সৌমেন্দ্র গোস্বামীর ৬টি কবিতা

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৩৪ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩

অভিশাপ কিংবা নিয়তির প্রবঞ্চনা

খেলার পুতুল হতে পারি জেনেও যার আশপাশে ঘুরফির
করতাম সে কী মনে রেখেছে,
মন খারাপে কখনো কি তার মনে পড়ে আমার নাম?
ঈশ্বরের হাত ছুঁয়ে যে প্রেম নেমে আসে—জানি না,
হাতের মুঠে কেন তা দাঁড়াল না,
বিষপানরত প্রজাপতির মতো চোখের কিনার জুড়ে—
আজও কেবল দুঃখের গন্ধ; নির্ঝরিণীর বুকে
মায়ের মতো একটা মন ছিল না। জানি না,
কতকাল আরও কতকাল সমুদ্র বেদনার জল
বুকে ধরে অশ্বত্থামার মতো বাঁচতে হবে;
আদেও শ্যাওলার জলে কখনো ঘুম জাগবে কি না
জানি না, কোন প্রায়শ্চিত্তের পর ভুলের মাশুল ফুরোবে,
আর কবে সুখ আমাকে ছোঁবে।

****

বিপথগামী প্রেমিকের জবানবন্দি

পরিবর্তনশীল জলরেখার ন্যায় ইদানীং নিজের সঙ্গে খেলি;
কাটাকুটি খেলায়
স্বগোত্রে কন্যাদানের মতো কাল্পনিক কিছু ভুল
পাশার দান হয়ে পাল্টে যায়
নামতে নামতে
প্লাবিত হয় চরণ; প্লাবনে মিশে যায় অতৃপ্ত মন
বিপর্যয়ের সুখ কী বিষণ্ন সুন্দর—
মরে যাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে বেঁচে থাকা অসুখ
জানে—আমাকে টানে দূরের ডাহুক;
রেখার সীমানা ভুলে তাকিয়ে দেখি অনিন্দিতার হাসিমুখ।

****

শুদ্ধি পরীক্ষা

এই যে একটা জীবন আমি কবির মতো সঙ্গহীন
বেমানান
বেরঙিন
ভাটিফুলের মতো উপেক্ষিত
পাটিসাপটার মতো নিস্তেজ, নিষ্পেষিত
নিষ্প্রাণ
অর্থহীন
এখনও কি সংশয় কাটেনি তার,
বিশ্বাস করে না সে?
শরীর না ছুঁয়েও কেউ কেউ ভালোবাসতে পারে।

****

প্রত্যাখ্যান

তরুণী জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ভালোবাসতে কি পয়সা লাগে?’
কিছু বললাম না। আবারো একই প্রশ্ন। আমিও নিরুত্তর।
বাইরে প্রচণ্ড বৃষ্টি। প্রস্ফুটিত ক্যাকটাস ফুলের বুকে জল।
যেন তরুণীর চক্ষু টলমল। ফোনের ওপারে কণ্ঠ।
‘কেন ভালোবাসলাম না, ভালোবাসতে কি পয়সা লাগে?’

****

সংলাপহীন সিদ্ধান্ত

এক.
কখনো দুঃখ আমাকে জাপটে ধরে
কখনো আমি দুঃখকে

দুই.
যা তাদের বলার ছিল না কিংবা ছিল
তারা আমাকে বলল, তারা আমাকে বলে
সেই সব; যা কখনো তোমাকে বলিনি

তিন.
তুমিও যাও, সবাই চলে গেছে
মৃত্যুর পাশে থেকে কী লাভ?
মৃত্যু দিতে পারে না লভ্যাংশ ও কদর
তুমিও যাও—যেখানে তোমার অতল অধিকার।

****

অসমাপ্ত প্রেম

জীবনে যাকে ভেবে যুক্তাক্ষরে নাম লিখেছিলাম
এখন সে অনার্সে পড়ে
রবীন্দ্রনাথের নায়িকাদের মতো শাড়ি পরে
স্পষ্ট ভঙ্গিতে ক্লাস করে
ক্লাস শেষে গান গায়: রবীন্দ্রসংগীত ও অন্যান্য

আগের মতোই ভালো লাগে—মোহিত হই
ফেসবুকে দেখি
রিকোয়েস্ট পাঠায়নি কখনো—হয়তো সে
গ্রহণ করতো অথবা করতো না

তাকে কি আজও পেতে চাই, মন কাঁদে তার আশায়;
জিজ্ঞাসা জাগে—ঠোঁট, বুক আরও যা যা লোভের
প্রলুব্ধ করে আমাকে; অনেকের মতো
কামনার আঘাতে ব্যাহত চিৎকারে নিজেকে কি হারাই?

তার চুল ভালো লাগে, হাসি ভালো লাগে
ভালো লাগে গানের সুর—হাতের আঙুল
সেদিনও শয্যাসঙ্গীর আগে বন্ধু ভাবতে পেরেছিলাম
প্রেমিকার আগে মানুষ;
আজও তাকে মানুষ ভাবি, বন্ধু ভাবি—কামনা করি না।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।