হাস্তর গানের অভিনয়রীতি
মানিকগঞ্জ অঞ্চলে বহুল প্রচলিত ‘বেহুলা লখিন্দার’র পালা ‘হাস্তর গান’ বা শাস্ত্র গান নামে পরিচিত। মনসা, চাঁদ সদাগর, বেহুলা এবং লখিন্দারের কাহিনি এর প্রধান উপজীব্য। এই একই কাহিনি বাংলাদেশের অন্য অঞ্চলে ‘মনসার পালা’, ‘মনসার গান’, ‘মনসার যাত্রা’, ‘ভাসান যাত্রা’, ‘বিষহরা’, ‘কান্দনী বিষহরী’ ইত্যাদি নামে প্রচলিত। বিভিন্ন অঞ্চলে এই কাহিনি উপস্থাপনার অভিনয়রীতিতেও রয়েছে ভিন্নতা। যেমন- মানিকগঞ্জ অঞ্চলে ‘বেহুলার পালা’ গায়েন দোহার, রাজশাহী অঞ্চলে ‘বেহুলার ভাসান’ গায়েন দোহার এবং গায়েন দোহার চরিত্রাভিনয়রীতি এবং দিনাজপুর অঞ্চলে ‘কান্দনী বিষহরী’ শুদ্ধ চরিত্রাভিনয়রীতিতে অভিনীত হয়।
হাস্তর গান বা শাস্ত্র গানের অভিনয়রীতি প্রচলিত মঞ্চনাটকের অভিনয়রীতি থেকে ভিন্নতর। কারণ হাস্তর গান যেহেতু ঐতিহ্যবাহী বাংলানাট্য হিসেবে অভিহিত; সেহেতু এর অভিনয় আধুনিক থিয়েটারের প্রয়োগ পদ্ধতির সূত্র মেনে চলে না। অর্থাৎ হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাট্যরীতির অভিনয় কৌশল এতে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান। ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাট্যের অভিনয়রীতির বৈশিষ্ট্য হিসেবে আছে- ‘প্রস্তাবনা, সমবেত যন্ত্রসংগীত, বন্দনা, নাচ, গান, কথা বাদ্য, হাস্য কৌতুক’।
হাস্তর গান পরিবেশনকারী হিসেবে সাত্তার গায়েন মানিকগঞ্জ অঞ্চলে খুবই পরিচিত ও সমাদৃত। তিনি তার দোহার ও বাদ্যযন্ত্রীদল নিয়ে মানিকগঞ্জ অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জে হাস্তর গান পরিবেশন করেন। তার অভিনয় দেখার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে হাস্তর গানের অভিনয়রীতি সংক্ষেপে উপস্থাপন করা আলোচ্য প্রবন্ধের মূল বিষয়।
হাস্তর গান পরিবেশনের জন্য প্রথমেই যে কোনো উন্মুক্ত স্থানে বা বাড়ির উঠানের চারদিকে চারটি বাঁশের খুঁটি গেড়ে উপরে সামিয়ানা টানিয়ে ভূঁইরেখায় শীতল পাটি এবং তার ওপর চাদর বিছিয়ে আসর তৈরি করা হয়। আসরের চারদিকে বাদ্যযন্ত্রীদল ও দোহার বসে এবং তাদের বেষ্টনপূর্বক বসে দর্শক-শ্রোতা। মাঝখানে থাকে ফাঁকা জায়গা। যাকে বলা হয় ভূমি সমতল বৃত্তমঞ্চ। এই মঞ্চের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে নৃত্য-গীত ও সংলাপ সহযোগে অভিনীত হয় হাস্তর গান। মূল পালা পরিবেশনের আগে বাদ্যযন্ত্রীদল বিভিন্ন বাদ্য বাজানোর টুং টাং আওয়াজ তোলে। সে আওয়াজ ক্রমে শিল্পসুরে পরিণত হতে থাকে। এ সময় দর্শক-শ্রোতাগণ মূল পালার অভিনয় দেখার জন্য আসরের চারপাশে আসন পেতে বসে। একপর্যায়ে দল প্রধান সাত্তার গায়েন পায়ে নুপুর, গায়ে পাঞ্জাবি এবং লাল শাড়ি ধুতির ন্যায় পরিধানপূর্বক দর্শক সারির মাঝখান দিয়ে আসরের কেন্দবিন্দুতে উপস্থিত হয়। গায়েন বা মূল অভিনেতা আসরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বাদ্যযন্ত্রের উচ্চতাল। এ যেন যুদ্ধজয়ী কোনো বীর যোদ্ধার আগমন বার্তা। অতঃপর গায়েনের হাত ইশারার সঙ্গে সঙ্গে থেমে যায় বাদ্যযন্ত্রের ক্ষীপ্রতাল। গায়েন তখন উপস্থিত সব ধর্ম-বর্ণের দর্শক-শ্রোতার উদ্দেশ্যে সালাম এবং কখনো কখনো সম্মানিত দর্শকদের হাতে পায়ে ধরে ভক্তি-শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপরই গায়েনের প্রস্তাবনা। পস্তাবনায় গায়েন সেদিনের পালা সম্পর্কে উপস্থিত দর্শকদের অবহিত করেন।
