জীবনানন্দ দাশের কবিতায় মনস্তত্ত্ব

আবু আফজাল সালেহ
আবু আফজাল সালেহ আবু আফজাল সালেহ , কবি ও প্রাবন্ধিক
প্রকাশিত: ০৪:৪৬ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০২২
ছবি: জীবনানন্দ দাশ রিসার্চ সেন্টারের পোস্টার থেকে নেওয়া

প্রথম পর্যায়ের কবিতার বই ‘ঝরা পালক’ (১৯২৭)। এখানে প্রকৃত জীবনানন্দকে পাওয়া যাবে না। এসব কবিতায় বিভিন্ন কবির প্রভাব লক্ষ্যণীয়। সত্যিকারের জীবনানন্দ হয়েছেন দ্বিতীয় পর্যায়ে ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ (১৯৩৬) প্রকাশের পর। প্রকৃতি, দেশজ উপাদানে সমৃদ্ধ এ পর্যায়ের কবিতা। এ ছাড়া ‘বনলতা সেন’ (১৯৮২) দ্বিতীয় পর্যায়ের কবিতার বই। ‘রূপসী বাংলা’ কবিতাগ্রন্থ কবির মৃত্যুর পর ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত হলেও দ্বিতীয় পর্যায়ের সময়কার লেখা বলে দ্বিতীয় পর্যায়ের কবিতা হিসেবে মূল্যায়ন করব। এরপর কবির জীবনে আবার বাঁক নিয়েছে। বিষয়বৈচিত্র্যে পরিবর্তন এসেছে। মৃত্যু, জীবন, হতাশা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, বিজ্ঞান-ভূগোল ইত্যাদি কবিতার অনুষঙ্গ হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ের কবিতাগুলোকে আমরা কবির জীবনের কবিতা হিসেবে চিহ্নিত করে আলোচনা করতে পারি। প্রকৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর সব পর্যায়ের কবিতায়। ‘মহাপৃথিবী’ (১৯৪৪), ‘সাতটি তারার তিমির’ (১৯৪৮) হচ্ছে এ পর্যায়ের। মৃত্যুর ঠিক আগে প্রকাশিত হয় ‘জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ (১৯৫৪)। তাঁর অগ্রন্থিত কবিতাবলি নিয়ে মৃত্যুর পর প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ বা সংকলন হচ্ছে: ‘সুদর্শনা’ (১৯৭৩), ‘আলো পৃথিবী’ (১৯৮১), ‘মনোবিহঙ্গম, হে প্রেম, তোমারে ভেবে ভেবে’ (১৯৯৮), ‘অপ্রকাশিত একান্ন’ (১৯৯৯) এবং ‘আবছায়া’(২০০৪)।

‘প্রকৃতি কাউকে ছেড়ে দেয় না’ জীবনানন্দ দাশ তা বিশ্বাস করতেন। ‘ঝরা পালক’ কাব্যে প্রকৃতির কথা রয়েছে। তাঁর কবিতায় একাধিক বাঁক নিলেও প্রকৃতি সব পর্যায়েই লক্ষ্যণীয়। এ কাব্যে কবিপ্রতিভার বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়নি। কবিতায় দর্শন, চলন কিংবা বলনে সময়ের অঙ্কে উৎসারিত হয়নি। ‘ঝরা পালক’ পর্যায়ের কবিতায় ‘পিরামিড’র মতো কবিতা রয়েছে। তবুও এ কাব্যের কবিতাগুলোতে ঝলক দেখা যাবে না। এ কবিতাগুলো পড়ে জীবনানন্দ দাশ যে ‘রবীন্দ্রোত্তর কালের শ্রেষ্ঠ কবি’ তা বোঝা যাবে না। এখানে ইতিহাস আছে, মৃত্যুচেতনার কথা রয়েছে। ‘ঝরা পালকে’ মোহিতলাল বা নজরুলের প্রভাব দেখা যায়। দেখা যায় বিশ্বসাহিত্যের বেশ কয়েকজনের প্রভাব। তবে জীবনানন্দ দাশ তাদের অনুকরণ করেননি। ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ থেকে পরবর্তী কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো তার জ্বলন্ত প্রমাণ।

