মীর রবির পাঁচটি কবিতা
শূন্য
মেঘলা আকাশ—মেঘাচ্ছন্ন মন। নাগরিক বৃষ্টি ভিজিয়ে দেয় ফাঁকা রাস্তা। একলা হাঁটি। পাশ কেটে যায় স্বজনের শোক। নির্বাক চাহনী—কোভিড সন্ধ্যা অবাক তাকিয়ে থাকে।
হুডতোলা রিকশা—অদেখা তুমি, দূরত্ব মাপ বহুদূর। দূর ক্যানভাসে জলরং—হাহাকার করে ওঠে। এমন নিস্তব্ধতা—আগে কখনো দেখিনি। এমন শূন্যতা কখনো অনুভব করিনি। তোমার মতো অচেনা শহর—মৃত্যু ঘনিয়ে ডাকে বিপ্লবের দিন।
আজ নগরে তুমি নেই, নেই বিপ্লব। একা আমি, উদাস দুপুর—শূন্য চারপাশ, অবাক তাকিয়ে থাকি।
****
পরীবিবি
দাদা পুঁথিপাঠ শ্যাষ হইলে তাহাজ্জতের নামাজ পইড়তেন, ঘুমাই পইড়ত্যাম আমরা। লাল নীল পাখা নিয়া উইড়া আইসত—পরীর দিঘীর পরী, নিজেরে পরীবিবির সোয়ামী সোয়ামী লাগত। ভোর ব্যালা দাদাজান দাঁত মাজতে মাজতে ওজু কইরতে যাইত, মুয়াজ্জিনের আজানের লগে আমরা দৌড়াইতাম দিঘীর পাড়। আমগো লাইগা কোনো পরীই লালসালু রাইখা যাইত না—খালি খালি আফসোস বাইড়ত। সেইবার জব্বার ভাই পরীবুরে লয়া পালাই গেলে বুঝলাম—অমনে কইরা আঙ্গোও পরী ধরতে হইব।
****
চেরি ব্লসম উৎসব
কবিতা লিখতে না পেলে আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে হয়, মরে যেতে চাই খুব করে—তখন তোমার অপেক্ষায় থাকি—মিস গার্কেজ, ইনবক্সে পাঠিয়ে দাও সোনালি খাম, হলুদ অক্ষরে ঝরতে থাকে বসন্তকালীন সন্ধ্যা। ডেস্কটপে সঞ্চিত হয় চেরিফুলের পাপড়ি। মনোলগ খুলে পড়ি গোপন সুর, তুমি ডাকতে থাক জর্জিয়ান সুন্দরী-প্রহর গোনো ব্লসম উৎসবের।
****
বেয়ারিং গাড়ি
পিঠ ঠেলে বেয়ারিং গাড়ি তিন চাক্কায় দৌড়াও। দৌড়াও তুমি প্লেনের আগে—আমি একমাত্র যাত্রী। তোমার সিটে চাপলে কি অচেনা লাগে—দেখি দেখি হাওয়ার বেল্ট বাঁধি—বেয়ারিং গাড়ি দৌড়াও। দৌড়ে নামি বায়ু বেগে—ঝিকঝাক চলে ভিনগ্রহী—পিঠ চাপড়ে শিরিন পিছু নাও, আমি হই তোমার বগি।
ধুলোর দাগ মুছে—তিন সারি রেখা বড় নদী হয়, কাঁধে ঝুলে থাকে জলকুমারী। গাড়ি তুমি হর্ন দাও হর্ন দাও—কুমারের কামরায়, কোন মুখ উঁকি মারে—কচুপাতা আয়নায়।
পিপপিপ হর্ন বাজে, সাইড হয় হলদিয়া বন—ঘুরে ঘুরে সরে ভাঁটের বাড়ি। গাড়ি দৌড়াও—বসিয়াছে পাকা ড্রাইভার, ব্রেকফেলে ভয় নাই। পায়ে পায়ে পিলপিল বেয়ারিং, তলপেটে গতি সামলাও।
****
বাসস্টপ
টিকাটুলি টু আর্মিটোলা, বাস নাম্বার আট, লোকাল প্যাসেঞ্জার, লং জ্যাম—সামার সিজনে লবণ রোদ লেপ্টে আছে আটোসাটো সিটে। একটু এগোলেই বাসস্টপ, না—স্টপওয়ে বলে কিছু নেই। চুপচাপ সিটি মেয়রের যাত্রী ছাউনি—ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে বসে আছে।
বাস থেকে নামতেই ছিঁড়ে যাওয়া স্যান্ডেল, মানিব্যাগের নো মানি—স্টপ স্টপ করছে প্যারা লাইফ প্র্যাকটিসে। বাসস্টপ হাসছে—পেটের ভেতর ঢুকছে আস্ত শুয়োর, সেদিকেই ছুটছে সমস্ত শহর।
এসইউ/জেআইএম