রাইসুল এইচ চৌধুরী
কিছু না বলে এবং অন্যান্য কবিতা
দেখা হবে
দেখা হবে
নিশ্চিত দেখা হবে
আবার কথা হবে তোমাতে আমাতে
তোমার চোখে চোখ রেখে
আবার হারাবো আমি প্রিয় ফালগুনে
তোমার পরনে থাকবে বাসন্তী দোপাট্টা
হাতে রেশমি চুড়ি
কপোলের টোলে তুমি আঁকবে-
তাবৎ সৌন্দর্য মহাকাশব্যাপি
চাঁদ, তারা লুকোবে তোমার রূপে
পৃথিবীও মুগ্ধ হয়ে শুধু চেয়ে থাকবে;
আবার দেখা হবে
নিশ্চিত দেখা হবে।
হিজলের বনে গাইবে মাছরাঙা
পানকৌড়ি ডানা মেলে উড়বে হরিয়ান বিলে
হলুদ পায়ের শালিকযুগল মিলবে
ভালোবাসার ডোরে
তোমার চোখের কাজল ঢেউ খেলবে
কাজল গাঁয়ের মেঠোপথে
আবার দেখা হবে
নিশ্চিত দেখা হবে।
অভাব অনটনের এই দেশে
আবার মেলাবো আঁখি পত্রপল্লবে
পরিবার পরিজনে রেষারেষি
দেশে দেশে যুদ্ধ খেলাখেলি
পথে ঘাটে কিশোরীর খণ্ডিত দেহ
অর্থের পেছনে ঘোরার তাবৎ মোহ
সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে
আবার দেখা হবে;
নিশ্চিত দেখা হবে
এই সবুজ মেঠোপথে!
****
উপেক্ষা
অবহেলা পেতে-পেতে
অনাদরে ধুঁকে-ধুঁকে
বারান্দার শতমূলী গাছটাও
একদিন মরে যায়
মরে যায় লকলকে বেড়ে ওঠা ঝিঙে গাছটি
তার অসাধারণ সুন্দর ফুল
ফুলের রেণু, ঝিঙে ফুল, সব।
অবহেলা পেতে-পেতে
কাঁটার আঘাতে ক্ষয়ে-ক্ষয়ে
আমি আজ ক্ষতবিক্ষত ঝিঙে ফুল
শরীরের সব যেন শুকিয়ে গেছে;
নিদ্রাহীন রাতের চিহ্ন পড়ে আছে
চোখের কোলে
এখানে-ওখানে।
ইদানীং গাড়িতে ওঠার সাথে-সাথে চলে আসে তন্দ্রা
কখন যে পৌঁছে যাই অফিসে
টেরও পাই না-
সিঁড়িতে ওঠার সময়;
আমার পা কাঁপে
লিখতে বসলে হাত কাঁপে
শুতে গেলে বুক কাঁপে
নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে!
উঠতে-বসতে মাংসপেশি
আমার হাড়-গোড় সব যেন;
ঝড়ের আঘাতে বিধ্বস্ত নৌযানের মতো
মটমট করে ওঠে।
অবহেলা পেতে-পেতে
কষ্টের তীব্রতা সয়ে-সয়ে
আমি আজ জলহীন নদী
প্রাণহীন মরু সাহারা
শরীরের শিরা-ধমনীতে
রক্তপ্রবাহ কমে-কমে
হৃৎপিণ্ড কার্যকারিতা হারিয়ে
হয়ে গেছে হৃদয়হীন বাঘটিকি
চোখের জল ঝরে-ঝরে
শুকিয়ে গেছে নেত্রনালী।
অবহেলা পেতে-পেতে
অনাদরে ধুঁকে-ধুঁকে
ভালোবাসার মানুষটিও
একদিন মরে যায়
হারিয়ে যায় চিরকালের জন্য।
****
কিছু না বলে
তোমার কাজল চুলের ঢালে
আঙুলের স্পর্শে
আকুলি বিকুলি আঁকি;
লেপ্টে থাকি খরগোশের মতো
তোমার স্মৃতিমাখা অ্যালবামে-
নীরব শ্যাওলা হয়ে দেওয়ালের গায়ে
আর কত বসে থাকি প্রেম-প্রেম খেলে!
চোখের কোলে নেই ঘুম
দূর থেকে ভেসে আসা গান;
হৃদয় মাঝে বাজায় বিষাদের সাইরেন
বেহাগের সুর যেন মনের কোণে
বাড়ায় দীর্ঘ নীরবতা;
আমার ভালোবাসার নদী হারায় নাব্য
পরদেশী মেঘ হয়ে কোথায় পালালে!
তুমি কি জেগে আছো
পরে শিফন শাড়ি!
খোলা চুল উড়ছে কি এলোমেলো
ইথারের স্রোতে
আজ কি মেখেছো তুমি মৃগ কস্তুরি!
পায়ে আলতা, নখে মেহদি
বুকের আঁচলে জাফরানি কারুকাজ
তাকিয়ে আছো কি তুমি আমার চোখে
মন বাতায়ন খুলে!
ধূসর প্রেমে পোড়া হৃদয় মাচান
রক্তস্রোতে কাঁপে যখন-তখন
হাত ছুঁয়ে বলেছিলে যাবে না ভুলে
তারপর রাত এলো
দিন এলো বছরে বছরে
হাত ছেড়েছো তুমি কিছু না বলে।
হাত ছেড়েছো তুমি অবলীলাক্রমে!
এসইউ/এএসএম