আরও পড়ুন: বাংলা সাহিত্যে বসন্ত বন্দনা
এরপর শুরু হয় গায়েন দোহারের ঐকতান বাদন। হারমোনিয়াম, খোল-করতাল, মন্দিরা আর বাঁশের বাঁশির সুরধ্বনি দর্শকের হৃদয়তারে তরঙ্গমালার শিহরণ জাগায়। উপস্থিত দর্শক-শ্রোতার মাঝে গায়েন দোহারের মনেও তখন ক্রিয়াশীল হতে থাকে পালা উপস্থাপনার আনন্দ। ঐকতান বাদনের বিচিত্র তাল-লয়ের সুরে সুরে দর্শক-শ্রোতার সমাগমে আসর যখন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে; তখনই শুরু হয় গায়েন দোহারের বন্দনা।
প্রথমে বন্দনারে করলাম আল্লাজীর চরণ
তারপর বন্দনারে করলাম রাসুলের চরণ নারে
আরে পশ্চিমে বন্দনারে করলাম মক্কা মরজিত ঘর।
আরে সেই ঘরেতে পরে নামাজ মমিন মুসলমান নারে।
আরে উত্তরে বন্দনা করি হেমেলা পরবত।
হারে সেই দেশের হাওয়াতে দোলে এ দেশের চাদুয়া নারে
আরে পূবেতে বন্দনা করি পূবের ভানুশ্বর।
একদিকে উদয় ভানু চৌদিকে হয় আলো নারে।।
ওরে দক্ষিণে বন্দনা করি ক্ষীরনদী সাগর।
আরে সেই সাগরে বাইছে ডিঙ্গা সাধু মহাজন নারে।।
ওরে স্বর্গেতে বন্দনা করি স্বর্গের দেবগণ।
ওরে তারপরে বন্দনা করি মাকাক্ষীর চরণ।।
ওরে চৌদিকে বন্দনারে করি মধ্যে করলাম স্থিতি।
আমার এ আসরে এসো লক্ষ্মীস্বরসতী নারে।।
ওরে এসো দিব ও নদের চাঁন ভক্তের পরান।
তোমার গাওনা তুমি গাইবা নাঙ্গা দোলনারে।
(সাত্তার গায়েন পরিবেশিত মৌখিকরীতির বেহুলা লখিন্দারের পালা থেকে সংগৃহীত)
এই বন্দনা গীত দল প্রধান সাত্তার গায়েন বাদ্যযন্ত্রীদলের বাদ্য বাজানোর তালে তালে পুরো মঞ্চে চক্রাকারে কথা, নাচ এবং বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি সহকারে ঘুরে ঘুরে অভিনয় করেন এবং তার সঙ্গে দোহার গানের ধুয়া ধরেন। বন্দনার পরই গায়েন প্রবেশ করেন মূল পালার কাহিনিতে। এই কাহিনি বর্ণনার সময় গায়েন দোহারের সঙ্গে ফোড়ন কাটেন ঠ্যাটা নামের একটি চরিত্র।
উল্লেখ্য, ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাট্যের অভিনয়ে সাধারণত এরূপ একটি ঠ্যাটা চরিত্রের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। গায়েনের সঙ্গে এই ঠ্যাটা চরিত্রটিই নাট্য কাহিনি এগিয়ে নিয়ে যায় এবং মাঝে মাঝে উপ-কাহিনির সংযোজন, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ ও হাস্যরসের সৃষ্টি করে দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন। এ প্রসঙ্গে নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ‘মধ্যযুগের বাঙলা নাট্য’ গ্রন্থে আছে, ‘এ পালার সমগ্র অভিনয়ে, স্থানে স্থানে প্রধান গায়েন বা বায়েন সচরাচর মূল গায়েন অভিনেতার কথার রশ্মি ধরে প্রশ্ন করেঃ কি কার্য করছে? যেমন- গায়েন বলছে, এক ঠাকুর দেব নগরে থাকতেন। দেব-দেবী নিয়ে খেলা করতেন। এই ছিল তার কাজ। তাই হঠাৎ করে দেব নগরের দিকে যাত্রা করে। রাস্তার ভিতর একটি গোবরের ঢিবিতে একটি পদ্মফুল দেখিবারে পায়। ঠাকুর বলে হায়রে হায়। এমন চমৎকার ফুল তো আমি জীবনে দেখি নাই। তাই ঠাকুর কি কার্য করছে?
