গোলাম রববানীর কবিতা: এইখানে বঙ্গশ্রেষ্ঠ জনপ্রাণ

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০১ পিএম, ৩০ জুন ২০২৪

উৎসর্গ: মাইকেল মধুসূদন দত্ত

এখানে মাইকেলের মতো অজস্র জীবন চলে
অথচ মাইকেল মধুসূদনকেই যেন যায় ভুলে

২.
ঊনত্রিশে জুন এলেই দরদ উথলে পড়ে—
অথবা পঁচিশে জানুয়ারি; হায়রে দুর্ভাগা জাতি!

৩.
অনেক দিয়েছে, আমরা কতটুকু দিয়েছি তারে?
তারই কান্নায় এইখানে বর্ষাকালে বৃষ্টি হয়।

৪.
তাকে ততটা অবমূল্যায়ন করা মানেই
পৃথিবী এতটা এতটাই জনপ্রাণিহীন

৫.
কিন্তু চালাতে পারি না জীবন আমার মতো
যে জীবন বহে চলি, বলতেই পারি না আমার
একটাই তো জীবন যেন ধারে ধারে চলে
কিছুটা ঘৃণায়, কিছুটা টাটানো ভালোবাসায়

৬.
কুড়ি হাজার প্রজাতি মৌমাছির যেমন ক্ষমতা নেই
আটশ কোটির অধিক মানুষেরও তেমন ক্ষমতা নেই
এমন মধু তৈরি করার—এ মধুর নাম কেশবপুরের মধুসূদন
এসো সময় থাকতে করি যত্ন; এত বাংলার বড় রত্ন।

৭.
তার জীবনটাই তো ছিল মহাশিল্পমুগ্ধ,
কেন তার জীনন-মরণটাই হলো এতটা যন্ত্রণাদগ্ধ?

৮.
তার রচনার সন্দর্ভমালায় ছিল নীতিগর্ভ

৯.
ছিলেন বাঙালির সংস্কৃতি সত্যায়নের অনুপম দিশা
বাঘা বাঘা শিল্পীর জীবনদর্শনেই
মিটিয়েছে জীবনের সুধা।

১০.
মর্মায়তনে রেখেছিলেন মানবাত্মার সৌন্দর্যের তৃষ্ণা
সাগরদাঁড়ি কপোতাক্ষের জলে
আজ বড় পানির পিপাসা!

১১.
সমাধি লিপিতেই জানিয়েছেন যে উদাত্ত আহ্বান;
দাঁড়াও, বঙ্গে! হে জনতা, হে বাঙালি, হে পথিক।
সময় থাকতে মাকে (দেশকে) চিনে নিও হে
না শৈশবে, না যৌবনে; আমৃত্যু যেন দেশ—দেশকেই ভালোবাসে।

১২.
হে কবি আমরা বড় অভাগা, বুঝেও যেন কিছু বুঝি না
মাটি ও মহাশূন্যের দিকে খালি ভাবগল্পের ঈশ্বর নাচে

১৩.
মধুকে ভাবলে মধুর সময়ে বেশ খানিকটা ঘোরাঘুরি
মধুকে ভুললে মধুর অস্তিত্ব মানে সাহিত্য হয় নীলপাখি।

১৪.
সেদিনের সেই কাঠবাদাম গাছ আজও হাঁটছে, ভাবছে
মধুপল্লী থেকে বিদায়ঘাট ছুটছে,
মাইকেল মধুসূদন দত্ত নতুন করে জাহাজে বসে
কপোতাক্ষের নবজোয়ারজলে শুয়ে শুয়ে বেশ আরামে
সাহিত্য উত্তেজনায় বাংলা সনেটের বংশবৃদ্ধি করছে
তাই তো আজ আর ততটা তার বিদেশপ্রেম টানে না

১৫.
তীব্র শীতে শিশিরজলে ভিজিয়ে ভিজতে আসে এখানে
হাজার লোকের ভিড়ে, বাঙালির প্রথম আধুনিক পুরুষ যে,
জীবন সায়াহ্নে দেখা না পাওয়া মাকে দেখে
বিদায়ঘাটকে অবিদায় করে;
রাজনারায়ণ ও মধুসূদন বুকে জড়াজড়ি করে
জাহ্নবী গঙ্গানদীর জলে না গিয়ে কপোতাক্ষে স্নান সারে
আর শুয়ে-বসে আমি-বঙ্গশ্রেষ্ঠসন্তানকে পড়ি—
‘সতত, হে মধু, তুমি আছো বঙ্গজুড়ে!
সতত তোমার কথা ভাবি এ সময়ে
সতত যেমন আজ আঁধারে আঁধার
বোলে শুধু মিথ্যাবাণী—তুমি জ্বলজ্বলে।’

১৬.
যে মধুসূদন স্বার্থছেঁড়া স্বার্থের কাঙাল
সে মধুসূদন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির দরকার।

১৭.
বাণী চিরন্তন তার চেয়ে সত্য চিরন্তন
কে এমন আর বলতে পারে, বলতে পারে
‘জন্মিলে মরিতে হবে,
অমর কে কোথা কবে।’

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।