‘ধূসর পাণ্ডুলিপ’ কাব্যের কবিতায় জীবনানন্দীয় ঝলক ও গন্ধ পাওয়া শুরু হয়। ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ কাব্যে এসে কবির সমস্ত কবিপ্রতিভার প্রকাশ ও বিকশিত হয়েছে। ‘বোধ’ কবিতার মতো বেশ কিছু কবিতা তাকে শ্রেষ্ঠ আসনে বসাতে শুরু করে। এখানকার বেদনাহত চেতনা, মীমাংসার অতীত ভাবনা, জীবন-দ্বন্দ্ব, হতাশা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য বিকশিত হতে শুরু করেছে—যা আধুনিক কবিতার বৈশিষ্ট্য আগলে রেখেছে। ভাষাকথা, দর্শন, যুক্তি ইত্যাদির প্রকাশ তাকে অনন্য করছে। এসবের প্রয়োগের জন্য ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে দেখতে পারি। জীবনানন্দ দাশ কবিতায় ভবিষ্যতে কী বলতে চান ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ তার একটা নান্দীপাঠ বলে মেনে নিতে পারি। এ পর্যায়ের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে ‘বনলতা সেন’। এ কাব্যের ‘বনলতা সেন’ কবিতাটি বাংলার শ্রেষ্ঠ কবিতার একটি। একটি কবিতাই তাকে কিংবদন্তিতুল্য করেছে। অন্য কবিতা বাংলার শ্রেষ্ঠ কবিতার মর্যাদা দিচ্ছে। ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থ জীবনানন্দের মত্যুর পর প্রকাশিত হলেও লেখা হয়েছিল তিরিশের দশকে। অখণ্ড বাংলার দৃশ্য চিরকাল বেঁচে থাকবে এ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলোর মধ্য দিয়ে। আমরা হারিয়ে যাওয়া জিনিসপত্র রাখি মিউজিয়ামে, প্রদর্শনের জন্য। তেমনই আমাদের আবহমানকালের বাংলা ও প্রকৃতি-প্রতিবেশ টিকে থাকবে এ গ্রন্থের কবিতাগুলো। মিউজিয়ামের কাজ করবে ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থ। দূর-অতীত, অতীত আর বর্তমানের মধ্যে সেতুবন্ধন হবে যুগ যুগ ধরে। বাংলার নদী, বাংলার জল, বাংলার হেমন্ত যে কেমন ছিল তার জন্য জীবনানন্দের এ কবিতাগুলো পড়তে হবে একসময়।

