বাতাস এবং অন্য কবিতা
গোলাম রববানী
বাতাস
তোমাদের মতো আমিও সেই বাতাস নিয়েছি
নিয়ে বেঁচে আছি দাবানলে পোড়া বৃক্ষপত্রের মতো
ছাই হয়ে উড়েছি কখনো মিশে গিয়েছি মাটির সঙ্গে
অশ্রুপাতের ঝরনাতে ভিজে ধোঁয়া উড়ছে বাতাসে
পাশে এসে বসা একটি পাখি গান গাইছে
ভাবনাবন্দরে নির্ভাবনায় হাসছে দুঃখের সারিন্দা
কিছুটা ছেঁড়া সুরের রাগে তালবেতাল টানে
অপেক্ষার প্রহরী দুলছে সেই দমকা-ঝড়ের মতো
বাতাসে বাতাসে দীর্ঘশ্বাস যেন সুখ সুখ অনুভূতি
হাসি গান আনন্দের মতো সময়ও স্রোতের মতো
মৃত এ বাতাস নিয়ে যেন বাঁচার মতো বেঁচে আছি
চিরন্তন সত্য হার-জিত সুখ-দুঃখের মতন
****
পৃথিবী
যদি কেউ পৃথিবী গ্রহের একফোঁটা জল দাও
রোমান্টিক যুগের সমস্ত প্রেম আমি উজাড় করে দেব
পৃথিবীর সব জল হেঁটে হেঁটে পার হতে পারি
অথচ এই একটু জলপৃথিবীর জলে হাবুডুবু খেতে থাকি
এই পৃথিবীতে একফোঁটা নুনজলের বড়ই অভাব!
প্রতিটি প্রাণী একেকটি প্রাণবন্ত প্রাণেশ্বর নিয়ে ঘোরে
তবুও প্রাণে প্রাণে কী এক বীভৎস শীৎকার
ইস্ ইস্ করে নরক পৃথিবীতেই পোড়ে
যে নরকে শিশ্ন জরায়ু দ্বিচারিতার ক্রোধে জ্বলে
বিবেক নামক আদালতে পৃথিবীর আদালত পোড়ে
****
সাদা পাথর ছুঁয়েছে মন
সাদা পাথর ছুঁয়েছে মন, মন খারাপের প্রশ্ন অবান্তর
মেঘালয়ের আকাশে আজ নীলরোদচশমার চোখ
স্বচ্ছ জলের নীরব গতি, নীরব পাহাড় বৃক্ষরাজি-
স্বেচ্ছায় নির্বাসিত হলে বলো কী আর এমন ক্ষতি।
স্টোন ক্রাশার দাঁড়িয়ে শ্বেত পাথরজল ছাড়িয়ে
হায়েনা প্রকৃতি গিলে খায় দুর্ধর্ষ ক্ষত-বিক্ষত গালে
অধ্যাপক লেখকেরা চাপা পড়ে দয়ার বাজারে
দয়ার বাজার চেয়ে চেয়ে থাকে পাথরের চোখে
কাঁটাতারের ওই বেড়ায় দুর্লভ দাপুটে শক্তি
লালসালু মাথা উঁচু করে নদীর হিমশীতল তলে
পাথুরে নদীর জলে ডুব দেয় কোনো শুদ্ধতম কবি
পাথুরে জল চোখে নিয়েই পাথুরে ঢল নামে
কানার হাট-বাজারে; চলছি এভাবেই এখানে-
উদার প্রকৃতি দিয়েছে যে-ভুলেও বুঝিনি তাকে
চোখের নেশায় যে মাতাল ধরা দেয় না অন্য নেশায়
ডিজিটাল নেশা ছেড়ে ফিরে আসে প্রকৃতির চোখ
সাদা পাথর ছুঁয়েছে মন, হৃদয় ছুঁয়েছে ভোলাগঞ্জ
দাও ফিরিয়ে সূচনার পথ, দাও ফিরিয়ে সাদা পাথর
এসইউ/এমএস