মায়াবতী: শেষ পর্ব
কথাসাহিত্যিক মোহিত কামালের মায়াবতী বাংলা সাহিত্যে দ্বিতীয় মনোবৈজ্ঞানিক উপন্যাস। সাহিত্যের শব্দবিন্যাসে তিনি ব্যবহার করেছেন মনস্তত্ত্ব, সমাজের আড়ালের চিত্র। মা প্রত্যক্ষ করেছেন, মেয়েরা নানাভাবে উৎপীড়ন ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়, সহজে মুগ্ধ হয়ে অবিশ্বাস্য পাতানো ফাঁদে পা দেয়। মায়ের একান্ত চাওয়া মেয়ে ক্যারিয়ার গড়ে তুলুক। বিধিনিষেধ আরোপ করেন মা। মেয়ে তখন মনে করে, মা স্বাধীনতা দিতে চায় না, বিশ্বাস করে না তাকে। মায়ের অবস্থানে মা ভাবছেন তিনি ঠিক। মেয়ের অবস্থানে মেয়ে ভাবছে, সে ঠিক। মায়ের ‘ঠিক’ এবং মেয়ের ‘ঠিক’র মাঝে সংঘাত বাধে। সংঘাত থেকে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়, ভুল করে বসে মেয়ে রিয়া। পালিয়ে যায় ঘর থেকে। এই ‘ভুল’ই হচ্ছে উপন্যাসের মূলধারা, মূলস্রোত। মায়াবতী পড়ে চিন্তনের বুননে ইতিবাচক গিঁট দেয়ার কৌশল শেখার আলোয় পাঠক-মন আলোকিত হবে। জানা যাবে টিনএজ সমস্যা মোকাবিলার কৌশল। জাগো নিউজের পাঠকের জন্য ধারাবাহিক প্রকাশিত হচ্ছে সাড়া জাগানো উপন্যাসটি—
যেবু কষ্ট দিতে চায় না রিয়াকে।
রিয়া সরাসরি ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে যেবুকে।
‘যেবু ভাবে, উত্তর না পেলে রিয়া নিজেকে ছোট ভাবতে পারে, কষ্ট পেতে পারে। তাই হাসিমুখে উত্তর দেয়, আমিও একজনকে ভালোবাসি। সেও বাসে। সমস্যা হচ্ছে ওদের বাসায়।’
রিয়া জানতে চায়, ওদের বাসায় সমস্যা মানে?
মানে ওর মা রাজি না। কোনোমতেই আমার মতো গায়ের রঙের মেয়েকে গৃহবধূ করতে চাইছেন না।
যেবু আরও বলে, ‘তিনি ব্যক্তিগতভাবে আমাকে অপছন্দ করেন বলে জানাননি। তাঁর ভয় বংশধরদের নিয়ে। কালো মেয়ে ঘরে এলে নাকি তাঁর নাতি-নাতনিও কালো হবে। কালো নাতনির মুখ সইতে পারবেন না তিনি।’
রিয়ার এক প্রশ্নের জবাবে যেবু আরও বলে, ‘যে-ছেলে মাকে ভালোবাসে, মার অবাধ্য হয় না, সে তো শ্রেষ্ঠ সন্তান। আমিও কখনো মা হলে চাইব আমার সন্তান আমাকেই বেশি ভালোবাসুক। মায়ের ভালোবাসার সঙ্গে তো অন্যকোনো ভালোবাসার তুলনা চলে না।’
এই হচ্ছে যেবু।
যেবুর প্রেমিক মায়ের কথা রেখেছে। মার কথা অনুযায়ী ফর্সা মেয়ে বিয়ে করেছে। দীর্ঘদিনের সম্পর্কের পরও যেবুকে বিয়ে করেনি। এ সামাজিক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে যেবুর ভালোবাসা জবাই হয়ে গেছে।
