স্বপ্ন সোহাগের অনুগল্প: কিংকর্তব্যবিমূঢ়
‘বলেন কী! আপনার কথা কেউ শোনে না, কেউ আপনার পাশে দাঁড়ায় না, সহযোগিতা করে না?’
‘নাহ। কেউ না।’
‘কেউ-ই না?’
‘উহু। না।’
‘আহা রে! আপনার জন্য আসলে খারাপ লাগে। আপনার তো কষ্ট হয় তাহলে! আচ্ছা, দোষটা কার, বলেন তো?’
‘কার আবার, মাইনষের। আজকাল কি মানুষ আর মানুষ আছে, যে অন্যের উপকার করবে? সবগুলা তো দো’পায়া পশু অইয়া গেছে।’
‘হুম, কথাটি একেবারে খারাপ বলেননি। ঠিকই বলেছেন!’
২.
আমি একটু থেমে পুনরায় জানতে চাইলাম, ‘আচ্ছা, আপনাকে একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি? আপনি কি অন্যের কথা শোনেন, অন্যদের বিপদে পাশে দাঁড়ান, সহযোগিতা করেন?’
‘ধুরো, আমার অতো সময় কোতায়! আমার পাশেই কেউ দাঁড়ায় না আর আমি যাবোনে অন্যের পাশে দাঁড়াইতে! হুমহ! আমার ঠ্যাকা পড়ছে! আমার বুজি খাইয়া-দাইয়া আর কোনো কাম-কাইজ নাই, না?’
‘তাহলে?’
তার উত্তরটি শুনে তো আমার চক্ষু চরকগাছ! দুই ভ্রু কপালে উঠিয়ে চোখ গোল করে অবাক হয়ে তার দিকে তাকাতেই তিনি বললেন, ‘তাইলে আবার কী! আমার পাশে কেউ না দাঁড়াইলে আমি ক্যান অন্যের পাশে দাঁড়ামু? এইডা কেমুন কতা? আজব তো!’
তিনি একটু নড়েচড়ে বসলেন।
আরও পড়ুন
৩.
আমি অসহায়ের মতো পুনরায় কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। একটু ভেবে নিলাম। তারপর আমি নীরবতা ভাঙার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং তিনি যাতে রেগে না যান, তাই গলার স্বরে একটু করুণভাব তুলে আস্তে করে বললাম, ‘তাহলে আপনার পাশে অন্যেরা দাঁড়াবে কেন?’
‘মানে?’
তিনি মনে হলো আমার কথার অর্থটি ধরতে পেরেও যেন আবার ধরতে পারছেন না! আমার কথার মর্মটি তার কাছে ধরা দিয়েও যেন ধরা দিচ্ছে না! তাই তিনিও চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তার মুখে প্রবল বিস্ময়ের ছায়া।
৪.
একটু পরে একটি ঘোরলাগা স্বরে আমতা আমতা করে বললেন, ‘কী কন...? মানে... বুঝলাম না তো!’
আমি বলে উঠলাম, ‘বুঝলেন না? শোনেন, আপনি যদি কারো উপকার না করেন, তাহলে আপনার উপকার অন্যেরা করবে কেন, বলতে পারেন?’
তার মুখটি এবার শক্ত হয়ে গেল। দু’চোখের মাঝখানটি চিন্তায় কুচকে গেল। ঝট করে বললেন, ‘আইচ্ছা, আমার উপকার কেউ যদি না করে আমি ক্যান অন্যের উপকার করমু, হেইডা বলতে পারেন?’
এবার আমার বিস্মিত হওয়ার পালা। তার কথায় অকাট্য যুক্তি। আমিও চট করে কোনো উত্তর দিতে পারলাম না। দু’জন দু’জনের চোখের দিকে প্রখর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।
এসইউ/এমএস