দ্বিতীয় পর্যায়ে রোমাঞ্চ ও প্রকৃতি মুখ্য উপাদান হয়েছে। কীটস, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলির মতো প্রকৃতির মধ্যে রোমাঞ্চ সৃষ্টি করেছেন। তবে ভাব ও ভাষা প্রকাশে নিজস্ব একটা উঠোন ও স্বর সৃষ্টি করেছেন। জীবনানন্দের প্রকৃতির মধ্যে নতুন ও বৈচিত্র্য দেখা যায়। যা তাঁর জন্য ও বাংলা সাহিত্যের জন্য নতুন এক যুগের সৃষ্টি করে। অখণ্ড বাংলা ও বাঙালি চিরকাল বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা দ্বিতীয় পর্যায়ের কবিতাগুলো। জীবনানন্দ ‘রূপসী বাংলা’ কবিতার মধ্য দিয়ে দুই বাংলাকে অখণ্ড করে সংরক্ষণ করে যাচ্ছেন। পূর্বে বাংলার রূপ কেমন ছিল, প্রকৃতি কেমন ছিল, প্রতিবেশ কেমন ছিল তা সাক্ষ্য দিয়ে যাবে। যে বাংলার উপস্থিতি নেই, কিন্তু আমাদের অধিকার আছে, আমাদের মন-মননে চেতনা আছে তা যুগ-যুগান্তরে অন্বয় করে দেবে জীবনানন্দ দাশের এ কবিতাগুলো। তাঁর আগে কোনো কবি এমন লেখেননি, বাঙালির হৃদয়ের কথা, আবেগের কথা, আকাশ-পাখি-নদীর কথা, বনলতা সেনদের কথা। দু’পার বাংলাকে অখণ্ড হিসেবেই উপস্থাপন করে যাবে ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যের সনেটগুলো। কিছুটা আবহ পাওয়া যাবে অন্য গ্রন্থের বিচ্ছিন্ন কিছু কবিতায়, কবিতার বিচ্ছিন্ন কিছু অংশে। কবি জীবনানন্দ দাশের দ্বিতীয় পর্যায়ের কবিতার বৈশিষ্ট্য, এ ভ্রমণপথ ব্যাঙের শীতনিদ্রা থেকে জেগে ওঠার মতো পাঠক ও বাঙালির হৃদয়ে সুর তোলে, আলোড়িত করে। ‘বনলতা সেন’ কবিতায় চিত্রকল্পের ব্যবহার অভাবনীয়। ‘পাখির নীড়’ শুধু পাখির বাসা নয়; শান্তির এক জায়গা, প্রশান্তির এক স্থান। যেখানে জীবনানন্দ খুঁজেছেন আশ্রয় ও প্রশ্রয়।

‘মহাপৃথিবী’ আর ‘সাতটি তারার তিমিরে’ প্রধানত মানবসমাজ সম্পর্কে সংকট ও হতাশার চিত্র দেখতে পাই। মহাপৃথিবীর ঘাস, সিন্ধুসারস, হাজার বছর শুধু খেলা করে ইত্যাদির মতো কবিতায় দৈনন্দিন জীবনঘনিষ্ঠ, পাশাপাশি কিছু কবিতা প্রকৃতিকেন্দ্রীক, ইতিহাস-ভূগোলকেন্দ্রীক। এরপর তিনি লিখলেন ‘সাতটি তারার তিমির’। ধ্রুব ও অনড় সপ্তর্ষিমণ্ডলকে স্মরণ করে লিখলেন আলো-আঁধারি বা ‘আলো আর আলো নয়, অন্ধকার’ ইত্যাদি চেতনার কবিতা। জীবনানন্দ দাশের ঘ্রাণশক্তি ছিল জন্তুর মতো, পর্যবেক্ষণের জন্য মাছির মতো অজস্র চোখ এবং সরীসৃপের মতো স্পর্শকাতর ত্বক। তার কবিতায় এসবের সত্যতা দেখতে পাই। শেষের দিকের কবিতায় চলে আসে উপমা-চিত্রকল্পে জরা, যেন আচ্ছন্ন করল তাঁর ইন্দ্রিয়, স্নায়ুরা দুর্বল হয়ে পড়ল। অথচ তিনিই বলতেন, কবিতা মানেই উপমা, কবিতা মানেই চিত্রকল্প। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর কবিতাগুলোয় জীবনানন্দের চেতনা বা মানসিকতায় বিরাট পরিবর্তন এসেছে। মৃত্যুচেতনা, হতাশা, দ্বৈততা, সংকটময় জীবনযাত্রা ইত্যাদি উঠে এসেছে তাঁর এ পর্যায়ের কবিতায়। ইতিহাস হচ্ছে পরম্পরা, বর্তমানের সঙ্গে অতীত ও ভবিষ্যতের সাঁকো। জীবনানন্দের কবিতায় ইতিহাস চেতনা প্রবল। শেষজীবন বা তৃতীয় পর্যায়ের কবিতাগুলোয় মৃত্যুচেতনা, ইতিহাস, ভূগোল, হতাশা, মেকিত্ব, ভালোবাসায় অবিশ্বাস, দ্বৈততা ইত্যাদি প্রকাশ পেয়েছে। ‘মহাপৃথিবী’ ও ‘সাতটি তারার তিমির’ কাব্যগন্থের কবিতাগুলো পড়লে এ বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যাবে। শেষ পর্যায়ের কবিতায় উপমার ব্যবহার অনেক কমে গেছে। ‘গাড়ল’ প্রভৃতি অশিষ্ট শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। কবিরা রেগে গেলে অশিষ্ট শব্দ বেরিয়ে আসে। বিভিন্ন অসঙ্গতি ও অনিয়মের মধ্যে থেকে রেগে গিয়ে বা বিতৃষ্ণায় সাহিত্যিক এমন অশিষ্ট (অন্যক্ষেত্রে অশিষ্ট না-ও হতে পারে) শব্দ বিদ্রোহের আবহ বিরাজ করে। জীবনানন্দের মধ্যে যুগপৎ বৈচিত্র্যময় ছবি এঁকেছেন। প্রকৃতির চিত্র সব পর্যায়ের কবিতায়, পাশাপাশি ‘বোধ’, ‘আদিম দেবতারা’ ইত্যাদি কবিতায় শিল্পজগৎ ও ইন্দ্রিয়জগতের সংগ্রামের ছবি এঁকেছেন। জীবনানন্দের কবিতায় প্রকৃতি ও চৈতন্যের এ দ্বন্দ্ব প্রতিফলিত হয়েছে।

