সুমি ইসলামের চারটি কবিতা

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৩৫ এএম, ০৮ জানুয়ারি ২০২৪

সেই তো এলে

সেই তো এলে
তবে এত দেরি কেন করলে?
একটু আগে এলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেত?
এখন এখানে সন্ধ্যায় আর কবিগান হয় না
বুড়ো অশ্বত্থটার গোড়ায় বসে আর বাউল একতারাতে সুর তোলে না
ভরা বর্ষায় নদী আগের মতন আর যৌবন ফিরে পায় না,
দোলপূর্ণিমা তিথিতে এখন আর বাঁশির সুর শোনা যায় না,
হেমন্তে হাঁসেরা রাত কাটায় না জলাধারে,
তোমাকে বিদায় জানানোর পরে
সবাই কেমন ঝিমিয়ে গেল।
তোমার পথ পানে চেয়ে থাকতে থাকতে
একদিন ভোরে লীলাবতীকে বুড়ো অশ্বত্থের ডালে ওড়না পেঁচানো দেখা গেল,
এখানের হাওয়াতে এখন লীলাবতীর দীর্ঘশ্বাস
নদীর জলে লীলাবতীর চোখের জল
বুড়ো অশ্বত্থ গাছটাতে আর সবুজ পাতায় ভরে যায় না,
সেখানে শুধু হাহাকার আর অভিশাপ,
সেই তো এলে, তবে এত দেরি করে কেন?

****

চুমুর স্বাদ

গতকাল লাবণ্য এসেছিল
খোলা চুল আর তাঁতের শাড়িতে যেন সাক্ষাৎ প্রতিমা,
তখন ভরা পূর্ণিমা
দুজন হেঁটে চলেছি রেললাইনের ওপর দিয়ে
বাতাসের সাথে ভেসে আসছে মিষ্টি একটা গন্ধ
গন্ধটা আমার চিরচেনা, এই গন্ধে আমি তলিয়ে যেতে থাকি সাগরের অতলে,
আচমকা সে জানতে চাইলো, ‘বলো তো অমিয়, চুমুর ওজন কত?’
উত্তরে বললাম, ‘এভারেস্টের ওজনের সমান’।
কিছুক্ষণ পিনপতন নীরবতা,
আবার বললো, ‘বলো তো অমিয়, চুমুর স্বাদ কেমন?’
আমি ওর দৃষ্টিতে দৃষ্টি স্থির রেখে বললাম, ‘সে তো অমৃত’।
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে বললো, ‘আসছে ভরা বর্ষায় তৈরি থেকো
ঝুম বৃষ্টিতে একগুচ্ছ ভেজা কদম নিয়ে
হুড তোলা রিকশায় আমরাও চড়বো।’

****

রাতের ট্রেন

রেলের স্লিপারে হাঁটতে হাঁটতে বলেছিলে
একদিন আমারা রাতের ট্রেনে করে
হারিয়ে যাবো বহুদূরে
অনন্তকাল ধরে ট্রেনটা ছুটে চলবে
রাতের নীরবতাকে ভেঙে মাতাল করা শব্দে
ট্রেন ছুটে যাবে গন্তব্যহীন ভাবে।
একটা একটা করে স্টেশন পেছনে ফেলে ছুটে চলবে
শহর থেকে নগরে কখনও বা দুপাশে সবুজ ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে,
মাঝরাতে জোনাকি পোকাদের আলোয় ভরে যাবে ট্রেনের কামরা
তোমার সিল্কি চুলের মাঝে খেলা করে যাবে দুরন্ত হাওয়া
রাতের ট্রেনের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলবে চাঁদটা।
সারি সারি গাছ আর দিগন্ত জোড়া সবুজের মাঠ পেছনে ফেলে ছুটে চলবে রাতের ট্রেন,
তারপর নাম না জানা কোনো স্টেশনে নেমে পড়বো ভোর হতেই।
সেই স্টেশনের পাশ দিয়ে থাকবে সারি সারি কৃষ্ণচূড়া
মেঠোপথটা হবে কৃষ্ণচূড়ার হলুদ রঙের কার্পেট
কোমল গালিচা দিয়ে আমরা হেঁটে যাবো,
স্টেশনের পাশেই বানিয়ে নেবো ছোট্ট কুঠির
তারপর অনেক অনেক দিন কেটে যাবে
একদিন রাতের ট্রেনে করে আবার আমরা নিরুদ্দেশ হয়ে যাবো
পেছনে পরে থাকবে লোকালয়, সামনে নিরুদ্দেশ।

****

শেষ চিঠি

তোমার কাছে লেখা এটি আমার
অপ্রকাশিত প্রথম ও শেষ চিঠি।
কালির সুগন্ধ এখনও বিদ্যমান
ভাঁজগুলো এখনো সজীব,
খুব একটা মলিন হয়নি
কোথাও নেই কোনো ভাঁজ।
তোমাকে যা বলতে গিয়েও বলা হয়নি কখনও
বলতে গিয়ে বারবার থেমে গেছি
জমিয়ে রেখেছিলাম হৃদ মাঝারে
এখানে সেইসব জমিয়ে রাখা কথাগুলো যত্ন করে লেখা আছে।
আমার কল্পনাবিলাসী মন বারবার
যে অবাস্তব ভাবনাগুলোকে প্রশ্রয় দিতো
তার প্রস্ফুটিত রূপগুলোই এখানে যত্ন করে লেখা।
মাঝে মাঝে ওই আকাশটাকে
গাঢ় কমলা রঙে সাজাতে ইচ্ছে করে,
ঠিক যেন গাঢ় কমলা পাড়ের সাদা শাড়ির মতন।
ওই চাঁদটাকে দূর থেকে না দেখে
খুব কাছ থেকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।
ঠিক যেমন বিড়ালের ছোট্ট বাচ্চাকে
কোলে তুলে আদর করার মতন।
তোমার কথাগুলো রবীন্দ্রসংগীতের মতন
এখনও কানে বাজে,
সেই নরম সুরের কথা আজও শোনার জন্য ব্যাকুল।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।