জীবনানন্দ দাশ স্মরণে চারটি কবিতা

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ , লেখক ও সাংবাদিক
প্রকাশিত: ১২:০৫ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০২২

জীবনানন্দের শরৎ

শাদা শাদা মেঘের ভিড়ে হারিয়ে যায় কুয়াশা ও কাশ,
শরীরের জ্বর আর জীবনের ঘোর মুছে দেয় আবেগ।
হাওয়ার পাখিরা জানে না কেবল ধান পাকার মাস;
একটি মাছরাঙা তাই ঠাঁয় বসে থাকে বাঁশের ডগায়,
অথচ শুকনো দীঘির জলে ব্যাঙাচি খোঁজে কার আশ্বাস?
কাশবনে দেখা যায় না আর কিশোরীর প্রসারিত হাত—
পাতিহাঁস ডেকে ডেকে ঘোলা জলে শরীর ভাসায় আজ,
আর জীবনানন্দের শরৎ এলেও নেই জলাঞ্জনার কাশ।

****

জীবনানন্দের ভাতঘুম

এখানে এখনো আমাদের জীবনানন্দ ঘুমায়;
তালশাঁসের মতো তার ঘোলা চোখ
খয়েরি শালিখের ডানায় ওড়ে স্বপ্নমায়ায়।
বুনো কাঁঠালের শাখায় ঝুলে থাকে স্বর্ণরাঙা কিশোরী—
একঝাঁক অবাধ্য পাতিহাঁস ঝাঁপিয়ে পড়ে মিছিলে,
শান্ত পুকুরের বুকে তোলে অন্তরঙ্গ ঢেউয়ের উল্লাস।
জলানন্দ জানে না—জলাঞ্জনা কখনো ছোঁয়নি মাটি,
অথচ সোনালি মাছেরা খাবিখায় তপ্ত দুপুরের রোদে—
দীঘির জলে ছায়া দেবে কি পেয়ারা-কামরাঙার সারি?
সেসব ভেবে ভেবে আমাদের শৈশব ও কৈশোর গেছে,
যৌবনের মহাসংগীতের মূলমন্ত্র এখন মাছরাঙার ঠোঁটে।

****

একটি জীবনানন্দের কবিতা

কতকাল যাইনি কো নদীটির পাড়ে
ছুঁইনি কো কাচের মতোন স্বচ্ছ জল—
নদীতীরে দেখিনি কো তোমার মুখচ্ছবি
কমলার কোয়ার মতো দুটি ঠোঁট
দেখিনি কো কামরাঙ্গা হাসি; বলিনি কখনো
জলাঞ্জনা, তোমারেই যেন ভালোবাসি।
এখন নদীর তীরে নোঙর করে বিদেশি বাতাস
ঘোলা জলে খেলা করে আহত পানকৌড়ি,
ভরদুপুরে হেলান দিয়ে পড়ে দিগন্তের মেঘ
বালিকারা আর ফেরে না কলসি কাখে—
কতকাল যাইনি, ছুঁইনি কো আর তারে।

****

জীবনানন্দের ঘোর

কালো মেঘের মতো ধেয়ে আসে শীতল জ্বর;
ঘোরগ্রস্ত তোতলা মুখ তখন গিলে খায় কর্ম।
কপালে হাত রেখে দূরের ঠিকানা খোঁজে কেউ,
বণিক জাহাজের নাবিক-মাস্তুল ফেলে আসে।
প্রিয়তমার বর্ণহীন মুখ যেন আচানক কেঁপে ওঠে,
বগলে রাখা থার্মোমিটারের বিপ-বিপ শব্দ শুনে।
তবু জীবনানন্দ হাত রাখে জলাঞ্জনার পিঠে,
দিগন্তের ধূসর আভা জেগে ওঠে তার দু’চোখে।

এসইউ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।