স্মরণে ও শ্রদ্ধায় গোলাম মুরশিদ

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:১৩ পিএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন। তাঁকে স্মরণ করতে ও শ্রদ্ধা জানাতে ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ভার্চুয়ালি ‘স্মরণে ও শ্রদ্ধায় গোলাম মুরশিদ’ শিরোনামে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘এমন নিষ্ঠাবান গবেষক দেখিনি।’ নগরবিদ ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তাঁর অসাধারণ মেধার বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় ৬২ সালে এমএ পরীক্ষার ফলাফলের মাধ্যমে। গোলাম মুরশিদ আমাদের মধ্যে বেঁচে আছেন এবং থাকবেন চিরদিন।’

ভাষাতাত্ত্বিক ড. পবিত্র সরকার বলেন, ‘তাঁর কাজ বাংলা গবেষণার সম্ভ্রম বাড়িয়েছে।’ আন্তর্জাতিক মিডিয়া-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পঙ্কজ সাহা বলেন, ‘এলিজার (গোলার মুরশিদের সহধর্মিনী) সাহচার্য ও যত্ন গোলাম মুরশিদ না পেলে গোলাম মুরশিদ হয়ে উঠতে পারতেন না। বাংলার মানুষ গোলাম মুরশিদকে ভুলবার কোনো উপায় নেই।’

অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা বলেন, ‘ড. মুরশিদের গুণ তাঁর ছেলে-মেয়ে দুজনেই পেয়েছেন, সেটা হলো অসীম কাজ করার ধৈর্য ও ক্ষমতা।’ গোলাম মুরশিদের সহধর্মিনী এলিজা মুরশিদ বলেন, ‘আমার স্বামীকে যে এত মানুষ ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে তা উনি বেঁচে থাকতে বুঝতে পারিনি।’

অধ্যাপক শফি আহমেদ বলেন, ‘চলে যাওয়ার আগে লিখতে না পারার আকুতি ছিল গোলাম মুরশিদের খুব বেশি এবং সেটা তাঁকে খুব কষ্ট দিয়েছে।’ নৃত্য সমালোচক শর্মিষ্ঠা দাশগুপ্ত গোলাম মুরশিদের অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রকাশের অনুরোধ রেখে বলেন, ‘তা বাংলা সাহিত্যের আশ্চর্য সম্পদ হবে।’

অধ্যাপক গোলাম মুরশিদের মৃত্যুর পরবর্তী এক বছরের মধ্যে যে লেখাগুলো লেখা হবে; সেগুলোর সমন্বয়ে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের অনুরোধ ও আহ্বান জানান অধ্যাপক স্বরোচিষ সরকার। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অনিন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘অসম্ভব নিষ্ঠার সাথে দিনের পর দিন মুগ্ধ হয়ে তাঁর বিদ্যাচর্চা আমরা দেখেছি।’

গোলাম মুরশিদের মেয়ে অমিতা গার্গি বেনেদিতি বাবাকে অনুভব করে ও উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে নিজের লেখা একটি কবিতা পড়ে শোনান এবং সবাইকে স্মৃতিচারণ করার জন্য বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানান। এভাবেই উপস্থিত সবাই গোলাম মুরশিদকে স্মরণ করেন এ বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে।

আরও পড়ুন

অধ্যাাপক গোলাম মুরশিদের ছাত্র বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ইমেরিটাস প্রফেসর ড. এম. এ. সাত্তার মণ্ডলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দেশে-বিদেশের বন্ধু, ছাত্র-ছাত্রী, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি, দেশে ও দেশের বাইরে থেকে ব্যক্তিবর্গ, মিডিয়ার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

সঞ্চালনায় ড. মণ্ডল বলেন, ‘গোলাম মুরশিদ একজন বিদগ্ধ গবেষক, যিনি বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে গবেষণা পদ্ধতির নতুন একটা ধারা সৃষ্টি করেছেন। যেটি কোনো বিষয়কে গভীরতরভাবে অবলোকন করা এবং সেটাকে প্রকাশ করার বহুমাত্রিক যে ঢং আছে, সেটাকেও তিনি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্ভাবন করেছেন।’

আয়োজকদের পক্ষ থেকে বিধান চন্দ্র পাল বলেন, ‘কলমের অর্থাৎ লেখনির শক্তি যে কত বড় সেটা তাঁর কাজ দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন। তাঁর মাধ্যমে ভবিষ্যতে লেখক, গবেষক সাহিত্যিকরা সত্যিকারের আদর্শ ও নিষ্ঠাবান লেখক ও গবেষক হয়ে উঠতে অবশ্যই অনুপ্রাণিত হবেন।’

আয়োজনটি শুরু হয় ‘সমুখে শান্তি পারাবার ভাসাও তরণী হে কর্ণধার’ গানটির মধ্যদিয়ে। গানটি পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ড. লাইসা আহমেদ লিসা।

অনুষ্ঠানে আরও অংশ নিয়েছেন স্থপতি সালমা এ শফি, ইয়াসমিন করিম, একক মাত্রার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অনিন্দ্য ভট্টাচার্য, রিডিং ক্লাব ট্রাস্টের প্রতিনিধি আতাউর রহমান মারুফ, গোলাম মুরশিদের ছোট বোন ফিরোজা আহমেদ, জহির সাদেক, দেবব্রত বিশ্বাস স্মরণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক বরুণ কান্তি চট্টোপাধ্যায়, মুস্তাফা কামাল মিলান, সমাজ উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক কর্মী ডালিয়া দাস, শুভ্রনীল ভট্টাচার্য প্রমুখ।

সবশেষে রবীন্দ্রনাথের ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে, তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে’ গানের মধ্যদিয়ে আয়োজনটির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। গানটি পরিবেশন করেন বেতার ও টিভি শিল্পী স্বর্ণময়ী মণ্ডল। অনুষ্ঠানটি ফেসবুকে দুটি পেজ থেকে সরাসরি প্রচারিত হয়।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।