দ্বীন মোহাম্মাদ দুখুর চারটি কবিতা
বিলবোর্ডে ঝোলে আস্ত দুপুর
বিলবোর্ডে ঝোলে দুপুরের বিষণ্ন মুখ
জ্ঞাত সুধাকরও চলে গেছে খুব প্রভাতে
পাখিদের দু’চারটি পালক ঝুলে আছে
সম্প্রতি আঁশ ছাড়ানো পাটকাঠির গাদায়
গোটা দশেক ঝিনুকের বুক খাবলে ছিঁড়ে
এক নিমিষে খেয়ে গেল কৈশোর রাজহাঁস
শিশিরের আস্ত শরীর গিলে খেলো ইলশে রোদ
তাজা গোলাপ জুঁইয়ের পাপড়ি মূর্ছা গেল
যুগল মৌমাছি ডুব দিলো রোদ বাবলের ভেতর
দেখা নেই কারো! উঁইপোকার চোখে ঘুম কেতর
খেই হারানো নদীর বুকে অসাড় স্রোতের নূপুর
সাড়া নেই মাছেদের ঘরে, ক্লান্ত জলের দুপুর
কৃষকের জ্বর শ্বাসে পোড়ে বট ছায়ার উঠোন
ধূলো পোড়া ছাইয়ে ঢাকা কাকতাড়ুয়ার বসন
আধো ঘুমে ডোবা জীবন আর প্রকৃতির নির্যাস
সহসাই হেঁটে যায় কচ্ছপের নতজানু পায়
সূর্যকান্তের জ্বলজ্বলে তাজ পরে আস্ত দুপুর
পৃথিবীর বিলবোর্ডে ঝোলে একাকী, নিরালায়।
****
প্রজন্ম ও প্রত্যাশার গল্প
আফ্রিকা থেকে ছুটে আসা ডাইনোসর ঝড়ের বুক থেকে
হস্তিশুঁড় ভেকু দিয়ে কেটে নেওয়া এক খাবলা ধুলোর শনপাপড়ি;
গড়াই দেবীকে দুমড়েমুচড়ে জোয়ারের ডানপিটে ছেলের
ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে যাওয়া দুধসর কলঙ্কের দাগ;
গলাজলে ডুবে তেঢালার বিলে বেড়ে ওঠা দীঘল চুলের নাড়া সুন্দরীর শুষ্ক শরীর;
আঁধারী বনে আকাশের কার্নিশ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভূতেদের খেলনা গাছ—
আমার আমিত্বকে দাঁড় করে দেয় প্রেমমূর্তির পোস্টারে
যেখানে রক্তিম সূর্যের সাথে শিশিরের সঙ্গমলগ্নে
হাজরা পাড়ার মেয়ে পূর্ণিমা
এক আঁজলা যৌবতী ফুল এক ঘটি জল
ছিটিয়ে দেয় আমার জাদুর পায়ে
চোখের কাজল, সিঁদুরের আলতো স্পর্শে আমার লাজুক পিরামিডে
এঁকে দেয় লতাপাতা, ঘোড়া আর সিংহ-পুরুষের অবয়ব
যে অবয়বে কিলবিল করে নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা।
****
সমর্পণ
গোধূলির লাল কুসুম সূর্য
চোখের কপাটে সুড়সুড়ি দেয়
পোড়ামাটির সিঁড়ি পা দুটো জড়িয়ে ধরে
পূর্বপুরুষের ঘামে ধোয়া দূর্গের ভাঙা দেয়াল
ইঙ্গিতে জানায়, বসো বন্ধু!
ছুটির অপেক্ষায়—
বাঁশের চিবুক ছুঁয়ে উড়ে গেল অতর্কিত অগ্নিশিখা
নাকফুলের মতো কুঁচি ঝুলে আছে পাথরের উদরে
সবুজেরা ঘাসের ওপর কোমর উঁচু করে নাচছে
রান্নাঘরের ছাদে ঝুলে আছে চড়ুইয়ের আবাসন
ডিমের শরীর আয়নার মতো চকচকে
লতাপাতার সুতোয় বোনা গামছা পরিবেষ্টিত
সানসেটের ছিদ্র দিয়ে ধেয়ে আসছে একখণ্ড অন্ধকার
নিমিষেই লাল হলুদ ফলের শরীরে
দেখা দিচ্ছে ছোপ ছোপ কালো দাগ
দুপুরের তাওয়ায় রাখা শুকনো আমসত্ত্বের অভিশাপে
উবে যাচ্ছে সূর্যের টান টান উষ্ণতা
নূর মসজিদের ধ্বংসাবশেষ অতিক্রম করে
উড়ে গেল সাঁঝের পাখিরা
জানালায় হাতির দাঁতের মতো লেপ্টে বসছে কুয়াশারা
অতঃপর—
চোখ ঘঁষতে ঘঁষতে হাঁটু্র মাঝে নিজেকে সমর্পণ করে
গণনা করি, শুভ্র চুলের বিন্যাস
ঘাসের মতো কুঁচকানো শরীরের জমিন।
****
মরীচিকা
দুপুরের ঘুম চোখে চিতই সাঁচি কাজল
দেওয়ার ইঙ্গিত, রোদের মেয়ে খেলছে পাজল
কালো ধোঁয়ার ছায়া মাড়িয়ে চলা পথিক
পাখিদের মোহন বাদ্যযন্ত্রে খোঁজে দিক
নদীর ইশারায় দোলে হিজল ফুলের ঠোঁট
মাছরাঙার পিলে কাঁপে, পিত্তে লাগে চোট
সূর্যের চুম্বনে বাধা হয় প্রসারিত ডাল
পথিকের স্যাঁতসেঁতে বেদনা চিরকাল।
পৃথিবীর কার্নিশে পথিকের বসবাস
ফাঁক-ফোকরে সাজানো লাল সুখের তিয়াস
তৃষ্ণার্ত পথের সাধ চৌহদ্দিতে ফিকা
জানকীর বালুচরে জল—মরীচিকা।
এসইউ/এএসএম