এম এ রহমানের ছয়টি কবিতা

সাহিত্য ডেস্ক
সাহিত্য ডেস্ক সাহিত্য ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৩৮ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

জীবনের উপন্যাস

জীবনের ভাঁজ খুলে হতাশার নিশিরাত
জলজ চোখের স্বপ্ন বেয়ে ঝরে নীল জল
ভবিতব্য যাপনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে হাঁটে ভয়
ফুসফুসে জমা হয় বেদনার নিকোটিন।

আর কতদিন? যন্ত্রণার প্রস্রবণ ব্যথা
সার্জিক্যাল চাকু ভয় ভাবনার দেহ ভাঁজে!
তবু বাঁচে ঝিঁঝি পোকা; তুমুল বৃষ্টির পরে
আত্মচিৎকারে কাঁপে গাঢ় অন্ধকার রাত।

জীবনের ঝরা পাতা নৈঃশব্দে বাজে মর্মরে
ঋতুচক্রে হেঁটে সময়েরা মাতে ভিন্ন গল্পে
আয়ুপথে হাহাকার জীবন যুদ্ধের রক্ত
জীবনের উপন্যাস থেমে থাকে না কখনো।

****

কোথায় দাঁড়াব আমি

কোথায় দাঁড়াব আমি? জীবনের খরস্রোতা নদী!
হৃদভূম ভেঙে যায় বেদনার নীলজল স্রোতে
জরায়ুর ঘর ভেঙে ছোট্ট ডিঙি নায়ে আমি একা
সময়ের ছেঁড়া পালে ভাসি গন্তব্যহীন গন্তব্যে।

পা বাড়ালেই শত পথ—তবু পথ খুঁজি পথে পথে
চোখ খুলে তাকালেই ঝলমল রঙিন পৃথিবী
তবু অন্ধত্বের চোখ আলোতে খুঁজে ফেরে আঁধার
জীবনের পথ খুঁজি ভুল মানুষের মানচিত্রে।

ক্ষুধার্ত চোখের ভাষা অনুবাদ করে নষ্টতত্ত্ব
মুঠো মুঠো সফলতা পঁচে যায় বদ্ধ করতলে
বিবেকের নগ্নদেহে চিত্র আঁকে নাগরিক চোখ
প্রশান্তির খোলাকাশে ভরে যায় নাগরিক ধোঁয়া।

কোথায় দাঁড়াব আমি? একটা খোলা আকাশ চাই
মুঠো মুঠো রোদ্দুরের আলোমাখা শুভ্রাকাশ
যেখানে সবুজ পৃথিবী-চোখ খুলে প্রকৃতির কোলাহলে
সোঁদা ঘ্রাণের মাটিরা শুষে নেয় নাগরিক নোনাজল।

****

একটি কবিতা বৃত্তান্ত

তোমার অধর বেয়ে ঝরে পড়া আমিময় সুর
একটি কবিতা হবে—এক সবুজ দ্বীপের মতো
চারিপাশে সমুদ্রের বয়ে যাওয়া কলকল স্রোতে
তোমার কবিতা পাঠে দোল খাবে শুভ্র কাশফুল।

এক জীবন সময়—সময়ের ভাঁজে ভাঁজে তুমি
হৃদয়ের লেপ্টে থাকা জীবন অধরে ঝরা মুক্তো
খুঁটে খুঁটে তুমি, আমি—এক জীবনে কবিতা হবো
আমাদের ব্যক্তিগত আকাশে আমরা পাখি হবো।

চাতকের অপেক্ষায় বাসা বাঁধে এক স্বপ্নপাখি
দাঁড়াতে শিখিনি বলে উপেক্ষার রক্তলাল চোখ
তুমি থেকে আমি, আমি থেকে তুমি দূরত্বের রেখা
মহাশূন্য বিস্তৃতিতে তুমি হাঁটো অন্য ছায়াপথে
মৃত নক্ষত্রের মতো কৃষ্ণগহ্বর অন্ধকারে বসে
সমস্ত আলোক শুষে হেঁটে যাই মহাকাল পথে।