যেবু ভেঙে পড়েনি। দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত হয়নি। শক্ত থেকেছে। উন্নত শির উন্নতই রেখেছে।
রিয়ার তৈরি করে দেওয়া পথ বেয়ে রেজার সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। রেজাকে বিয়ে করে গোপনে চলে যায় জাপানে।
যেবু কেবল দায়িত্বশীল টিচার না, দায়িত্বশীল ফ্রেন্ড হিসেবেও তার ভূমিকা অসাধারণ। বান্ধবী পুনমের বিপদে পাশাপাশি থেকেছে, বান্ধবীর সমস্যাকে নিজের সমস্যা ভাবতে পেরেছে, সমাধানের সর্বোত্তম চেষ্টা চালিয়েছে। তার পরও রক্ষা হয়নি। পুনমের বয়ফ্রেন্ড ত্যাগ করে পুনমকে। ওই দুর্দিনে বান্ধবীকে সে শক্তি জুগিয়েছে, সাহস জুগিয়েছে।
আমরা দেখতে পাই যেবুর মনস্তাত্ত্বিক শক্তি অনেক বেশি দৃঢ়। রিয়েলিটি নির্ভর। বাস্তবতার মাপকাঠিতে সে মাপতে পেরেছে সব ধরনের ঘটনা, ব্যর্থতা। বাস্তবতার আলোকে যে কোনো সমস্যা মূল্যায়ন, পুনর্মূল্যায়ন করতে পারলে জীবনের অপ্রতিরোধ্য পতনের গতির মুখ উল্টো করে দেওয়া যায়। তলিয়ে যাওয়ার আগেই উঠে দাঁড়ানো যায়। সফলতার চূড়া স্পর্শ করা যায়। যেবু তাই করতে পেরেছে।
কেবল আবেগ দিয়ে নয়, বুদ্ধি দিয়ে সে সব ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছে। তাই জয় এসেছে তার গলায়। আবেগের ঢেউ সামাল দিয়ে প্রতিটা মানুষকে বুদ্ধি দিয়ে পরিস্থিতি শাসন করার শক্তি অর্জন করা দরকার। সুখের জন্য, শান্তির জন্য এই শক্তির বিকল্প নাই।
রিয়া-যেবু সংলাপে আমরা বউ-শাশুড়ি দ্বন্দ্বের একটা ছোট্ট নমুনা দেখতে পাই।
এই দ্বন্দ্বের ব্যবহারিক ক্ষেত্রটা দেখতে পাই মুনার নতুন সংসারে। মুনার শাশুড়ি ননাসের কঠোর ভূমিকা শ্বশুরবাড়ির প্রতিচিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরে।
শাশুড়ি, ননাস কিংবা ননদের প্রতিক্রিয়ার অতলে কী ধরনের মনস্তত্ত্ব কাজ করে?
নতুন বাড়িতে নতুন বউ স্বামীর ভালোবাসা পুরোপুরি দখল করে নেয়। শাশুড়ি নিজের প্রতি ছেলের ভালোবাসার ঘাটতি দেখে, ননদ দেখে ভাইটা এখন আর খোঁজখবর নেয় না। এই উপন্যাসে মুনার ননদ আরিয়াকে ইতিবাচক আচরণ করতে দেখা যায়। সব ক্ষেত্রে নেতিবাচক হবে এমন কোনো কথা নেই। আমরা দেখতে পাই আদৃতা, মুনার ননাসের গলার স্বরে ভিন্নরূপ।