ঠ্যাটা: কি কার্য করছে?
গায়েন: ফুলটি ছিড়ে নাকের কাছে শ্বাস টান দিছে অমনি নাকের ভিতর প্রবেশ কইরেছে। ঠাকুর নাকের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পাইরে অমনি হেইচ্ছি মারছে। হেইচ্ছি মারার সঙ্গে সঙ্গে একটি রূপসী কন্যা বের হয়ে বলছে, বাবা আপনি কোথায় চলছেন?
আরও পড়ুন: কেউ এখন আর চিঠি দেয় না
এভাবে কাহিনি বর্ণনার ফাঁকে ফাঁকে গায়েন অভিনয়ের অন্যতম কৌশলরূপে দর্শকদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন। তখন ঠ্যাটা নামের চরিত্রটি আরও উচ্চস্বরে অনুরূপ প্রশ্ন করেন গায়েনকে। ফলে গায়েন কাহিনির পরবর্তী অংশ বর্ণনা করার প্রাণ ফিরে পান। উপস্থিত দর্শকরাও এর শিল্পরস নতুনরূপে গ্রহণ করেন। অর্থাৎ গায়েন নৃত্য-গীত, সংলাপ ও বর্ণনার আশ্রয়ে হাস্তর গান বা শাস্ত্র গান নামে পরিচিত ‘বেহুলা লখিন্দারের পালা’র সম্পূর্ণ কাহিনি উপস্থাপন করেন। আবার গায়েন তার লাল শাড়ির আঁচলকে মুষ্টিবদ্ধ করে পদ্মফুল, মসলা বাটা, নববধূর ঘোমটা, নৌকার পাল ইত্যাদি একের পর এক দৃষ্টিনন্দন অভিনয়শৈলী প্রদর্শন করে চলেন লোক অভিনেতা সাত্তার গায়েন। এই পালা মৌখিকরীতির বিধায় এর ভাষা এক আসর থেকে অন্য আসরে সামান্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। কেননা গায়েন কখনো কখনো তাৎক্ষণিকভাবে সময় বা স্থান উপযোগী কিছু বাক্য বা শব্দ ব্যবহার করে। যেমন, এই পালায় পুকুর থেকে জল আনার প্রসঙ্গে গায়েন স্বাচ্ছন্দে বলে দিলেন ‘জাহাঙ্গীরনগরে অনেক পুকুর আছে সেখান থেকে জল নিয়ে যাও’ অথবা লখিন্দার মাকে ডেকে বলছে, ‘মা-আমাকে একটি পুশকুনী খনন কইরে দিতে হবে’। মা তখন বলছে, ‘দেখ বাবা লখিন্দার তোর বাবার কত শত শত পুশকুনী পইরা আছে জাহাঙ্গীরনগরের চাইর কোনা দিয়া (হা হা) সেইগুলির সেবা যত্ন কইরা খা’। আবার বর্ণনার ফাঁকে ফাঁকে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করার প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়। যেমন- জাম্প, ফলস, কেস, কমপ্লিট ইত্যাদি। এরূপ শব্দ ব্যবহারের মধ্যদিয়ে মৌখিকরীতিতে পরিবেশিত যে কোনো ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাট্যের ভাষা হয়ে ওঠে সমকালীন। এতে রসিক প্রবণ দর্শক-শ্রোতারা শিল্পরস গ্রহণ করেন প্রত্যক্ষভাবে। তবে এর কাহিনিতে ধৃত গানের ভাষা সব সময় পূর্ব নির্ধারিত থাকে। এ ক্ষেত্রে গায়েন আসরের মুড বা মেজাজ বুঝে ইচ্ছানুযায়ী নাট্য কাহিনির ভাষা বা সংলাপ ছোট-বড় করতে পারেন। কিন্তু লেখ্যরীতির প্রচলিত মঞ্চনাটকে সে সুযোগ সীমিত। তবে মৌখিকরীতির নাট্য দীর্ঘকাল উপস্থাপন বা অভিনীত না হলে তা বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’
সংগীত বাংলা নাটকের প্রাণস্বরূপ। ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাট্যের ক্ষেত্রে তা আরও বিস্তৃত। সাত্তার গায়েনের পরিবেশনা বেহুলা লখিন্দারের পালায় গানের সঙ্গে গদ্য পদ্য সংলাপ সংযোজনে এক মনোমুগ্ধকর শিল্পরসের সৃষ্টি হয়েছে। এ যে নিতান্তই বাঙালি জাতির স্বীয় শিল্প ফসল। ভাটিয়ালি, উজানি, বিচ্ছেদসহ বিভিন্ন ধরনের লোক সুরের প্রয়োগ ঘটেছে এ পালায়। আবার এ পালা উপস্থাপনকালে সাত্তার গায়েন যে নৃত্য পরিবেশন করেন, তা কোনো ধ্রুপদী নৃত্যের ধারায় নয় বা শাস্ত্রসম্মত নয়। কখনো বিষয়বস্তুর রস অনুযায়ী কখনোবা শুধু দর্শকদের আনন্দ দানের জন্য ক্ষেপটাসহ নানা ধরনের নাচ পরিবেশন করে সাত্তার গায়েনসহ অধিকাংশ লোক-অভিনেতা। তবে সাত্তার গায়েন কর্তৃক অভিনীত হাস্তর গান বা শাস্ত্র গানের অভিনয়রীতিতে প্রত্যক্ষ করা যায় গদ্য-পদ্য সংলাপ, বর্ণনা, নাচ-গান এবং বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সুর ও ছন্দ।
