তপন বাগচীকে নিয়ে সমরেশ মজুমদারের লেখা
[সমরেশ মজুমদারের একটি অগ্রন্থিত রচনা। এটি তিনি লিখেছেন নব্বইয়ের দশকের কবি তপন বাগচীর ৫০তম জন্মদিনে নদিয়া থেকে প্রকাশিত ‘কথাকৃতি’ পত্রিকার ‘পঞ্চাশে তপনজ্যোতি’ (মার্চ ২০১৯) সংখ্যায়। ‘সৃষ্টিশীল জীবনের প্রতি শুভ কামনা’ নামে নাতিদীর্ঘ রচনাটি সংগ্রহ করেছিলেন কলকাতার ‘চোখ’ পত্রিকার সম্পাদক কবি মানিক দে আর প্রকাশ করেছেন কথাকৃতির সম্পাদক কবি নীলাদ্রিশেখর সরকার।
তপন বাগচীর মতো একজন অনুজ কবিকে নিয়ে অসাধারণ এই কথাসাহিত্যিক নিবন্ধ লিখেছেন। এতে তাঁর চরিত্রের এক মহৎ গুণের প্রকাশ ঘটেছে। এটি সমরেশ মজুমদারের কোনো গ্রন্থে এখনো স্থান পায়নি। তপন বাগচীকে নিয়ে সমরেশ মজুমদারের অগ্রন্থিত লেখাটি জাগো নিউজের পাঠকের জন্য প্রকাশ করা হলো।]
সৃষ্টিশীল জীবনের প্রতি শুভ কামনা
সমরেশ মজুমদার
তপন বাগচীর সঙ্গে আমার তুমুল কোনো জানাশোনা নেই। ঢাকায় ‘কালি ও কলম’ পত্রিকার অনুষ্ঠানে দু-একবার কথা হয়ে থাকবে। বয়সের কারণে সেসব কথা তেমন মনে থাকে না। তবে আমার লেখার একজন পাঠক বলেই সে নিজের পরিচয় দেয়। কিন্তু মাসিক ‘কালি ও কলম’, দৈনিক ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ প্রভৃতি পত্রিকায় তার লেখাও যে আমার চোখে পড়ে, সে কথা তাকে বলা হয়নি। সম্প্রতি কলকাতার ‘চোখ’ পত্রিকার সম্পাদক, স্নেহাস্পদ মানিক দে-র মাধ্যমে তপন বাগচীকে কিছুটা জানার সুযোগ হলো। এবারের কবি সুভাষ স্মারক পুরস্কারটি দেয়া হলো তপন ‘বাগচীকে। তাতে আমার অনুমোদন রয়েছে।
আরও পড়ুন: যে কোনো পুরস্কার আনন্দ-প্রাণসঞ্চারি: সেলিনা শেলী
যতটুকু জেনেছি, তপন বাগচী তার সময়ের কবিদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর ৫০ বছরের জীবনকে অভিনন্দন জানাতে নদিয়ার ‘কথাকৃতি’ পত্রিকা বিশেষ সংখ্যা প্রকাশের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে ভাল লাগছে। কথাকৃতির সম্পাদক নীলাদ্রিশেখর সরকারের অনুরোধপত্রের সঙ্গে ‘কথাকৃতি’-প্রকাশিত একটি ছড়াগ্রন্থ আমার হাতে এসে পৌঁছেছে—‘কবি ঠাকুর ছবি ঠাকুর’ কবিগুরুকে বিষয় করে লেখা ছড়ার বই। এতে আটটি ছড়া আছে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে। আমাদের শিশুকিশোররা এই বইটি পড়লে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পারবে। বিশেষত পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ি ফুলতলার কথা, তাঁর জমিদারি এলাকা পাবনায় নবপ্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা জানতে পারবে। কেবল জানা-ই নয়, স্মৃতিতেই থেকে যাবে কথাগুলো। কারণ চমৎকার ছন্দ-অন্ত্যমিলে লেখা হয়েছে প্রতিটি ছড়া। এই বইটি তাই কেবল ছড়া পড়ার আনন্দই নয়, ছড়ার মাধ্যমে কবি রবীন্দ্রনাথকে জানারও একটা উপায় করে দিল। রবীন্দ্রনাথ-বিষয়ক ছড়া বাদে অন্য ছড়াগুলোও পড়তে বেশ ভাল লাগবে। ছোটদের তো বটেই বড়দেরও পড়তে মন্দ লাগবে না। বই পড়তে গেলে প্রথমত ভাললাগা তো একটা বড়ো ব্যাপার। আর ভাললাগার পরে গিয়ে শিল্পবিচার। সেই বিচারেও তপন বাগচীর সফলতা রয়েছে।
তপন বাগচী বাংলাদেশের বাংলা একাডেমিতে ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছেন। বাংলা সাহিত্যের এই নিরলস সেবককে আমি অভিনন্দন জানাই।
আরও পড়ুন: কবিতা শিল্পের সূক্ষ্মতম মাধ্যম: রাহেল রাজিব
আমি কথাসাহিত্যের মানুষ। কথাসাহিত্যের কিছুটা খবরাখবর রাখার চেষ্টা করি। তবু হাতে পেলে যে কবিতা-ছড়ার বই পড়ি না, এমন নয়। কিছু কিছু ভালও লেগে যায়। আজকে নীলাদ্রিশেখরের সৌজন্যে তপন বাগচীর ছড়ার বইটিও আমার ভাল লেগে গেল। আমি তপন বাগচীর অন্য রচনার প্রতিও আগ্রহ বোধ করছি। আর তার জন্য প্রাণখুলে আশীর্বাদ করছি, যেন সে সাহিত্যের আরো দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে পারে স্বচ্ছন্দে। ছড়া-কবিতার পাশাপাশি তপন বাগচী গানও লেখেন। আর যাত্রাগান নিয়ে তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থটি বেশ আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছে। ছোটদের জন্য গল্পও লিখেছে সে। এরকম বহুমুখী একজনকে এবারের কবি সুভাষ স্মারক পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে ‘চোখ’ পত্রিকা একটি দায়িত্বশীল কাজ করেছে। তাকে দেয়া সনদপত্রে আমার স্বাক্ষর তো রয়েছে, তবু আবার তার জন্মদিনে সৃষ্টিশীল জীবনের প্রতি শুভ কামনা রইল।
তার আরো বই পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
এসইউ/এমএস