****

পাস্তুরিত স্মৃতি

পাস্তুরিত দুধসাদা স্মৃতিগুলো শরতের মতো
শিশির ভেজানো জলে হৃদয়ের দুর্বা ভিজে যায়
তখন শুভ্রমেঘেরা ওড়ে—তারা মিটমিট জ্বলে
তখন রাত্রির কোলে ফুটন্ত শিউলি ফুল ঘ্রাণ
ভাবনার রন্ধ্রে রন্ধ্রে হৃদয় সমুদ্রে ঢেউ তোলে।

তুমি নেই রয়ে গেছে তোমার দুধসাদা স্মৃতিরা
তোমার না থাকা জুড়ে; স্মৃতিরা হাঁটতে থাকে, সেই—
আমাদের প্রণয়ের দোল খাওয়া কাশফুল দিনে
অপেক্ষা প্রহর গুনে তুমি চড়ো ছোট্ট ডিঙি নায়ে
আমি মাঝি দাঁড় টানি প্রেম সমুদ্রের অথৈ জলে।

তুমিময় রৌদ্রছায়া লুকোচুরি পেঁজা মেঘ ওড়ে
দিনান্তিক অন্ধকারে জাগতিক স্মৃতিদের ঢল
ভাবনারা হেঁটে যায় শিউলি ঝরা সকালবেলা
আর, ঘুমধরা নিশাচর চোখ ঢলে পড়ে ঘুমঘরে।

****

উপলব্ধি

সময়ের তীরে বিদ্ধ এক ক্লান্ত বিবশ শরীর
রক্তছাপে পায়ে পায়ে হেঁটে যায় অজানার পথে
দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে আসে ঝাপসা ঝাপসা চারিদিক
আলোরা হারিয়ে যায়—আতঙ্ক চোখের প্রতিবিম্বে।

পেছনে তাকাই, দেখি—একটি মাতৃভ্রূণ সকাল
কাঁচা রোদে স্নান করে ঘুড়ি ওড়ায় মুক্ত আকাশে
নাটাই গোটাতে থাকি বর্তমান সময়ের হাতে
কাঁচা রোদে তাপ বাড়ে বিদগ্ধ মাতৃভ্রূণ সকাল।

দুপুরের অগ্নিচোখে পুড়ে যায় সমুদয় স্বপ্ন
সময় হাঁটতে থাকে ছাঁই ওড়া বিকেলের দিকে
পরে তৃষ্ণার্ত গোধূলি ডুবে যায় অন্ধকার জলে
গোটানো সময় ঘুড়ি পড়ে থাকে বিবশ শরীরে।

সময় কি মহৌষধ? মিথ্যে কথা সান্ত্বনার বাণী
জীবনের পেট শুধু হজমের ক্ষমতা বাড়ায়
এই সত্যটুকু জেনে হেঁটে যাই গন্তব্যের দিকে
ভয়হীন, ক্ষুধাহীন—মৃত্যুর হাসিমাখা স্নিগ্ধ ভোরে।

****

জীবনের মানচিত্র

সভ্যতার বিষবাষ্পে বোধিবৃক্ষে পাতা ঝরে ক্রমে
অট্টালিকা শুয়ে থাকে, আকাশে নীল চাদর গায়ে
ঘুম নেই ক্ষুধা চোখে—তৃষ্ণা বাড়ায় জোছনা আলো
জীবন চুল্লীতে সিদ্ধ—শান্তি, হৃদহাড়ি ভরে দুঃখ-অন্নে।

তবুও ছুটছি—নিরন্তন, দিনান্তিক নিশ্চয়তা খুঁজে
পাহাড়ে, সমুদ্রে আর আকাশের তারায় তারায়
মায়াহীন, ছায়াহীন—ছাদহীন পৃথিবী পোড়ে রোদ্দুরে
পাঠশালায় খাতা ভরে—ভুল জীবনের অঙ্ক কষে।

শাণিত মস্তিষ্ক খোঁজে সরল অঙ্কের সমাধান
দেখতে সরল কিন্তু যোগ-বিয়োগ, গুণন-ভাগে
বিপরীত দুইটি চলকে চলে সব হিসেব-নিকেশ
দিনশেষে সব অঙ্ক কষে সমাধান আসে ‘শূন্য’।

যারা ঋতুচক্র বুঝে হেঁটে হেঁটে চলে তার পথে
জীবনের মানচিত্র তাকে দেখায় সঠিক পথ।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।