পাঠক বিশাল অনুপ্রেরণার জায়গা: সাদাত হোসাইন
সময়ের তুমুল জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইন। দুই বাংলার পাঠকের মন জয় করেছেন খুব কম সময়ের মধ্যে। এ পর্যন্ত তার বইয়ের সংখ্যা ২৪। লিখছেন গল্প, কবিতা, উপন্যাস, গান ও নাটক। নির্মাতা হিসেবেও সুনাম অর্জন করেছেন। আজ এ লেখকের জন্মদিন। সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন তার লেখালেখি ও সফলতা নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত—
প্রথম লেখা প্রকাশ হওয়ার অনুভূতি কেমন ছিল? প্রথম লেখাটি কোন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে?
সাদাত হোসাইন: প্রথম লেখা প্রকাশ হওয়ার অনুভূতি অন্যরকম। তবে আমার লেখা কিন্তু প্রথমেই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। হয়েছে অনেক পরে। তাও সম্প্রতি। তবে ছেলেবেলায় পত্রিকার খবর থেকে আমার নামে রয়েছে এমন বিভিন্ন বর্ণ কেটে পাশাপাশি সাজিয়ে প্রথম আমার নাম ও লেখা ছাপার অক্ষরে দেখি। ওটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
আলোকচিত্রী থেকে লেখক হয়ে ওঠার গল্প শুনতে চাই—
সাদাত হোসাইন: আমি আসলে গল্প বলতে চেয়েছি। গল্প বলার কিন্তু অনেক মাধ্যম আছে। আমি ফটোগ্রাফিকে আমার গল্প বলার মাধ্যম হিসেবে নিয়েছিলাম। তখন অনেকেই আমার ফটোগ্রাফি খুব পছন্দ করতেন। বলতেন, তোমার ছবি তো অনেক সুন্দর, তো তুমি তোমার তোলা ছবির সাথে ছোটো ছোটো গল্পও লিখতে পারো। মানে ওই ছবিরই গল্প। আমি যখন ছবির সাথে ছোট ছোট গল্প লিখতে শুরু করলাম; তখন দেখি অনেকেই তা গ্রহণ করছেন। আমার প্রথম বই ‘গল্পছবি’ মূলত ফটোগ্রাফির বই। যেটা ২০১২ সালে প্রকাশিত হয়। সেখান থেকেই সিরিয়াসলি আবার লেখালেখিতে আসা।
আপনি বিগত সাক্ষাৎকারগুলোয় বলেছেন ‘হতাশাই আমার অনুপ্রেরণা’। হতাশা বাদে আর কোনো অনুপ্রেরণা কি কাজ করেছে?
সাদাত হোসাইন: সেটা হলো পাঠক। এখন এসে মনে হয়, এই যে অসংখ্য পাঠক আগ্রহ নিয়ে আমার লেখা পড়ছেন। এটা বিশাল বড় অনুপ্রেরণার জায়গা।
আপনার মতে লেখা নাকি লেখার পরিমাণের ওপর জোর দেওয়া উচিত?
সাদাত হোসাইন: আমার কথা হচ্ছে, এসব কোনো কিছু ভাবার দরকার নেই। একজন লেখকের লিখতে ভালো লাগছে, সে লিখবে। তার নিজস্ব ভাবনা, ভালো লাগার ওপর লিখবে। লেখালেখির ক্ষেত্রে আসলে কোনো সূত্র চলবে না বা চলে না। অনেকেই বলেন যে, দীর্ঘ সময় ধরে কোনো লেখা লিখলে লেখাটি খুব ভালো হয়। বাট ইটস নট ট্রু। ট্রু মানে কি আমি তোমাকে বলি, পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক বিখ্যাত উপন্যাস আছে, যেমন ‘ডক্টর জেকেলি অ্যান্ড মিস্টার হাইড’—এ উপন্যাস মাত্র ৬ দিনে লেখা হয়েছে। তারপর ‘দ্য বয় ইন দি স্ট্রাইপড পাজামাস’ উপন্যাসটি পৃথিবীর গ্রেটেস্ট উপন্যাস। এটি লেখা হয়েছে মাত্র ৩ দিনে। এ রকম অনেক উপন্যাস আছে, যা খুব অল্প সময়ে লেখা হয়েছে। তো কোয়ান্টিটি, কোয়ালিটি, সময় এগুলো দেখে লেখালেখি চলে না। আমার কথা, তোমার যদি লিখতে ভালো লাগে লিখবে। কোনো সূত্র ফলো করা উচিত নয়।লেখালেখি কোনো থিউরি বা তত্ত্ব দিয়ে হয় না। এটা হচ্ছে প্রাক্টিসের ব্যাপার।
সাহিত্যিক না হলে ব্যক্তিজীবনে কী হতেন?