এই হাস্তর গানসহ বাঙালির ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও সংস্কৃতির নানা ধরনের নাট্য কাহিনি বিলুপ্তির প্রান্তসীমায় উপনীত হয়েছে। তবে বিচ্ছিন্নভাবে এখনো গ্রামবাংলার হাটে, মাঠে কিংবা নদীপথের পথিকজনের কণ্ঠে শোনা যায় জারি, সারি, ভাটিয়ালিসহ নানা লোকায়ত সংগীতের সুর। আজও পল্লি বাংলার গৃহস্থ বাড়ির আঙিনায় আলকাপ, গম্ভীরা, কুশান গান, মহুয়া, দেওয়ানা মদিনা, গাজির গান, হাস্তর গানসহ নানা ঐতিহ্যবাহী নাট্যের আসর বসে। এসব শিল্প ও সংস্কৃতির চর্চা এদেশ থেকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে চিরতরে বিলুপ্ত হবে সন্দেহ নেই। সুতরাং যত দ্রুত সম্ভব এসব শিল্পশৈলীর পদ্ধতিগত গবেষণা এবং সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। কারণ এ ধরনের শিল্পসম্ভার আধুনিক বাংলা নাটকের রচনারীতি এবং মঞ্চাভিনয়রীতির ক্ষেত্রে নতুন ধারা সৃষ্টি হতে পারে। যেহেতু হাস্তর গান বা শাস্ত্রগানের গঠনশৈলী ও উপস্থাপনা কৌশলে আছে কাহিনি, চরিত্র, সংলাপ এবং নৃত্য-গীতসহ বাংলা নাট্যাঙ্গিকের নানা উপাদান। অর্থাৎ বাঙালির ইতিহাস ও সংস্কৃতির রূপ ও রূপান্তরের যাত্রাপথে যেসব বিষয় ও আঙ্গিকনির্ভর বাংলা নাট্যরীতি ধারায় আধুনিক নাটক রচিত এবং থিয়েটার মঞ্চে অভিনীত হয়েছে; তন্মধ্যে হাস্তর গান বা শাস্ত্র গান অন্যতম। কারণ সেলিম আল দীনের ‘চাকা’ নাটকটি হাস্তর গানের আঙ্গিক বৈশিষ্ট্যের আধুনিক রূপায়ন। উল্লেখ্য, ‘চাকা’ নাটকটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘এন্টিয়ক থিয়েটার’ বাংলাদেশের ঢাকা থিয়েটার এবং দিল্লির ‘ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা’ (এনএসডি) সফল মঞ্চায়ন করেছে (সূত্র: সেলিম আল দীন, চাকা)। সুতরাং সহজেই বোঝা যায়, হাস্তর গানের আঙ্গিক ও অভিনয় কৌশল নতুন মাত্রায় বিশ্ব থিয়েটার মঞ্চে বিস্তৃতি লাভ করতে চলেছে। তবে এ কথাও সত্য, ‘কথানাট্য’ ‘চাকা’ বিশ্ব নাট্যাঙ্গনে বিস্তৃতি লাভ করলেও তার আদিরূপ নানা মিডিয়া সংস্কৃতি এবং নগর সভ্যতার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে এ দেশের অজস্র ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাট্যের ন্যায় হাস্তর গানও নিরাভরণ লোক-অভিনেতার কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: একাত্তরের ডায়েরী: কাব্য ও ভাষাশৈলীর সমতল ভূমি
অথচ এই নাট্য নমুনা একেবারই বাঙালির নিজস্ব শিল্পসম্পদ। এই শিল্পরীতির সঙ্গে বাঙালির আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে সুদীর্ঘকালের। এ দেশের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রমজীবী মানুষের প্রাণের শিল্পশৈলী হাস্তর গান বা শাস্ত্র গান আধুনিক সমাজে অবহেলিত। অথচ এই গানের বিভিন্ন পালা সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং এতদ্বিষয়ে গবেষণা হলে বাংলা নাটকের জাতীয় নাট্যাঙ্গিক আরও সমৃদ্ধ হতে পারে।
এসইউ/এমএস