মুহম্মদ আবু বকরের গুচ্ছ কবিতা

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:০০ পিএম, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

১.
এমনও দিন ছিল;
যখন মেয়েদের নাম রাখা হতো রোজিনা আপা
আর যুবকদের নাম থাকতো মিঠু ভাই।
তখন যুবকেরা টিয়া পালতো আর কাচারিঘরে লজিং থাকতো
আর কাচারিঘরের ভাঙা জানালা দিয়ে
কারা সব নামে-বেনামে চিঠি রেখে যেতো।

তখন ‘ইতি’ শব্দটা সমাজে খুব লজ্জার ও গোপনীয়তার ছিল।

২.
(জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুবার্ষিকীতে)

শিয়ালদহ থেকে বিকেল চারটায় ট্রেনটা ছেড়ে আসবে। কতকাল দেশে যাওয়া হয়নি! আজ সে দেশে যাবে। সে কি দেশে যাবে না? যাবে সে দেশে আজ। ট্রেনের এখনো ঢের দেরি আছে। কুলির মাথায় মোট চাপিয়ে শিয়ালদহ থেকে ট্রেনটা বিকেল চারটায় ছেড়ে যাবে, তারপর মাঠঘাট খেজুরের প্রান্তর পেরিয়ে রাত করে ট্রেনটা খুলনা স্টেশনে থামবে, সেখান থেকে স্টিমারের থার্ড ক্লাস, সারারাত শেষে ভোর ভোর স্টিমার দেশে এসে পৌঁছবে, কুয়াশার ভেতর দূর থেকে আবছা দেখা যাবে আলকাতরায় লেখা ‘বরিশাল স্টিমারঘাট’, ঝিলকান্দির গাড়োয়ান কলিমুদ্দি দৌড়ে আসবে, হুজুর হুজুর, এতদিন পর আইলেন! আজও কলিমকে হতাশ করতে হবে, কলকাতার মেসে থেকে এতদিনেও সে কিছু সুবিধা করে উঠতে পারলো না, পয়সার টানাটানি এতদিনেও তার ঘুচলো না। কুলির কাছে ছাতকুড়া পড়া শতরঞ্জি আর টিনের স্যুটকেসটা দিয়ে হেঁটে হেঁটেই সে বগুড়া রোডের বাড়ির দিকে চলবে।

৩.
মানুষ দেশের খবর নিতে আহ্লাদ বোধ করে
কেউ দেশে গেছে শুনলে আমরা জিজ্ঞেস করি
‘কিরে বিল হুগাইছে’, পূজার আয়োজন শুরু হয়ে গেছে?
আর নমোকান্দির ঘাটে মেলা?
দেশটাকে অনেক অনেক দূরে মনে হয়
অথচ পদ্মাটা পার হলেই তো দেশ।

শহরে পড়ে থেকে থেকে আমাদের মনে হয়
দেশে কত কী-ই যেন ঘটে গেছে।

আসলে হয়তো তেমন চাঞ্চল্যকর কিছুই ঘটে না।

৪.
হিন্দুরা সময় করে একদিন ওপারে চলে যায়
যেমন ঢাকা থেকে একদিন না একদিন
মানুষ পাকাপাকিভাবে দেশে চলে আসে
কারণ দেশে তাদের চাচা খালু, বাল্যকালের নাপিত
আর পশ্চিমধারের ফজলি আম গাছ আছে।

যেসব হিন্দুরা সাতচল্লিশে আর একাত্তরে যেতে পারেনি
ওপারে তাদের হিন্দুদের দেশ এই ধারণা নিয়ে
তারা সময় করে একদিন হঠাৎ চলে যায় ওপারে
ওপারে গিয়ে তারা মিলিয়ে যায় শিয়ালদহ আর হাওড়ার জনস্রোতে।

৫.
দেশভাগের ছিয়াত্তর বছর পরেও
হিন্দুরা একে একে ওপারে চলে যাচ্ছে।
বাজারের ধনঞ্জয়, ওর কাছে চুল কাটাতাম
একদিন শুনলাম বউ বাচ্চা নিয়ে ইন্ডিয়া চলে গেছে—
কলকাতার কাছে গোবরডাঙ্গায় ওর পিসিরা থাকে—
ওদের কাছে, আর আসবে না এদিকে
শুনে মনটা একেবারে দমে গেল।

কোনো কোনো দিন চুল কাটাতে গিয়ে বসে থাকলে
ধনঞ্জয় বলতো, ‘লন দাদা আগে এট্টা বিড়ি খায়া আহি’
ওপারে গিয়ে ওরা কি বাঙাল ভাষাটাও ভুলে যায়?

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।