ভৌতিক গল্প: পাঠশালার ভূত
গ্রামের নাম শ্যাওরাপুর। রাতের ঘন অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া জরাজীর্ণ পাঠশালাটি ছিল গ্রামের সবচেয়ে রহস্যময় স্থান। গ্রামের লোকেরা বিশ্বাস করতো, পাঠশালাটি ভুতুড়ে। কারণ অনেক বছর আগে সেখানে রহস্যজনক ভাবে আগুন লেগে কয়েকজন কিশোর মারা যায়। এরপর থেকে কেউ সেখানে পা রাখার সাহস পায় না।
সাগর গ্রামের এক কৌতূহলী কিশোর। এসব গল্পে বিশ্বাস করতো না। সে ঠিক করলো, রাতের আঁধারে সেই পাঠশালায় গিয়ে সবকিছু নিজের চোখে দেখবে। তার বন্ধুদের নিয়ে সে পরিকল্পনা করলো। তবে সবাই ভয়ে পিছিয়ে গেল। তারপর সাগর একাই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।
সেই রাতেই হাতে একটি লণ্ঠন নিয়ে সাগর বেরিয়ে পড়লো। পথ চলতে চলতে পৌঁছে গেল পাঠশালার ফটকের সামনে। চারদিকে গাছপালা, ঝোপঝাড়, ঘন অন্ধকার। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ছাড়া সবকিছু নীরবতায় ঢেকে গেছে। বুকের মধ্যে কাঁপন সত্ত্বেও সাগর সাহস নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।
পাঠশালার ভেতরে ঢুকতেই হঠাৎ যেন একটা ঠান্ডা বাতাস তার গা ছুঁয়ে গেল। লণ্ঠনের আলোয় সাগর দেখতে পেলো, ভাঙা চেয়ার-টেবিল, জরাজীর্ণ পুরোনো খাতা সব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। মাকড়সার জালে ঢাকা টিনের বেড়া যেন অতীতের গল্প বলছে। হঠাৎ করেই একজনের কান্নার স্বর ভেসে আসতে লাগলো। সাগর ভয় পেয়ে গেল, কিন্তু সাহস করে এগিয়ে চললো।
কিছুক্ষণ পর সে দেখলো, একটি ছায়ামূর্তি দেওয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে। মূর্তিটি ছিল এক ছোট্ট কিশোরের মতো। সাগর ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললো, ‘কে তুমি?’
ছায়ামূর্তিটি ধীরে ধীরে ঘাড় ফিরিয়ে বলল, ‘আমার নাম রুদ্র। আমি সেই ভয়াল অগ্নিকাণ্ডে মারা গিয়েছিলাম। আমার আত্মা এখানেই আটকে আছে, সাথে আমার বন্ধুদেরও। কারণ আমাদের কারো শেষকৃত্য হয়নি। আমাদের আত্মাকে মুক্তি দাও।’
আরও পড়ুন
সাগর বুঝতে পারল, রুদ্র ও তার সহপাঠীদের মুক্তির উপায় খুঁজে বের করতে হবে। সে গ্রামে ফিরে গিয়ে বয়স্ক এক তান্ত্রিকের সাথে কথা বললো। তান্ত্রিক জানালো, মৃত ছাত্রদের আত্মার মুক্তির জন্য একটি বিশেষ পূজা করতে হবে।
পরের দিন গ্রামের লোকেরা একত্রিত হয়ে পূজার আয়োজন করলো। পূজা শেষে সাগর আবার পাঠশালায় গেল। এবার তার সাথে তান্ত্রিকও ছিল। দুজন মিলে পূজার পবিত্র জল পাঠশালার মেঝে ও দেওয়ালে ছিটিয়ে দিলো। আর ছাই সদৃশ অংশ নদীর জলে ভাসিয়ে আবার পাঠশালায় ফিরে এলো।
অদ্ভুতভাবে পাঠশালাটি কাঁপতে শুরু করলো। হঠাৎ করেই সবকিছু শান্ত হয়ে গেল। সাগর অনুভব করলো, আত্মারা একে একে মুক্ত হচ্ছে।
গ্রামের লোকেরা ধীরে ধীরে সাহস ফিরে পেলো। বিশ্বাস করতে শুরু করলো যে, পাঠশালার অভিশাপ কেটে গেছে। দেখতে দেখতে পাঠশালাটি আবার জীবন্ত হয়ে উঠলো। ফিরতে শুরু করলো ছোট ছোট পড়ুয়া বাচ্চা।
শুধু সাগরের কৌতূহলী মনের জন্য একটি পুরোনো রহস্যের সমাধান হলো। সেইদিন থেকে সাগর অনুধাবন করলো, সত্য খুঁজতে সাহস লাগে এবং সাহসের সাথে এগিয়ে গেলে যে কোনো রহস্যের সমাধান সম্ভব।
এসইউ/এএসএম