বঙ্গবন্ধুর কথাসাহিত্য: আত্মজীবনী থেকে নয়াচীন
বাঙালি জাতির পিতা, স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেবল একজন জনদরদী নেতাই ছিলেন না। তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতির অনুরাগীও ছিলেন। যার প্রমাণ পাই আমরা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’ নামক বইয়ে। নিঃসন্দেহে বই তিনটি ব্যতিক্রম। এখানে কল্পনার আশ্রয় নেই। পাঠককে আপ্লুত করার কৌশল নেই। নিরেট একজন মানুষের কষ্টে যাপিত জীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। বঙ্গবন্ধু এক অমূল্য সম্পদ আমাদের জন্য রেখে গেছেন।
২০০৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি এক্সারসাইজ খাতা আকস্মিকভাবে তার মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুঁজে পান। খাতাগুলো অনেক পুরোনো, পাতাগুলো জীর্ণপ্রায় এবং লেখা প্রায় অস্পষ্ট। মূল্যবান ওই খাতাগুলোই বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। যা তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। তবে ২০১২ সালে অসমাপ্ত রেখেই তার আত্মজীবনী প্রকাশের পর বেশ কয়েকটি ভাষায় অনূদিত হয় বইটি।
বঙ্গবন্ধু ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত কারাগারে বন্দি অবস্থায় এ অমূল্য জীবনী রচনা করেন। তার লিখিত স্মৃতিকথা ২০১২ সালের ১৮ জুন বাংলায় ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ নামে প্রকাশিত হয়। বইটির প্রথম প্রকাশনার সার্বিক দায়িত্বপালন, তত্ত্বাবধান ও কার্যক্রম পরিচালনা করেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বইটি প্রকাশ করে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)।
আরও পড়ুন: জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্
‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ প্রকাশের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি প্রকাশ করে তাঁর রচিত নতুন বই ‘কারাগারের রোজনামচা’। ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ কালপর্বের কারাস্মৃতি বইটিতে স্থান পেয়েছে। তবে বইটি ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র দ্বিতীয় খণ্ড বলে ধারণা হতে পারে। তবে এটি বঙ্গবন্ধুর সম্পূর্ণ নতুন বই।
১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার সময় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কারাগারে তার লেখা দুটি এক্সারসাইজ খাতা জব্দ করে। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে এবং পুলিশের বিশেষ শাখার সহায়তায় উদ্ধারকৃত একটি খাতার গ্রন্থরূপ বাংলা একাডেমি প্রকাশিত এই ‘কারাগারের রোজনামচা’।
দুটি বইয়ের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে নতুন আরেকটি বই। যার নাম ‘আমার দেখা নয়াচীন’। বইটির প্রকাশক বাংলা একাডেমি। বইটির ভূমিকা লিখেছেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার লেখাটি খুবই যথাযথ ও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘শকুন্তলা’র শিল্পরূপ
বঙ্গবন্ধু ১৯৫২ সালে চীন ভ্রমণ করেছিলেন। সেই কাহিনি তিনি লিখেছিলেন ১৯৫৪ সালে। তিনি যখন কারাগারে। তার লেখা এ খাতার ওপর গোয়েন্দা সংস্থার সেন্সর ও কারাগার কর্তৃপক্ষের যে সিল দেওয়া আছে, তা দেখেই সময়কাল জানা যায়। বইটি পড়লে জানা যায়, আজ থেকে সাত দশক আগে বঙ্গবন্ধু কতটা দূরদর্শী ছিলেন। সময় থেকে তিনি কতটা অগ্রগামী ছিলেন। তিনি পিকিংয়ে শান্তি সম্মেলনে কেন যোগ দিতে আগ্রহী হয়েছিলেন এবং কতটা বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে নয়াচীনে গিয়েছিলেন তা বোঝা যায়।
বইগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অমূল্য উৎস। বাঙালির জাগরণের দলিল। বাংলা সাহিত্যের নতুন সংযোজন। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো আরও স্মৃতিচারণ, রোজনামচা আমরা পেতে পারতাম। আমরা পাঠে ঋদ্ধ হতাম। আগামী প্রজন্ম তার আদর্শ নিয়ে একটি সুন্দর সোনার বাংলাদেশ গড়তে আরও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারতো।
স্বাধীন বাংলাদেশকে সঠিকভাবে জানতে বঙ্গবন্ধুর বই তিনটি পাঠ করা জরুরি। মুক্তিযুদ্ধ ও তৎকালীন প্রেক্ষাপট জানতে বই তিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লেখক, সাংস্কৃতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ ও শিক্ষার্থীদের জন্য বইগুলো অবশ্য পাঠ্য হওয়া উচিত।
এসইউ/এএসএম