তারা গোপনে ঈর্ষার অনলে পুড়তে থাকে। গোপনে ঘরের নতুন অতিথির শত্রু হতে থাকে। সূক্ষ্ম পথে পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এমনটা ঘটে পরিস্থিতির মূল্যায়নের অভাব কিংবা বিকৃত মূল্যায়নের কারণে। ফলে নতুন বউয়ের খুঁত ধরা শুরু করে। খুঁত ধরা শুরু হলে, শাশুড়ির কাছে ঘেঁষতে পারে না বউ, দূরত্ব বাড়ে। ফাটল তৈরি হয়। দিনে দিনে ফাটল বেড়ে যায়। ব্যবধান বাড়তেই থাকে। এভাবে পারিবারিক আবহ জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকে।
শাশুড়ি যদি মূল্যায়ন করতে পারে যে সন্তান সুখে আছে, বউকে ভালোবাসে, বউয়ের ভালোবাসা পাচ্ছে; এই মূল্যায়ন শাশুড়ি ও ননাসের মনের অবস্থা পাল্টে দিতে পারে। পুরো পরিবেশ এভাবে পাল্টানো যায়। অন্যথায় নতুন বউ মানসিক যাতনার শিকার হবে, মানসিকভাবে নির্যাতিত হতে থাকবে। এই নির্যাতন বউয়ের আবেগ জখম করবে। জখম পেলে বউও খারাপ আচরণ শুরু করবে। ওই খারাপ আচরণের খবর শাশুড়ি, ননদ কিংবা ননাসের মাধ্যমে পৌঁছে যাবে স্বামীর কানে।
স্বামীর মেজাজ বিগড়ে যাবে।
সে খারাপ আচরণ করবে বউয়ের সঙ্গে।
নতুন জীবনের শুরুতে এ ধরনের খারাপ আচরণ উভয়ের বিয়ের মৌলিক গিঁট ঢিলে করে দিতে পারে।
বউ নির্যাতিত হয়।
কেউ বিপ্লবী হয়। বিদ্রোহী হয়। কেউ চুপ করে সব সয়ে যায়।
প্রিয় পাঠক, আসুন আমরা মুনার কাছে আবার ফিরে যাই। মুনার বিয়ের বিষয়টা আলোচনা করি:
রিয়াকে রেজা বলছে, ‘অম্লান আগে বিয়ে করেছিল। ওর প্রাক্তন ওয়াইফ অম্লানের আগের ছবি পাঠিয়ে দিয়েছে।’
রেজা আরও বলছে, ‘শুনেছি অম্লান একটা মদ্যপ। অনেক স্ক্যান্ডাল আছে ওকে নিয়ে। নিউইয়র্কে ও লোগ্রেড জব করে। পিএইচডি’র খবর ভুয়া।’
‘রিয়ার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। একটু আগে লাশ কেটেছে সে। কেটেকুটে শিখেছে দেহবিজ্ঞান। মনে হচ্ছে রেজা মামা স্কালপেল দিয়ে কাটছে এখন মুনাকে। কেটেকুটে শিখছে মর্মন্তুদ সত্যের বিজ্ঞান।
রিয়ার চোখে পানি চলে আসে। বুকের মেধ্য রাগ জমা হয়। মনে হতে থাকে, এত দ্রুত কেন বিয়ে দিল মুনাকে? বিদেশে থাকে, এমন ছেলের ব্যাপারে যথাযথ খোঁজ কেন নেওয়া হলো না?
লাশ কাটা ঘর থেকে কেঁদে কেঁদে রেজাকে বলে, মামা মুনাকে আমরা খুন করে ফেলেছি। লাশ করে ফেলেছি। এ দায়িত্ব কার মামা?’