অনেকে বলে থাকেন, জীবনানন্দ সময়কে এড়িয়ে চলেছেন। মানুষকে এড়িয়ে গেছেন। অর্থাৎ নির্জনতাকে বেছে নিয়েছেন। তাই অনেকেই তাকে নির্জনতার কবি বলে থাকেন। কিন্তু অন্তর্নিহিত দৃষ্টিতে দেখলে তাঁর প্রতি এ অভিযোগের তীর ছুঁড়তে ভাবতে হবে। অন্তর্নিহিত দৃষ্টিতে দেখলে দেখা যাবে, তাঁর কবিতাতেও বিদ্রোহ আছে, অসঙ্গতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আছে। আসলে স্লোগানধর্মী কোনো কবিতা না থাকায় অনেকেই এ অভিযোগ করতে পারেন। শেষ জীবনের কবিতাগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর লেখা। দেশভাগের পরেও তিনি এসব নিয়ে কিছু লেখেননি—এসব অভিযোগ তাই পুরোপুরি দেওয়া যাবে না। আসলে জীবনানন্দ নান্দনিকতার মধ্য থেকেই বিদ্রোহ করেছেন। টেস্ট খেলার মতো, আলতো-স্পর্শ করে। টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট খেলেননি। দিনশেষে কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটই ক্ল্যাসিক মর্যাদা পায়। সে হিসেবে জীবনানন্দের বিদ্রোহের স্থায়িত্বও বেশি হবে বলে মনে করি। ‘বোধ’র মতো কবিতা কিন্তু এ যুক্তির সপক্ষেই কথা বলবে। ফিনিক্স পাখির মতোই জেগে ওঠে বোধ, বিবেকের সত্তা।