সাদাত হোসাইন: আমার খুব স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হওয়ার। আমি ভালো ক্রিকেট খেলতাম। তবে একটা ব্যাপার কি, আমাদের ছোট থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত স্বপ্নের নানা পরিবর্তন হয়। যেমন আমাদের বাড়ির পাশে ছোট খেয়া নৌকা ছিল। তো, আমি যখন নৌকায় উঠতে যেতাম; আমাকে উঠতে দিতো না। আমার অনেক মন খারাপ হতো। তখন আমি ভাবতাম, আমি যদি খেয়া নৌকার মাঝি হতে পারতাম। তাহলে খুবই ভালো হতো। কিন্তু বড় হতে হতে বিভিন্ন সময় সেই ইচ্ছে পরিবর্তিত হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় ইচ্ছা ছিল বোধহয় ক্রিকেটার হওয়াই।
ফেসবুকে সাহিত্যচর্চাকে কীভাবে দেখেন? ফেসবুক কি সাহিত্যের শত্রু?
সাদাত হোসাইন: মানুষ প্রথমদিকে কিন্তু ওই যে গুহা চিত্রের মাধম্যে মনের অনুভূতি প্রকাশ করেছে। তারপর দেওয়ালে লিখে। আমরা ছোটবেলায় শুনেছি মানুষ তালপাতায় লিখতো, মিশরে প্রথম প্যাপাইরাস কাগজ তৈরি হওয়ার পর মানুষ কাগজে লেখা শুরু করলো। তো পৃথিবীতে যত প্রযুক্তি হয়েছে, আমরা তত পরিবর্তন হয়েছি। এটা হচ্ছে বিবর্তনের একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আগে ফেসবুক ছিল না। তাই মানুষ ফেসবুকে লেখেনি। এখন ফেসবুক আছে, তাই মানুষ ফেসবুকে লিখছে। এটা বিবর্তনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটাকে গ্রহণ করতেই হবে। ফেসবুক একটি অসাধারণ ব্যাপার। পজিটিভ কাজের জন্য এটা দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে, যদি আমরা সেভাবে ব্যবহার করি।
আপনার উপন্যাসে ফিনিশিং থাকে না কেন?
সাদাত হোসাইন: ‘নির্বাসন’ এবং ‘স্মৃতিগন্ধা’র ব্যাপারে পাঠকের আক্ষেপ আছে। স্মৃতিগন্ধার সিক্যুয়াল ‘ইতি স্মৃতিগন্ধা’ করেছি। নির্বাসনের ব্যাপারটা আমি এক্সপ্লোর করি। আমি যদি সব লিখেই শেষ করে দেই, তাহলে পাঠকের ভাবনার জায়গা কোথায়? এখানে পাঠক শুধু আমার ভাবনাটাই ভাবতে পারছে। তাদের আলাদা করে ভাবার আর স্কোপ থাকছে না। কিন্তু পাঠকেরও তো একটা ভাবনার জগত আছে, তাদেরও তো কল্পনার জগত আছে। আর পাঠকের চিন্তার জন্য আমি উপন্যাসের এ জায়গাটুকু ছেড়ে দিয়েছি, এটা পাঠক চিন্তা করুক।
আপনার একটা ব্যর্থতার কথা শুনতে চাই—
সাদাত হোসাইন: আমি ব্যর্থতা বলতে যা বুঝি বা সফলতা সবই হচ্ছে আমার কাছে এক্সপেরিয়েন্স। অভিজ্ঞতা। ব্যর্থতা বা সফলতাকে সজ্ঞায়িত করা খুব ডিফিকাল্ট। আমার অভিজ্ঞতা বলে, কোনো একটা পার্টিকুলার ব্যর্থতা হয়ে উঠতে পারে পরবর্তী কোনো সময়ের সফলতার কারণ বা বীজ। আবার কোনো একটি সফলতা হয়ে উঠতে পারে পরবর্তী কোনো সময়ের ব্যর্থতার সূচনা বা বীজ।
এসইউ/এএসএম