উপন্যাসে মুনাকে দেখেছি অসাধারণ প্রাণবন্ত এক তরুণী হিসেবে। মেধাবী, বুদ্ধিদীপ্ত মুনার চরিত্রের কোথাও ঘাটতি দেখিনি। সমাজের চোখে তার অপরাধ, সে রূপবতী। তার অপরাধ, সে মায়াবতী। তার অপরাধ, সে উচ্ছল। তার অপরাধ সে তেজস্বিনী। এ ধরনের মেয়েদের সমাজ নিরাপদ ভাবতে পারে না। ভাবে, যে কোনো সময় এদের বিপদ হতে পারে। পঙ্গপালের মতো এদের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসে। জ্বালাতন সইতে পারে না মা-বাবা। আত্মীয়স্বজন। সুতরাং ক্যারিয়ার গড়ার আগে এদের বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। বিয়ের পর তাদের পড়ালেখা আর এগোয় না। এটা সমাজের সাধারণ চিত্র। এই চিত্রে বলিদান হতে হয় মুনার মতো মেধাবী মেয়েদেরও।
মুনা জবাই হয়ে গেছে। সমাজের ধারালো ছুরি, তাকে জবাই করে দিয়েছে।
ছেলে সুদর্শন। পরিবার ভালো। বিদেশে থাকে। পিএইচডি করছে।
এসব ইস্যু সামনে এসে দাঁড়ালে আত্মীয়স্বজন বেপরোয়া হয়ে যায়। লোভী হয়ে ওঠে তাদের মন। লোভ সংবরণ করতে পারে না। তাড়াহুড়োর ব্যাপারেও তাদের আপত্তি থাকে না। লোভের অনলে ছারখার হয়ে যায় মুনাদের মতো মেয়ের জীবন।
এই উপন্যাসের সমাজচিত্র থেকে, মনোজগৎ থেকে কয়েকটা মোরাল আমাদের সামনে উঠে আসে:
মেধাবী মেয়েকে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ দিতে হবে।
যতই রূপবতী হোক, অসময়ে বিয়ে দেওয়া ঠিক না।
শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোচ্চ ডিগ্রি গ্রহণের যোগ্যতা থাকলে সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
বিয়ে দেওয়ার একান্তই প্রয়োজন হলে খোঁজখবর নিতে হবে। যতই লোভ সামনে আসুক না কেন তাড়াহুড়োর গন্ধ পেলেই সতর্ক হতে হবে। যেখানে তাড়াহুড়োর বিষয় থাকবে সেখানে সতর্ক হতে হবে মা-বাবা, আত্মীয়স্বজনকে।
বিদেশে থাকে, এমন পাত্রের হাতে কন্যা তুলে দেওয়ার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা নিতে হবে। এক শত ভাগ সঠিক ইনফরমেশন নিয়ে এগোতে হবে। যতই ঐশ্বর্য ও সমৃদ্ধির হাতছানি থাকুক না কেন, একাডেমিক নথিপত্র হাতে না পাওয়ার পর অগ্রসর হওয়া ঠিক না। জবের ব্যাপারে প্রয়োজনে নিজেরা গিয়ে দেখে আসতে হবে।
এই বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে পালন না করলে, সমাজে আরও বহু মেয়ের জীবন মুনার মতো বিপর্যয়ের পথে এগিয়ে যাবে।
এবার আমরা দেখব মুনার অবস্থা। এমনি পরিস্থিতি কীভাবে নিয়েছে মুনা ? দেখব, মুনার ভেতর কী মনস্তত্ত্ব কাজ করেছে।
রেজা, যেবু, রিয়া, বাঁধন, কুসুম এসেছে মুনার শ্বশুরবাড়িতে।
একটা সিকোয়েন্সে ওরা দেখে মুনাকে:
‘ধীর পায়ে এগিয়ে এলো মুনা। পরনে লাল শাড়ি। মাথায় শাড়ির আঁচল টানা। ড্রয়িংরুমে ঢুকে খুব ধীরে চোখ তুলে তাকায় মুনা, এ বাড়ির বউ।’
আর একটা সিকোয়েন্সে দেখা যায় সবাই কাঁদছে।
মুনা কাঁদছে না।
মুনার চোখে পানি নেই। পাথরের চোখ নিয়ে বসে আছে শূন্য সোফায়।
‘শাশুড়ি উঠে যাওয়ার পর তিন বান্ধবী একসঙ্গে ছুটে আসে মুনার কাছে। তিনজনই একসঙ্গে বলে, ভালো আছিস?
