কলকাতায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রথম থ্রিলার সাহিত্য উৎসব
বাংলা ভাষার প্রথম থ্রিলার লিট ফেস্টের উদ্বোধন করলেন প্রাবন্ধিক ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক সুমিতা চক্রবর্তী, সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত, থ্রিলার লেখক শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী, সুস্মিতা সাহা এবং শ্রীমন্ত বসু। পিস্তলের গুলি ছুঁড়ে উদ্বোধন হলো প্রথম কলকাতার থ্রিলার লিট ফেস্টের। শুধু উদ্বোধকদের হাতে নয়, এই সময় কলেজ স্ট্রিটের অভিযান বুক ক্যাফেতে উপস্থিত দর্শকদের হাতেও তুলে দেওয়া হয় ছোটো ছোটো বন্দুক।
বাংলা থ্রিলার ও গোয়েন্দা গল্পের ইতিহাস ও বর্তমান নিয়ে প্রথম সেশনে আলোচনা করেন উদ্বোধকেরা। আলোচনায় উঠে আসে কাকে থ্রিলার বলা যাবে? থ্রিলার পার্ট আমাদের মানসিক অসুস্থতায় মেডিসিনের মতো কাজ করে কি না? প্রিয়নাথ দারোগা থেকে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন পর্যন্ত বিভিন্ন লেখকের লেখা বিভিন্ন দিক থেকে আলোচিত হয়।
অধ্যাপক সুমিত চক্রবর্তী বলেন, ‘ভৌতিক থ্রিলার আমার মোটেই ভালো লাগে না। যুক্তির বাস্তবতা না থাকলে সেই থ্রিলার বা গোয়েন্দা গল্প আমার জন্য নয়। যে কারণে আমার সত্যজিতের সোনার কেল্লা ভালো লাগে না, অথচ জয় বাবা ফেলুনাথ ভালো লাগে।’
সাহিত্যিক প্রচেতগুপ্ত বলেন, ‘তা সে থ্রিলারই হোক বা সামাজিক গল্প আসল কথা হলো—ভালো লেখা আর খারাপ লেখা। সাহিত্যের সব বিভাগের ভালো লেখাই আমাদের পাঠ করা প্রয়োজন।’
শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী বলেন, ‘বিভূতিভূষণের তারানাথ তান্ত্রিক বা সমরেশ বসুর বিবর—এগুলো উৎকৃষ্ট থ্রিলারের উদাহরণ।’ সুস্মিতা সাহা এবং শ্রীমন্ত বসু বর্তমানে থ্রিলার সাহিত্য নতুন পাঠক সৃষ্টি করছে বাংলা ভাষায়—সে বিষয়ে আলোচনা করে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনসহ সমকালীন লেখকদের উদাহরণ দেন।
দ্বিতীয় সেশনের বিষয় ছিল—থ্রিলার সাহিত্যে বাস্তব এবং পরবাস্তব। আলোচক অরিত্রতুহিন দাস, সুজয়কুমার মুখোপাধ্যায়, শ্রীময়ী রায় এবং শাশ্বত ধর একটি বিষয় সহমত হন যে, থ্রিলারকে যদি পুরোপুরি বাস্তব হতে হয় তাহলে তা কেস ডায়েরি হয়ে যাবে। বাস্তবের সঙ্গে পরাবাস্তবের যথাযথ সংমিশ্রণ একটি লেখাকে প্রকৃত থ্রিলার হতে সাহায্য করে। সুজয়কুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘রামায়ণ-মহাভারত এগুলো সবই থ্রিলার গল্পের সমষ্টি।’
তৃতীয় এবং প্রথম দিনের শেষ সেশনের বিষয় ছিল অতিপ্রাকৃতিক থ্রিলার। লেখক মণীষ মুখোপাধ্যায় তন্ত্র থ্রিলার নিয়ে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলেন। ঈশা দেব পাল বলেন, ‘বাংলার রূপকথার গল্প থ্রিলারের উদাহরণ হিসেবে ভাবা উচিত। কিন্তু কোনো আলোচক রূপকথাকে সাহিত্য হিসাবেও ঠিকঠাকভাবে বিবেচনা করেন না। কারণ বাংলার নারীদের মুখে মুখে এই গল্প প্রবাহিত হতো প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে। আমাদের সৌভাগ্য রবীন্দ্রনাথ দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের রূপকথা সংকলনে ভূমিকা লিখে বিষয়টার গুরুত্ব বৃদ্ধি করে গেছেন।’
অভিষেক মুখোপাধ্যায় তার ব্যক্তিগত অতিপ্রাকৃতিক অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করে বলেন, সেই ঘটনাগুলোই তার সুপার ন্যাচারাল থ্রিলার লেখার প্রেরণা। সুতপা ভদ্র সরকার অডিয়ো স্টোরি বর্তমান সময়ে সুপার ন্যাচারাল থ্রিলারের জনপ্রিয়তাকে যেভাবে বৃদ্ধি করছে, সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। শরণ্যা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন থ্রিলার গল্পের উদাহরণ দিয়ে সুপার ন্যাচারাল থ্রিলার বিষয়টি প্রাঞ্জল করে তোলেন।
শতাধিক আলোচকের ২২টি সেশনের ৮ দিনের (১৮ থেকে ২৫ মে) প্রথম কলকাতা থ্রিলার লিট ফেস্টের ভাবনা আসার মাত্র ৭২ ঘণ্টার ভেতর কীভাবে উদ্বোধন করা সম্ভব হলো তা অনুষ্ঠানের সূচনায় জানান অন্যতম আয়োজক মারুফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘সমসময়ের বাংলা ভাষার জনপ্রিয়তম থ্রিলার লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্রথম কলকাতা থ্রিলার লিট ফেস্টের আয়োজন।’
এসইউ/জেআইএম