গোপাল রায়ের একগুচ্ছ কবিতা

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩৮ পিএম, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

৩৬০ ডিগ্রি

পোয়াতি ধানের মাঞ্জায় শিশির মেখে দেয় ভোর নিশিকন্যা;
শেফালি বাতাসে টোন খায় মাকড়সার জাল,
পলিমাটির সোঁদা গন্ধে মাথা চিতোয় বিন্নাঘাস
তাতে শামুকভাঙা খোলসে বাসা বাঁধে গুবড়ে পোকার দল
আর স্বর্ণা ধানের বুক ফেটে বের হওয়া সাদা খৈ বদলে যায় সোনালি গুড়ের সাটায়!
মাছরাঙার অপেক্ষা প্রহরে ডুব দেয় পানকৌড়ি;
শিশির ও ঝরাপাতার বদৌলতে সময় ৩৬০ ডিগ্রি বরাবর ঘুরে এসে-
সাদা কাশফুলের মতো সাদা করে দেয় মায়ের মাথার চুল!

****

কাক

প্রেমের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে তুমি হবিষ্যি ভাত ছিটিয়ে যে কাকের আহ্বান করেছিলে সেসব কাকের মধ্যে আমিও একটি কাক ছিলাম!
পুনরায় ভালোবেসে ডেকেছিলাম কা কা...!

তোমার পায়ের আঙুলে ঠোঁকর মারতেই তুমি পুনরায় হুস করে তাড়িয়ে দিয়েছিলে,
তাই হৃদয় আসন এখনো ফাঁকা!

****

ভাষা

টাটা দিতে ভয় করে
দিচ্ছি না তাই,
টাটা দিলে চলে যাও
পরে থাকি একাই!

ভালোবাসা পরে থাকে
পরে যায় স্তূপে চাপা,
বোঝেনি সে সেই ভাষা
ধ্বনি থাকে না তাতে-
থাকে হৃদয় ও ঠোঁট কাঁপা!

****

আগমনী বার্তা

ফাটল ধরে পাঁচিলে, ঘুনে খায় বাঁশের মাড়ল কাবাড়ি পোই
গোবরের গৈঠা জ্বালে বল্লার টোপের মত ফুটে ওঠে মুড়ি ও খৈ।

কবে যাবে বউমেলা পরে পুতির মালা ও কুচি করে কাতান
এই ভেবে কাক তাড়ায় আর বেছে ফেলে খৈয়ের পাতান।

মুড়ির মোয়া হয়, খৈগুলো সেটে যায় লাল ও হলুদ গুড়ে;
মায়ের জন্য কাঁদে শিশুটি আর মাটির ঢেলা খায় কুড়ে কুড়ে।

শিশুর হামাগুড়ি কান্না থেমে যায় মায়ের দুধের বোঁটায়
যেন বিধ্বস্ততা ভেসে যায় তিলক আর খড়িমাটির ফোঁটায়।

আলের ঘাসের পাতায় পাতায় শিশির চিতিয়ে দেয় বুক,
কাদামাটির কৌমে উজ্জ্বল হয় কলমি লতার মুখ।

তুমুল বৃষ্টি, ভয়ংকর ঝড় কিংবা রোদের নেই কোনো ঠাঁই;
কাশফুল ও সাদা মেঘে মেঘে মায়ের আগমনী বার্তা পাঠাই।

****

সত্যের পতাকায় ওড়াও আমাকে

আমি ছুটতে চেয়েছি দূর-দূরন্তে সুন্দরের ’পর
আমাকে ভাসিয়ে নাও বেহুলা তোমার অজয় ভেলায়
সর্প দিয়েছে বিষ হয়ে আছি মৃত লখিন্দর
কালঘুম থেকে উত্তরায় নাও ভালোবাসার খেলায়।

আমার জন্মের পর কেটে নেওয়া হয়েছে বৃদ্ধাঙ্গুল
তাকাতে পারিনি চোখ ঝলসে দিয়েছে অলক্ষ্য জ্যোতি
আমাকে মেরে ফেলা হয়েছে শুকিয়ে কাল ফুল
আত্মা থেকে হাড্ডি পরিশ্রান্ত তবু হয়নি নাকি কোনো ক্ষতি!

চোখের মঞ্চে মঞ্চায়িত হতো যে সবুজের অহমিকা
তেপান্তর থেকে রণাঙ্গন ছুটতাম যে দিগ্বিদিক
হৃদয়ের দোদ্যুলে জ্বলতো যে অমিয় শিখা
জাহাজ ফেরার পথে আমি এখন ডুবন্ত নাবিক।

হে সত্য, হে প্রকৃতি, হে আলোকোজ্জ্বল অমিয় বাণী
সত্যের পতাকায় ওড়াও আমাকে ঘুচিয়ে সব গ্লানি।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।