মুনার মুখে ফোটে অন্য রকম শান্তির হাসি। ঐশ্বরিক দ্যোতনায় মিশে আছে বিষাদের গোপন ঢেউ। মুনা বলে, ভালো আছি।
মুনা আবার চোখ তুলে সবাইকে দেখে। ম্লান মুখে নির্মল হাসি ফুটে ওঠে আবার। হাসি নিয়েই বলে, আমার নতুন অতিথি আসছে। মা হতে চলেছি।
তিন বান্ধবী একসঙ্গে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।
মুনা বলে তোরা কেন কেঁদেছিস, মনে হয় বুঝতে পেরেছি।
মামাকে উদ্দেশ্য করে বলে, তোমরা বোধ হয় জেনে গেছ, অম্লানের ফার্স্ট ম্যারেজের কথা।
কথার ফাঁকে রিয়া জানতে চেয়েছে, মেনে নিয়েছিস সব?
মুনা অবিচল কণ্ঠে বলে, আমি আমার সন্তানকে মেনে নিয়েছি। আমার সন্তানের তো কোনো দোষ নাই।
মামাকে উদ্দেশ্য করে বলে, বাবাকে বোলো আমি ভালো আছি। মাকে বোলো আমি সুখে আছি। বোলো, যে মায়া দিয়ে ওরা আমাকে বড় করেছে একই রকম মায়া দিয়ে আমি আমার সন্তানকে বড় করব।’
উপরিউক্ত সিকোয়েন্স ও ডায়ালগ থেকে মুনার অবস্থা বোঝার বাকি থাকে না।
মুনার ওপর দিয়ে ঘটে গেছে ঘোরতর অন্যায়। চরম মিথ্যাচারের চিতায় পুড়েছে সে। ঝলসে গোছ। ছাই হয়ে যায়নি। নিজের কষ্ট, হতাশা এবং রাগের আগুনে নিজেকে পোড়ায়নি। মনস্তত্ত্বের এই ধ্বংসাত্মক প্রতিক্রিয়াগুলো তাকে শক্তি জুগিয়েছে, চালিত করেছে ভিন্ন খাতে। সে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে যায়নি। অধিকার নিয়ে টিকে আছে। টিকে থকার পথে আছে। এই মনস্তাত্ত্বিক চ্যানেলে আমরা দেখতে পাই সাবলিমেশনের চিত্র। এই চ্যানেলে রাগ, হতাশা, সন্তানের জন্য ফুল হয়ে ফুটেছে। ইগো ডিফেন্সের এই মেকানিজমটা তুলনামূলকভাবে হেলদি মোড হিসেবে স্বীকৃত। এর আগে ভিন্ন প্রসঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
শুধু ইগোই তাকে প্রটেক্ট করেনি।
আমরা এখানে দেখতে পাই তেজদীপ্ত এক রমণীকে। বাস্তববাদী এক তরুণীকে। যে তরুণী জীবনের নির্মম ঘা অবজ্ঞা করেছে, মাতৃত্বে বিপুল বিস্ময়কর শক্তির বিস্ফোরণে উদ্ভাসিত হয়েছে। রিয়েলিটির কাছে হেরে যায়নি মুনা। আবেগের কাছে হেরেও মাতৃত্বের আলোয় হারানো জয় ছিনিয়ে এনেছে।
এই হলো মুনা। জীবনের চিতায় ঝলসে যাওয়া মুনা। এই মুনার কণ্ঠে তাই উচ্চারিত হয় তার অনাগত সন্তানের সুখচিত্র। কল্যাণচিত্র। শাশ্বত মাতৃত্ব।
মুনা বলে, আমি সন্তানের জন্য বাসযোগ্য ভূমি চাই। বেঁচে থাকার জন্য শান্তি নিশ্চিত করে যেতে চাই।
অনাগত সন্তান তার সামনে জ্বেলে রাখে বিজয়ের আলো। সাফল্যের আলো। পরাজয়ের অন্ধকার ঠেলে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে, সম্ভাবনার নতুন দ্বারে এসে দাঁড়ায় সে। সন্তানের জন্য ইতিবাচক চিন্তার চাষাবাদ করে আলোবতী হয়ে ওঠে মুনা। এ আলো অন্য আলো। মাতৃত্বের ঐশ্বরিক আলো।
এসইউ/