দুলাল সরকারের চারটি কবিতা

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৩৫ এএম, ১০ জুলাই ২০২৩

সমুদ্র তোমাকে

সমুদ্র তোমাকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে—ভিন্ন শেখায়
কথার ক্রন্দন, ভিন্ন প্রণয়, ব্যবচ্ছেদ সম্পর্কে দু’জন, শব্দের বিমূর্ত অন্বয়,
শিখিয়েছে নিরন্তর দাহ শব্দের গহীন,
পাশে গালে হাত উদাস সময়—অবধূত,
দেখে সম্পর্কের ব্যবচ্ছেদ—ক্রমশ জীবন; নীলাভ শব্দের মধ্যে
হারিয়ে অস্তিত্ব সে কোথায় যায়—গলে গলে শব্দের তন্ময়
নিরাকার বোধের আঙুলে
স্পর্শ রাখো তুমি; নীরব সময়
সন্ধ্যা তারায়, ক্রমশ বকুল
বিবস্ত্র হৃদয়—যায় অভিসারে যায়, ভাঁজ করা আঁধারের
অস্ফুট ব্যথায়, কতদূর সমুদ্র
গুহায়, কথার বাঙ্ময় অজ্ঞাত
অচীন অনুভূতি নিরাবয়ব নীল
বীভৎস সুন্দর কারুকাজ—
বস্তু ও নির্বস্তুর সমন্বয়ে নির্লিপ্ত গ্রীবায়
আর কোনো পথের শয্যায় কেউ ডেকেছিল বুঝি?

****

রাতের সমুদ্র

রাতের সমুদ্র পাড়ে একা আমি
নীল অন্ধকার,
নেই কোথাও, কেউ নেই, একা—উপরে নিসীম
ডানা আকাশের, হিংস্র আঁধার—থৈ থৈ রাত, দূরে
মহাশূন্যে নক্ষত্র ও চাঁদ শিশিরের লতা—সমুদ্র যাপনে
একা আমি—যেন সকলেই একা, অস্তিত্বের সুনীল সংকট;
বিশাল দু’হাতে খোঁজো কাকে? চুম্বনের অধীর আগ্রহে
ঢেউয়ের উচ্ছ্বাস, গাঢ় স্বরে দূরে, আমাকেই ডাকো
বলো, চলো প্রকৃতির সব উপাদানে মিশে যাই পুনঃ,
বলো, চলো ভাঙুক না ধ্যান ঝাউয়ের শাখার,
ছোট ছোট আশা, মানুষের অতল বিস্ময়—
বালুচর রহস্য হৃদয়—এত অনুভব দেহের ভেতরে খোঁজো কারে
ছিলাম কোথায় সে তোমারও অন্তঃস্থ জিজ্ঞাসা?
হে সমুদ্র, অনন্ত বিরহ—পৃথিবীর আর কোন রাতে
দেখা হলে জন্মের ইতিহাস বলো, বলো ভালোবেসে কেঁদেছো কতটা?

****

সাগর ডাকলো

সাগর ডাকলো বলে এলাম আজ
কী করে এড়াই তার হাত?
চারদিকে মরা নদী, আত্মকেন্দ্রিকতার
ফাঁস যখন শরীরে, উপড়ানো
হৃদয়, বৃক্ষ ও বাতাসের সমন্বয়হীনতা,
অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষত, হৃদয়গুলো
ইট-পাথরে ঢালাই করা, কোথাও থোড়ের সুডৌল শিল্প নেই একটি আঙুলেও,
থোড়ের সুডৌল চারুতা নেই একটি
আঙুলেও, সঙ্গীহীন মেঘ এ আকাশ
ও আকাশ করে শেষে সমুদ্রেই
যখন ফেরে তখন ডাকলে আমাকে—
ডাকলে ঝিনুক, শঙ্খের অবাক কারুকাজ, ঝাউবীথি ছু্ঁয়ে তোমার
সর্বাঙ্গ সত্তা বললে যেন বিশাল
বিস্তৃতির পাশে ব্যক্তিগত বলে কিছু নাই—বৃহতের কাছে ক্ষুদ্রের এই
পরাজয়ে আমার মুক্তি হলো
তোমার অনন্ত ব্যথায়।

****

ঝিনুক খুঁজতে গেলে

তুমি আমাকে নিষেধ করতে রাত-বিরাতে ঘরের বাহির হতে—
কানের কাছে মুখ লুকিয়ে বলতে
গাঢ় স্বরে, কোথাও যেতে হলে
সঙ্গে যেন থাকে একটি দোয়েল—‘কোথায় আছো, কেমন আছো
বলবে আমাকে!’
চোখের দিকে তাকিয়ে অনিমেষ
আয়ত্ত করে চোখের কোলাহলে
পড়তে যখন হারিয়ে যাবার
কোথাও সুদূর আমার প্রবণতা,
খুঁজে পেতে উদাসীন একতারা—
সেই যে বুকে থাকতে সেঁটে
সকাল হতে রাতের ধ্রুবতারা, শুকতারা
শেষ রাতে, বলতে তুমি কোথাও যাবে না এমন আর্তস্বরে।
তখন পাখি জেগে
বুষ্টুমিদের সাথে সুর মিলিয়ে
তুমিও গেয়েছিলে ‘পরজন্মে হইও
তুমি রাধা’,—সেই তুমি এক
সাগর তীরে জল দেখাতে, ঢেউ দেখাতে
নিয়ে গিয়ে ঢেউয়ের মুখে ছেড়ে দিয়ে
ঝিনুক খুঁজতে গেলে কোথায়
আমি তখন একলা সাগর পাড়ে
একা, একা সন্ধ্যাবেলা—
সাথে সন্ধ্যাতারা, সুদূর সন্ধ্যাতারা।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।