জন কীটস, উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ, পার্সি বিসি শেলীকে বিশ্বসাহিত্যের প্রকৃতির কবি, রোমান্টিক কবি বলা হয়। উল্লিখিত কবিদের কবিতায় সবুজ তৃণভূমি, বনাঞ্চল, বিভিন্ন ফুল ও ফল, পাহাড়-পর্বত, নদীর বিভিন্ন রূপ, সাগর, গ্রামীণ দৃশ্য, বিভিন্ন প্রকার বায়ু ও রূপ, সূর্যাস্ত-সূর্যোদয়, সৈকত ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যায়। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় প্রকৃতির দেশজ উপাদান লক্ষ্য করা যায়। তাঁর কবিতায় কার্তিকের রূপ, জ্যোৎস্না, শালিক-চিলসহ দেশীয় পাখি, ধানসিঁড়িসহ বিভিন্ন নদী, লজ্জাবতী, দখিনা বাতাস ইত্যাদি। এসব দিয়ে তিনি কবিতায় শব্দবুনন, উপমা-উৎপ্রেক্ষা এবং নান্দনিক চিত্রকল্প নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। বিশ্বসাহিত্যের অন্য রোমান্টিক কবির মতো তিনিও প্রকৃতির মধ্যে রোমান্স সৃষ্টি করেছেন। প্রকৃতি ও প্রেমের মধ্যে সাঁকো বেঁধে রোমান্টিক-আবহ সৃষ্টি করে চমৎকার সাহিত্যিক পরিবেশ নির্মাণ করেছেন। কীটসের ‘অ্যা থিং অব বিউটি ইজ অ্যা জয় ফর এভার’ যেন জীবনানন্দের ‘পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন’। এটি শুধু নীড় নয়, এটা আস্থা ও শান্তির জায়গা—যার মাধ্যমে জীবনানন্দ আশ্রয় ও প্রশ্রয় পেতে চেয়েছেন।

জীবনানন্দের নিজস্ব দৃষ্টি ও সৃজনী শক্তি উল্লেখ করার মতো। পঞ্চেন্দ্রিয়ের পাশাপাশি আরও অনেক ইন্দ্রিয় কাজ করেছে। মনে হয়, এ ক্ষেত্রে তিনি অজস্র মাছির চোখের মতো পর্যবেক্ষণ করেছেন। সাধারণ দৃষ্টিকেও তিনি অসাধারণ সৃষ্টিতে রূপান্তর ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। কথা দিয়ে ছবি এঁকেছেন জীবনানন্দ দাশ। তাঁর ছবিগুলো দৃশ্যের পাশাপাশি গন্ধের এবং স্পর্শের। কীটস সৌন্দর্যের পূজারি; ওয়ার্ডসওয়ার্থ প্রকৃতির কবি। কীট্স ও ওয়ার্ডসওয়ার্থ সিমিলি ব্যবহারে পারদর্শী ছিলেন। এ দুজনের সম্মিলন আমাদের জীবনানন্দ দাশ। তাঁর কবিতায় অলংকারিক প্রয়োগ চমৎকার; চিত্রকল্প নির্মাণে মুন্সিয়ানা লক্ষ্যণীয়। উল্লিখিত দুজন কবির মতোই তাঁর ‘সেন্স ডেভেলপিং’ ক্ষমতা দারুণ। আরও রয়েছে পরাবাস্তবতার প্রয়োগ। সৌন্দর্যতত্ত্বও রয়েছে জীবনানন্দ দাশের কবিতায়। অপার মহিমায় প্রকৃতি ধরা দিয়েছে জীবনের কবিতায়। দেখা যায়, কবিতায় দ্বিমুখী বোধ সক্রিয়। দৃশ্য ও মনজগত—দ্বিমুখীবোধ জাগ্রত। সব মিলিয়ে চিত্রকল্প নির্মাণে অনন্য উচ্চতায় রয়েছেন বাংলার জীবনানন্দ দাশ। চিত্রকল্প নির্মাণে কবি জীবনানন্দ দাশের পঞ্চেন্দ্রিয় সতত ও সমভাবে সক্রিয়। ‘সেন্স অব সাইট, সেন্স ইফ টাচ, সেন্স অব স্মেল, সেন্স ইফ হিয়ারিং আই সেন্স অব টেস্ট’ সক্রিয় করেই চিত্রকল্প নির্মাণ করেছেন তিনি। তাঁর বোধশক্তি লক্ষ্যণীয়।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।