঁদে নীরব ঝড়ে ভেসে,
ব্যাকরণের সীমানা পেরিয়ে দেখি
বিষাদের আলো থমকে গেছে শেষে।
এসইউ/এমএস